পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষষ্ঠ সংখ্যা । ] কালণের প্রকৃত নাম কি ছিল, তাহ নানা তর্কবিতর্কে আচ্ছন্ন হইয়া পড়িয়াছে। কলেণ-নাম সংস্কৃতমূলক হইলেও অপভ্রংশ। ভাষাতত্ত্ববিৎ পণ্ডিতগণ বলেন, কল্যাণশব্দের অপভ্রংশে কহলণ-শব্দ উৎপন্ন হইয়াছে। রাজতরঙ্গিণীতে জনৈক ব্যক্তি কখন কল্যাণ কখন বা কহল৭ নামে কথিত ও লিখিত থাকা দেখিতে পাওয়া যায় । কহলণের প্রকৃত নাম যে কবি কল্যাণ, তাহার বিশ্বাসযোগ প্রমাণ আবিষ্কৃত হকঘাছে । কহল৭ তাহার সমসাময়িক কবিগণের মধ্যে মঙ্খ-নামক কবির নামোল্লেখ করিয়াছেন । এই কবি শ্ৰীকণ্ঠচরিত’ নামক কাব্য রচনা করেন ; তাহাতে প্রসঙ্গক্রমে তাহার সমসাময়িক ত্ৰিশজন কবির নাম ও গুণগ্রাম বর্ণিত আছে । তন্মধ্যে কবি কল্যাণ একজন । সান্ধিবিগ্রহিক অলকদ স্তু এই কবি কল্যাণের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। ইহাতে কহলণের প্রকৃত নামের পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া ষায় । কিন্তু র্তাহার কহলণ-নাম এত সুপরিচিত যে, এক্ষণে কল্যাণ-নাম আর সমাদরলাভে সক্ষম হইবে না । কহলণ ব্রাহ্মণবংশে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন বলিয়াই বোধ হয় । কিন্তু সে কথা কুত্ৰাপি স্পষ্টাক্ষরে লিখিত নাই । তিনি কাশ্মীরের নানাস্থান পরিভ্রমণ করিয়া লুপ্তকীৰ্ত্তি ও তীর্থস্থান স্বচক্ষে দর্শন করিয়াছিলেন বলিয়া বিশ্বাস হয়। স্থানীয় বর্ণনার সূক্ষাতিস্বল্প পারিপাটে তাহার যথেষ্ট আভাস প্রাপ্ত ट्रेGग्नां यग्नि । সেকালে স্বষ্টিপ্রকরণ ছুইতে কথা রাজতরঙ্গিণী । ·Ge දෘ আরম্ভ করিবার রীতি প্রচলিত ছিল। পুরাণে তাহার দৃষ্টান্ত দেখিতে পাওয়া যায়। কবি কুহলণ ইতিহাসরচনাকালেও সে সনাতন পদ্ধতির সমাদর রক্ষা করিয়া, স্থষ্টির প্রথমে কাশ্মীরের উপত্যক। যে “সতীসরঃ”নামক হ্রদ ছিল, তাহার উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন । ইহা কাশ্মীরের চিরন্তন জনশ্রুতি। আধুনিক ভূতত্ত্ববিৎ পণ্ডিতগণ এই জনশ্রুতি একেবারে অগ্রাহ করিতে পারেন না । প্রকৃতির লালানিকেতন কাশ্মীরের পাৰ্ব্বত জনপদ ভূস্বৰ্গ বলিয়। অদ্যপি কীৰ্ত্তিত হইয়া থাকে । পৰ্ব্বতের উপর পবীতামাল অসংখ্য শিখর বিস্তার করিয়া, সমগ্র কাশ্মীররাজ্যকে বিচিত্র চিত্রপটের দ্যায় প্রতিভাত করিয়াছে। তাহার উপত্যক-অধিত্যক। ফল-পুষ্প-শস্তে, নদ-নদী-প্রস্রবণে, মন্দির, চৈত্য ও অট্টালিকায় সুশোভিত হইয়া, কাশ্মীরকে মুখসৌভাগ্য, জ্ঞান ও ধৰ্ম্মে সমুন্নত করিয়াছিল । কবে এই পাৰ্ব্বত্যরাজ্যে প্রথমে সভ্যতা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠালাভ করে, তাহা নির্ণয় করা অসম্ভব ; সে আদিযুগের জনশ্রুতি পৰ্য্যন্তও বিলুপ্ত হইরা গিয়াছে! মহাভারত যে কুরুক্ষেত্ৰ-মহাসমরের আখ্যায়িকা, তাহাতে কাশ্মীররাজকে কোন পক্ষে অস্ত্ৰধারণ করিতে না দেখিয়া কেহ কেহ মনে করেন,—তৎকালে কাশ্মীর কোন প্রবল নরপতির রাজ্য বলিয়া পরিচিত ছিল ন। কবি কহুলণ এই সিদ্ধান্তের প্রতিকুল প্রমাণ উপস্থিত করিবার জন্ত লিথিয়াছেন, —তৎকালে কাশ্মীরের সিংহাসনে শিশু রাজা সমাসীন বলিয়া, তিনি কুরুক্ষেত্রের মহাসমরে ষোগদান করিতে পারেন নাই ।