পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>Wシ বঙ্গদর্শন । [ বৈশাখ । তীক্ষ কৌতুহলদৃষ্টি আসিয়া ক্ষতস্থানে পতিত হয়। বিনোদিনীর অন্তঃপ্রকৃতি { চুপড়ির ভিতরকার সজীব মাছের মত যতই আছড়াইতে লাগিল, ততই চারিদিকের সঙ্কীর্ণতার মধ্যে নিজেকে বারংবার আহত করিতে লাগিল। এখানে স্বাধীনভাবে পরিপূর্ণরূপে বেদনাভোগ করিবারও স্থান নাই । দ্বিতীয় দিনে চিঠি পাইবার সময় উত্তীর্ণ হহতেই বিনোদিনী ঘরে দরজা বন্ধ করিয়া লিখিতে বসিল :– “ঠাকুরপো, ভয় করিয়ো না, আমি তোমাকে প্রেমের চিঠি লিখিতে বসি নাই । তুমি আমার বিচারক, আমি তোমাকে প্রণাম করি । আমি যে পাপ করিয়াছি, তুমি তাহার কঠিন দণ্ড দিয়াছ ; তোমার আদেশমাত্র সে দণ্ড আমি মাথায় করিয়া বহন করিয়াছি। দুঃখ এই, দণ্ডটি যে কত কঠিন, তাহা তুমি দেপিতে পাইলে না। যদি দেখিতে, যদি জানিতে পাইতে, তাহ হইলে তোমার মনে যে দয়া হইত, তাহা ইহতেও বঞ্চিত হইলাম ! তোমাকে স্মরণ করিয়া, মনে মনে তোমার দুইখানি পায়ের কাছে মাথ রাখিয়, আমি ইহাও সহ করিব । কিন্তু প্রভু, জেলখানার কয়েদা কি আহারও পায় না ? সোঁথান আহার নহে,—যতটুকু ন হইলে তাহার প্রাণ বাচে না, সেটুকুও ত বরাদ্দ আছে ! তোমার দুইছত্র চিঠি আমার এই নিৰ্ব্বাসনের আহার—তাহা যদি না পাই, তবে কেবল আমার নিৰ্ব্বাসনদণ্ড নহে, প্রাণদণ্ড । অামাকে এত অধিক পরীক্ষা করিয়ো না দণ্ডদাতা ! আমার পাপ মনে, অহঙ্কারের সীমা ছিল না-কাহারে কাছে আমাকে এমন করিয়া মাখা নোয়া ইতে হইবে, ইহা আমি স্বপ্নেও জানিতাম না ! তোমার জয় হইয়াছে প্রভু ; আমি বিদ্রোহ করিব না । কিন্তু আমাকে দয়া কর—আমাকে বাচিতে দাও । এই অরণ্যবাসের সম্বল আমাকে অল্প একটু করিয়া দিয়ে ! তাহা হইলে তোমার শাসন হইতে আমাকে কেহই কিছুতেই টলাইতে পারিবে না। এইটুকু দুঃখের কথাই জানাইলাম । আর যে সব কথা মনে আছে,– বলিবার জষ্ঠ বুক ফাটিয়া যাইতেছে, তাহ তোমাকে জানাইব না প্রতিজ্ঞ করিয়াছি--সেই প্রতিজ্ঞা রক্ষা করিলাম । তোমার বিনোদ-বোঠা’ণ ।” বিনোদিনী চিঠি ডাকে দিল—পাড়ার লোকে ছিছি করিতে লাগিল । ঘরে দ্বার রুদ্ধ করিয়া থাকে, চিঠি লেখে, চিঠি পাইবার জন্য পেয়াদাকে গিয়া আক্রমণ করে—কলিকাতায় দুদিন থাকিলেই লজ্জাধৰ্ম্ম থোয়াইয়া কি এমনি মাটি হইতে হয় ! পরদিনে ও চিঠি পত্ৰ ল না। বিনোদিনা সমস্তদিন স্তব্ধ श्हेब्र রছিল, তাহার মুখ কঠিন হইয়া উঠিল । অস্তরে-বাহিরে চারিদিকের আঘাত ও অপমানের মস্থনে তাহার হৃদয়ের অন্ধকার-তলদেশ হইতে নিষ্ঠুর ংহারশক্তি মূৰ্ত্তিপরিগ্রহ করিয়া বাহির হইয়া আসিতে চাহিল। সেই নিদারুণ নিষ্ঠুরতার আবির্ভাব বিনোদিনী সভয়ে উপলব্ধি করিয়া ঘরে দ্বার দিল। " তাহার কাছে বিহারীর কিছুই ছিল না,