পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম সংখ্যা । ] চোখের বালি । እ»ጫ ছবি না, একছত্ৰ চিঠি না, কিছুই না। - সে শূণ্ঠের মধ্যে কিছু-যেন-একট। খুজিয়া, বেড়াইতে লাগিল। সে ব্লিহারীর একটা কিছু চিত্বকে বক্ষে জড়াইয়া ধরিয়া শুস্কচক্ষে জল আনিতে চায় । অশ্রুজলে অন্তরের সমস্ত কঠিনতাকে গলাইয়া বিদ্রোহবন্ত্রিকে নিৰ্ব্বাপিত করিয়া বিহারীর কঠোর আদেশকে হৃদয়ের কোমলতম প্রেমের সিংহাসনে বসাইয়া রাখিতে চায়। কিন্তু অনাবৃষ্টির মধ্যtহ-আকাশের মত তাহার হৃদয় কেবল জলিতেই লাগিল, দিগদিগন্তে কোথাও সে একফোটা ও অশর লক্ষণ দেখিতে পাইল না । বিনোদিনী শুনিয়াছিল, একাগ্রমনে ধ্যান করিতে করিতে যাহাকে ডাকা যায়, সে না আসিয়া থাকিতে পারে না । তাই জোড়হাত করিয়া চোখ বুজিয়া সে বিহারীকে ডাকিতে লাগিল—“আমার জীবন শূন্ত, আমার হৃদয় শৃষ্ঠ, আমার চতুর্দিক শূন্ত,— এই শূন্ততার মাঝখানে একবার তুমি এস, এক মুহূৰ্ত্তের জন্য এস, তোমাকে আসিতেই হইবে, আমি কিছুতেই তোমাকে ছাড়িব না . এই কথা প্রাণপশবলে বলিতে বলিতে বিনোদিনী যেন যথার্থ বল পাইল । মনে হইল, যেন এই প্রেমের বল, এই আহবানের বল, বৃথা হইবে না। কেবল স্মরণমাত্র করিয়া, দুরাশার গোড়ায় হৃদয়ের রক্ত সিঞ্চন করিয়া হৃদয় কেবল অবসন্ন হইয় পড়ে। কিন্তু এইরূপ একমনে ধান করিয়া প্রাণপণ শক্তিতে কামনা করিতে থাকিলে নিজেকে যেন সহায়বান মনে হয়। মনে হয়, যেন প্রবল ইচ্ছা জগতের আর সমস্ত ছাড়িয়া কে বল,বাঞ্ছিতকে আকর্ষণ করিতে থাকাতে প্রতিমুহূর্তে ক্ৰমে-ক্রমে ধীরে-ধীরে সে নিকটবর্তী হইতেছে । বিহারীর ধ্যানে যখন সন্ধ্যার দীপশূন্ত অন্ধকার-ঘর নিবিড়ভারে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিয়াছে—যখন সমাজ, সংসার, গ্রাম, পল্লী, সমস্ত বিশ্বভুবন প্রলয়ে বিলীন হইয়া গিয়াছে —তখন বিনোদিনী হঠাৎ দ্বারে আঘাত শুনিয়া ভূমিতল হইতে দ্রুতবেগে দাড়াইয়া উঠিল, অসংশয় বিশ্বাসে ছুটিয়া দ্বার খুলিয়া কহিল, "প্রভু, আসিয়াছ ?”—তাহার দৃঢ় প্রত্যয় হইল, এই মুহূর্তে জগতের তার কেহই তাহার দ্বারে আসিতে পারে না ! মহেন্দ্র কহিল, “আসিয়াছি বিনোদ !” বিনোদিনী অপরিসীম বিরাগ ও প্রচণ্ড ধিক্কারের সহিত বলিয়া উঠিল, “যাও, যাও, যাও এখান হইতে ! এখনি ষাও !” মহেন্দ্র অকস্মাৎ স্তম্ভিত হইয়া গেল ! “হালা বিন্দী, তোর দিদিশাগুড়ি যদি কাল -”এই কথা বলিতে বলতে কোন প্রৌঢ় প্রতিবেশিনী, বিনোদিনীর দ্বারের কাছে আসিয়া “ওমা” বলিয়। মস্ত ঘোমটা টানিয়! সবেগে পলায়ন করিল। (80 ) ● পাড়ায় ভারি একটা গোলমাল পড়িয়া গেল। পল্লীবৃদ্ধের চণ্ডীমণ্ডপে বসিয়া কহিল “এ কখনই সহ করা যাইতে পারে না। কলিকাতায় কি ঘটিতেছিল, তাহ কাণে না তুলিলেও চলিত, কিন্তু এমন সাহস যে, মহেন্দ্রকে চিঠির উপর চিঠি লিথিয়া পাড়ায় আনিয়া এমন প্রকাগু নিলাজত ! এরূপ ভ্রষ্টাকে গ্রামে রাখিলে ত চলিবে না !” ।