পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চম সংখ্যা । ] ভারতবর্ষের ইতিহাস । રૂરુંs সমস্তই স্বীকার করিয়াছে। এত গ্রহণ করিরাও আঁত্মরক্ষা করিতে হইলে এই পুঞ্জীভূক্ত সামগ্রীর মধ্যে নিজের ব্যবস্থা, নিজের শৃঙ্খলা স্থাপন করিতে হয়—পণ্ডযুদ্ধভূমিতে পণ্ডদলের মত ইহাদিগকে পরস্পরের উপর ছাড়িয়া দিলে চলে না। ইহাদিগকে বিহিত নিয়মে বিভক্ত-স্বতন্ত্র করিয়া একটি মূলভাবের দ্বারা বদ্ধ করিতে হয়। উপকরণ যেথানকার হউক, সেই শৃঙ্খলা ভারতবর্ষের, সেই মূলভাবটি ভারতবর্ষের। যুরোপ পরকে দূর করিয়া, উৎসাদন করিয়া সমাজকে নিরাপদ রাখিতে চায় ; আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া, নিয়ুজীলাও, কেপূকলনিতে তাহার পরিচয় আমরা আজ পর্য্যস্ত পাইতেছি । ইহার কারণ, তাহার নিজের সমাজের মধ্যে একটি মুবিহিত শৃঙ্খলার ভাব নাই—তাহার নিজেরই ভিন্ন সম্প্রদায়কে সে যথোচিত স্থান দিতে পারে নাই এবং যাহারা সমাজের অঙ্গ, তাহাদের অনেকেই সমাজের বোঝার মত হইয়াছে—এরূপ স্থলে বাহিরের লোককে সে সমাজ নিজের কোনখানে আশ্রয় দিবে ? আত্মীয়ই যেখানে উপদ্রব করিতে উদ্যত, সেখানে বাহিরের লোককে কেহ স্থান দিতে চায় না। যে সমাজে শৃঙ্খলা আছে, ঐক্যের বিধান আছে, সকলের স্বতন্ত্র স্থান । ও অধিকার আছে, সেই সমাজেই পরকে আপন করিয়া লওয়া সহজ । হয় পরকে কাটিয়া-মারিয়া-খেদাইয়া নিজের সমাজ ও সভ্যতাকে রক্ষা করা, নয় পরকে নিজের বিধানে সংষত করিয়া স্কবিহিত শৃঙ্খলার মধ্যে স্থান করিয়া দেওয়া, এই দুইরকম হইতে পারে। যুরোপ প্রথম প্রণালীটি অবলম্বন করিয়া সমস্ত বিশ্বের সঙ্গে বিরোধ উন্মুক্ত করিয়া রাখিয়াছে-ভারতবর্ষ দ্বিতীয় প্রণালী অবুলম্বন করিয়া সকলকেই ক্রমে ক্রমে ধীরে ধীরে আপনার করিয়া লইবার চেষ্টা করিয়াছে। যদি ধৰ্ম্মের প্রতি শ্রদ্ধা থাকে, যদি ধৰ্ম্মকেই মানবসভ্যতার চরম আদর্শ বলিয়া স্থির করা যায়, তবে ভারতবর্ষের প্রণালীকেই শ্ৰেষ্ঠত দিতে হইবে। পরকে অাপন করিতে প্রতিভার পয়েtজন। শেক্সপিয়র কোথা হইতে কি আত্মসাৎ করিয়াছেন, তাহ সন্ধান করিতে বসিলে নানা ভাণ্ডারেই তাহার প্রবেশাধিকণর আবিষ্কৃত হয়। কিন্তু আপনার করিবার শক্তি ছিল বলিয়াই তিনি এত লইতে পারিয়াছেন। অন্যের মধ্যে প্রবেশ করিবার শক্তি এবং অন্যকে সম্পূর্ণ আপনার করিয়া লইবার ইন্দ্রজাল, ইহাই প্রতিভার নিজস্ব । ভারতবর্ষের মধ্যে সেই প্রতিভা আমরা দেখিতে পাই । ভারতধর্ষ অসঙ্কোচে অন্যের মধ্যে প্রবেশ করিয়াছে এবং অনাস্বাসে অন্যের সামগ্ৰী নিজের করিয়া লইয়াছে। বিদেশী যাহাকে পৌত্তলিকতা বলে, ভারতবর্ষ তাহাকে দেখিয়া ভীত হয় নাই, মাস। কুঞ্চিত করে নাই। ভারতবর্ষ পুলিন্দ, শবর, ব্যাধ প্রভৃতিদের নিকট হইতেও বীভৎস সামগ্ৰী গ্রহণ করিয়া তাহার মধ্যে নিজের ভাব বিস্তার করিয়াছে—তাহার মধ্য দিয়াও নিজের আধ্যাত্মিকতাকে অভিব্যক্ত করিয়াছে। ভারতবর্ষ কিছুই ত্যাগ করে নাই এবং গ্রহণ করিয়া সকলই আপনার করিয়াছে। এই ঐক্যবিস্তার ও শৃঙ্খলাস্থাপন