পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৮ বঙ্গদর্শন । [ বৈশাখ । বিনোদিনী আজ নিশ্চয় আশা করিয়াছিল, বিহারীর পত্রের উত্তর পাইবে, কিন্তু উত্তর আসিল না । বিনোদিনী মনে মনে বলিতে লাগিল—“আমার উপরে বিহারীর কিসের অধিকার ? আমি কেন তাহার হুকুম শুনিতে গেলাম ? আমি কেন তাহাকে বুঝিতে দিলাম যে, সে আমার প্রতি যেমন বিধান করবে, আমি তাহাই নতশিরে গ্রহণ করিব ? তাহার ভালবাসার আশাকে বঁাচাইবার জন্ত যেটুকু দরকার, আমার সঙ্গে কেবলমাত্র তাহার সেইটুকু সম্পর্ক ? আমার নিজের কোন প্রাপ্য নাই, দাবী নাই, সামান্ত দুইছত্র চিঠিও না আমি এত তুচ্ছ, এত ঘৃণার সামগ্ৰী ?”—তখন ঈর্ষার বিসে বিনোদিনীর সমস্ত বক পূর্ণ হইয়া উঠিল -সে কহিল, "আর কাহারো জন্ত এত দুঃখ সহ করা যাইতে পারে, কিন্তু তাই বলিয়া আশার জন্ত নয়! এই দৈন্ত, এই বনবাস, এই লোক নিন্দা, এই অবজ্ঞা,এই জীবনের সকল প্রকার অপরিতৃপ্তি, কেবল আশীরই জন্ত আমাকে বহন করিতে হইবে—এত বড় ফাকি । আমি মাথায় করিয়া কেন লইলাম ? কেন আমার সৰ্ব্বনাশের ব্রত সম্পূর্ণ করিয়া আসিলাম না ? নিৰ্ব্বোধ, আমি নিৰ্ব্বোপ ! আমি কেন বিহারীকে ভালবাসিলাম ?” বিনোদিনী যখন কাঠের মূৰ্ত্তির মত ঘরের মধ্যে কঠিন হইয়া বসিয়া ছিল—এমনসময় তাহার দিদিশাশুড়ি জামাইবাড়ী হইতে ফিরিয়া আসিয়াই তাহকে কহিল, “পোড়ারমুণী, কি সব কথা শুনিতেছি ?” বিনোদিনী কহিল, “যাহা শুনিতেছ, সবই সত্য কথা ।” দিদিশাগুড়ি। তবে এ কলঙ্ক পাড়ায় বহিয়া আনিবার কি দরকার ছিল—এখানে কেন আসিলি ? রুদ্ধক্ষোভে বিনোদিনী চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। দিদিশাশুড়ি কহিল, “বাছা, এখানে তোমার থাকা হইবে না, তাহ বলিতেছি । পোড়া অদষ্টে আমার সবাই মরিয়া-ঝরিয়া গেল, ইহাও সহ্য করিয়া বাচিয়া আছি, কিন্তু তাই বলিয়া এ সকল ব্যাপার আমি সহিতে পারিব ন| ছিছি, আমাদের মাথা ষ্ট্রেট করিলে ! তুমি এখনই যাও !” বিনোদিনী কহিল, “আমি এখনই যাইব ।” এমন সময় মহেন্দ্র, স্নান নাই, আহার নাই, উস্কগুস্ক চল করিয়া হঠাৎ আসিয়া উপ স্থিত হইল । সমস্ত রাত্রির অনিদ্রায় তাহার চক্ষু রক্তবর্ণ, মুখ শুষ্ক। অন্ধকার থাকিতেই ভোরে আসিয়া সে বিনোদিনীকে লইয়া যাইবার জন্য দ্বিতীয়বার চেষ্টা করিবে, এইরূপ তাহার সঙ্কল্প ছিল। কিন্তু পূৰ্ব্বদিনে বিনোদিনীর অভূতপূৰ্ব্ব ঘৃণার অভিঘাত পাহয় তাহার মনে নানা প্রকার দ্বিধার উদয় হইতে লাগিল। ক্রম যখন ६वल इहेब्र গেল, রেলগাড়ির সময় আসল্প হইয়া আসিল, তখন ষ্টেশনের যাত্রিশাল হইতে বাহির হইয়া, মন হইতে সৰ্ব্বপ্রকার বিচার বিতর্ক সবলে দূর করিয়া, গাড়ি চড়িয়া মহেন্দ্র একেবারে বিনোদিনীর দ্বারে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে। লজ্জাত্যাগ করিয়া প্রকাশ্যে দুঃসাহসের কাজ করিতে প্রবৃত্ত হইলে যে একটা স্পৰ্দ্ধাপূর্ণ বল জন্মে—সেই বলের আবেগে মহেন্দ্র একটা উদভ্ৰাস্ত আনন্দ বোধ