পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যষ্ঠ সংখ্যা । ] শকুন্তলা । ՀԵ-Պ দগ্ধ করিয়াছেন—বাহির হইতে তাহাকে ছাইচাপ দিয়া রাখেন নাই। সমস্ত অমঙ্গলের নিঃশেষে অগ্নিসৎকার করিয়া তবে নাটকখানি সমাপ্ত হইয়াছে,—পাঠকের চিত্ত একটি সংশয়হীন পরিপূর্ণ পরিণতির মধ্যে শান্তিলাভ করিয়াছে । ৰাহির হইতে অকস্মাৎ বীজ পড়িয়া যে বিষবৃক্ষ জন্মে, ভিতর তইতে গভীরভাবে তাহাকে নিৰ্ম্মল না করিলে তাহার উচ্ছেদ হয় না : কালিদাস ছুষান্ত-শকুন্তলার বাহিরের মিলনকে দুঃখখনিত পথ দিয়া লইয়া গিয়া অভ্যন্তরের মিলনে সার্থক করিয়া তুলিয়াছেন । এইজঙ্গই কবি গেটে বলিয়াছেন, তরুণ বৎসরের ফুল ও পরিণত বৎসরের ফল, মর্ত্য এবং স্বর্গ যদি কেহ একাধারে পাইতে চায়, তবে শকুন্তলায় তাহ পাওয়া যাইবে । টেম্পেষ্টে ফাদিনান্দের প্রেমকে প্রস্পেরে। কৃচ্ছসাধনদ্বারা পরীক্ষণ করিয়া লইয়াছেন । কিন্তু সে বাহিরের ক্লেশ। কেবল কাঠের বোঝা ৰহন করিয়া পরীক্ষার শেষ হয় না। আভাস্তরিক কি উত্তাপে ও পেষণে অঙ্গার হীরক হহয়৷ উঠে, কালিদাস তাহ দেখাইয়াছেন । তিনি কালিমাকে নিজের ভিতর হইতেই উজ্জল করিয়া তুলিয়াছেন, তিনি ভঙ্গুরতাকে চাপপ্রয়োগে দৃঢ়তা দান করিয়াছেন। শকুস্তলায় আমরা অপরাধের সার্থকতা দেখিতে পাই—সংসারে বিধাতার বিধানে পাপ ও যে কি মঙ্গলকম্মে নিযুক্ত আছে, কালিদাসের নাটকে আমরা তাহার স্বপরিণত দৃষ্টান্ত দেখিতে পাই । অপরাধের অভিঘাত বাতীত মঙ্গল তাহার শাশ্বত দীপ্তি ও A. লাভ করে না। e \o শকুন্তলাকে আমরা কাব্যের আরম্ভে একটি নিষ্কলুষ সৌন্দৰ্য্যলোকের মধ্যে দেখিলাম--সেখানে সরল আনন্দে সে অপেন সৰ্থীজন ও তরুলতামৃগের সহিত মিশিয়া আছে । সেই স্বর্গের মধ্যে অলক্ষ্যে অপরাধ আসিয়া প্রবেশ করিল—এবং স্বর্গসৌন্দর্য্য কীটদষ্ট পুষ্পের ন্যায় বিদীর্ণ, স্রস্ত হইয়া পড়িয়া গেল। তাহার পরে লজ্জা, সংশয়, দুঃখ, বিচ্ছেদ, অনুতাপ । এবং সৰ্ব্বশেষে বিশুদ্ধতর—উন্নততর স্বৰ্গলোকে ক্ষম, প্রতি ও শাস্তি । শকুন্তলাকে একত্রে IParadise Lost of Paradisc Regained oil ষাইতে পারে । প্রথম স্বর্গটি বড় মৃদু এবং অরক্ষিত— তাহা মুন্দর এবং সম্পূর্ণ বুটে, কিন্তু পদ্মপত্রে শিশিরের মত--তাহ। সদ্যঃপাতী। এছ সঙ্কীণ সম্পূর্ণতার সোঁকুমাৰ্য্য হইতে মুক্তি পাওয়াই ভাল—ইহা চিরদিনের নহে এবং হহাতে আমাদের সৰ্ব্বাঙ্গীন তৃপ্তি নাহ। অপরাধ মত্তগজের ন্যায় আসিয়া এখানকার পদ্মপত্রের বেড়। ভাঙিয়। দিল—আলোড়নের বিক্ষোভে সমস্ত চিত্তকে উন্মথিত করিয়া তুলিল । সহজ স্বৰ্গ এইরূপে সহজেই নষ্ট হইল, বাকি রহিল সাধনার স্বর্গ। অমুতাপের দ্বারা—তপস্যার দ্বারা সেই স্বৰ্গ মৃথম জিত হইল, তখন আর কোন শঙ্কা রহিল না। এ স্বর্গ শাশ্বত । মানুষের জীবনও এইরূপ – শিশু ধে সরল স্বর্গে থাকে, তাহ সুন্দর, তাহ সম্পূর্ণ, কিন্তু ক্ষুদ্র । মধ্যবয়সের সমস্ত বিক্ষেপ ও বিক্ষোভ, সমস্ত অপরাধের আঘাত ও অনুতাপের দাহ জীবনের পূর্ণবিকাশের পক্ষে