পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষষ্ঠ সংখ্যা । ] ইহার অর্থ এই যে, গেটের মতে শকুন্তলাকাব্যখনি অতি উপাদেয়। কিন্তু তাহ নহে। গেটের এই শ্লোকটি আনন্দের অত্যুক্তি নহে, ইহা রসজ্ঞের বিচার। ইহার মধ্যে বিশেষত্ব আছে । কবি বিশেষভাবেই বলিয়াছেন, শকুন্তলার মধ্যে একটি গভীর পরিণতির ভাব আছে, সে পরিণতি ফুল হইতে ফলে পরিণতি, মৰ্ত্ত্য হইতে স্বর্গে পরিণতি, স্বভাব হইতে ধৰ্ম্মে পরিণতি । মেঘদূতে যেমন পূৰ্ব্বমেঘ ও উত্তরমেঘ আছে—পূৰ্ব্বমেঘে পৃথিবীর বিচিত্র সৌন্দয্য পৰ্য্যটন করিয়া উত্তরমেঘে অলকাপুরীর নিত্যসৌন্দর্য্যে উত্তীণ হইতে হয়, তেমনি শকুন্তলায় একটি পূৰ্ব্বমিলন ও উত্তরমিলন আছে । প্রথম-অঙ্কবত্তী সেই মর্ত্যের চঞ্চলসৌন্দৰ্য্যময় বিচিত্ৰ পূৰ্ব্বমিলন হইতে, স্বর্গতপোবনে শাশ্বত-আনন্দময় উত্তরমিলনে যাত্রাই অভিজ্ঞানশকুন্তল নাটক। ইহা কেবল বিশেষ কোন ভাবের অবতারণ; নহে, বিশেষ কোন চরিত্রের বিকাশ নহে, ইহা সমস্ত কাব্যকে এক লোক হইতে অন্ত লোকে লইয়া যাওয়া—প্রেমকে স্বভাবসৌন্দর্য্যের দেশ হইতে মঙ্গলসৌন্দয্যের অক্ষয় স্বৰ্গধামে উত্তীর্ণ করিয়৷ দেওয়া । এই প্রসঙ্গটি আমরা অন্ত একটি প্রবন্ধে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করিয়াছি, সুতরাং এখানে তাহার পুনরুক্তি করিতে ইচ্ছা করি না । স্বর্গ ও মর্ত্যের এই যে মিলন, কালিদাস ইহা অত্যস্ত সহজেই করিয়াছেন । ফুলকে তিনি এমনি স্বভাবত ফলে ফুলাইয়াছেন, মর্তের সীমাকে তিনি এমনি করিয়া স্বর্গের শকুন্তলা ।

ፃፃ

সহিত মিশাইয়া দিয়াছেন যে, মাঝে কোন ব্যবধান কাহারো চোখে পড়ে না। প্রথম অঙ্কে শকুন্তলার পতনের মধ্যে কবি মর্ত্যের মাটি কিছুই গোপন রাখেন নাই ; তাহার মধ্যে বাসনার প্রভাব যে কতদূর বিদ্যমান, তাহা দুষ্যস্ত-শকুন্তল উভয়ের ব্যবহারেই কবি সুস্পষ্ট দেখাইয়াছেন । যৌবনমন্ততায় হাবভাবলীলাচাঞ্চল্য, পরম লজ্জার সহিত প্রবল আত্মপ্রকাশের সংগ্রাম, সমস্তই কবি ব্যক্ত করিয়াছেন। ইহা শকুন্তলার সরলতার নিদশন। অনুকুল অবসরে এই ভাবাবেশের আকস্মিক আবির্ভাবের জন্ত সে পূৰ্ব্ব হইতে প্রস্তুত ছিল না । সে আপনাকে দমন করিবার—গোপন করিবার উপায় করিয়া রাখে নাই । যে হরিণী ব্যাধকে চেনে ন, তাহার কি বিদ্ধ হইতে বিলম্ব লাগে ? শকুন্তলা পঞ্চশরকে ঠিকমত চিনিত না—এই জন্তই তাহার মৰ্ম্মস্থান অরক্ষিত ছিল। সে না কন্দৰ্পকে, ন দুষ্যন্তকে, কাহাকেও অবিশ্বাস করে নাই । যেমন, যে অরণ্যে সৰ্ব্বদাই শিকার হইয়৷ থাকে, সেথানে ব্যাধকে অধিক করিয়া আত্মগোপন করিতে হয়, তেমনি যে সমাজে স্ত্রীপুরুষের সর্বদাই সহজেই মিলন হইয়া থাকে, সেখানে মানকেতুকে অত্যন্ত সাবধানে নিজেকে প্রচ্ছন্ন রাখিয়া কাজ করিতে হয় । তপোবনের হরিণী যেমন আশঙ্কিত, তপোবনের বালিকা ও তেমনি অসতর্ক। শকুন্তলার পরাভব যেমন অতি সহজে চিত্রিত হইয়াছে, তেমনি, সেই পরাভব সত্ত্বেও তাহার চরিত্রের গভীরতর পবিত্রতা, তাহার স্বাভাবিক অক্ষুঃ সতীত্ব অতি অনা