পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 সরস্বতীর কাব্যকমলবনে বাস করেন, র্তাহার তটবৰ্ত্তী বেত্ৰবনবাসীদিগকে উদ্বেজিত না করুন, এই আমার প্রার্থনা । . সাহিত্যের যথার্থ বাজে রচনাগুলি কোনো বিশেষ কথা বলিবার স্পদ্ধ রাখে না । সংস্কৃতসাহিত্যে মেঘদূত তাহার উজ্জল দৃষ্টান্ত। তাহ ধৰ্ম্মের কথা নহে, কৰ্ম্মের কথা নহে, পুরাণ নহে, ইতিহাস নহে। যে অবস্থায় মামুষের চেতন-অচেতনের বিচার লোপ পাইরা যায়, ইহ। সেই অবস্থার প্রলাপ । ইহাকে যদি কেহ বদরীফল মনে করিয়া পেট ভরাইবার আশ্বাসে তুলিয়া লন, তবে তখনি ফেলিয়া দিবেন । ইহাতে প্রয়োজনের কথা কিছুই নাই। ইহা নিটোল মুক্ত, এবং ইহাতে বিরহীর বিদীর্ণ হৃদয়ের রক্তচিন্তু কিছু লাগিয়াছে, কিন্তু সেটুকু মুছিয়া ফেলিলেও ইহার মূল্য কমিবে না। ইহার কোন উদ্দেশু নাই বলিয়াই এ কাব্যথানি এমন স্বচ্ছ, এমন উজ্জল । ইহা একটি মায়াতরী ;–কল্পনার হাওয়ায় ইহার সজল মেঘনিৰ্ম্মিত পাল ফুলিয়া উঠিয়াছে এবং একটি বিরহী হৃদয়ের কামনা বহন করিয়া ইহা অবারিতবেগে একটি অপরূপ নিরুদ্দেশের অভিমুখে ছুটিয়া চলিয়াছে— আর-কেনি বোঝা ইহাতে নাই । টেনিস যে idle tears,যে অকারণ অশ্রবিন্দুর কথা বলিয়াছেন, মেঘদূত সেই ৰাজে চোখের জলের কাব্য । এই কথা শুনিয়া অনেকে আমার সঙ্গে তর্ক করিতে উদ্যত হইবেন। অনেকে বলিবেন, যক্ষ যখন প্রভুশাপে তাছার প্রেয়লীর নিকট হইতে বিচ্ছিন্ন হইস্বাছে, তখন মেঘদূতের অশ্রধারাকে অকারণ বঙ্গদর্শন । ২য় বর্ষ, আশ্বিন। বলিতেছ কেন ? আমি তর্ক, করিতে চাই ন—এ সকল কথার আমি কোন উত্তর দিব না । আমি জোর করিয়া বলিতে পারি, ঐ যে যক্ষের নির্বাসন প্রভৃতি ব্যাপার, ও সমস্তই কালিদাসের বানানো—কাব্যরচনার ও একটা উপলক্ষ্যমাত্র। ঐ ভারা বাধিয়া তিনি এই ইমারৎ গড়িয়াছেন--- এখন আমরা ঐ ভারাটা ফেলিয়া দিব । আসল কথা, “রম্যাণি বীক্ষ্য মধুরাংশ্চ নিশম্য শব্দান” মন অকারণ বিরহে বিকল হইয়া উঠে, কালিদাস অন্তক্ৰ তাহা স্বীকার করিয়াছেন ;– আষাঢ়ের প্রথমদিনে অকস্মাৎ ঘনমেঘের ঘটা দেখিলে আমাদের মনে এক সৃষ্টিছাড়া বিরহ জাগিয় উঠে, মেঘদূত সেই অকারণ বিরহের অমূলক প্রলীপ । তা যদি ন হইত, সেই মিলনলোকের যথার্থই যদি কোন উদ্দেশ থাকিত, তবে বিরহী মেঘকে ছাড়িয়া বিদ্যুৎকে দূত পাঠাইত। তবে পুর্কমেঘ এত রহিয়াবসিয়া, এত ঘুরিয়া-ফিরিয়া, এত যুর্থীবন প্রফুল্ল করিয়া, এত জনপদবধুর উৎক্ষিপ্ত দৃষ্টির কৃষ্ণ কটাক্ষপাত লুটিয়া লইয়া চলিত না। কবি কাব্যরচনা করিবার সময় একটু ছল করেন—সেই ছলন্টুকুর পর্দার আড়াল হইতে পাঠক তাহার আসল কথাটিকে অস্ত:পুরে দেখিয়া লইবেন, ইহাই তাহার উদ্দেশু। সেইজন্তই আমি যক্ষের গল্পটাকে ঠেলিয়৷ সরাইলাম—নিশ্চয় জানি,স্বৰ্গস্থ কবি র্তাহার অধম ভক্তকে সকৌতুক স্নেহের সহিত ক্ষম করিবেন। কাব্য পড়িবার সময়েও যদি হিসাবের খাত থোল রাখিতেই হয়, যদি কি লাভ করিলাম, হাতে হাতে তাহার নিকাশচুকাইয়া