পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যষ্ঠ সংখ্যা । ] চোখের বালি । రిపిరి তেও বিমুখ হইলেন। আমি যে পাপ জাগাইয়া তুলিয়াছি, তাহা আমাকে নিৰ্ব্বাসনেও টিকিতে দিল না । মহেন্দ্র সেই গ্রামে আসিয়া,-আমার ঘরের দ্বারে আসিয়া, আমাকে সকলের সম্মুথে লাঞ্ছিত করিল। সে গ্রামে আর আমার স্থান হইল না । দ্বিতীয়বার তোমার আদেশের জন্য তোমাকে অনেক খুজিলাম, কোনমতেই তোমাকে পাইলাম না, মহেন্দ আমার থেtল চিঠি তোমার ঘর হইতে ফিরাইয়া লইয়। আমাকে প্রতারণা করিল । বুঝিলাম, তুমি আমাকে একেবারে পরিত্যাগ করিয়াছ । ইহার পরে আমি একেবারেই নষ্ট হইতে পারিতাম–কিন্তু তোমার কি গুণ আছে, তুমি দূরে থাকিয়াও রক্ষা করিতে পার – তোমাকে মনে স্থান দিয়াছি বলিয়াই আমি পবিত্র হইয়াছি—একদিন তুমি আমাকে দর করিয়া দিয়া নিজের ষে পরিচয় দিয়াছ, তোমার সেই কঠিন পরিচয় কঠিন সোণার মত—কঠিন মাণিকের মত আমার মনের মধ্যে রহিয়াছে, আমাকে মহামূল্য করিয়াছে। দেব, এই তোমার চরণ ছু ইয়। বলিতেছি, সে মূল্য নষ্ট হয় নাই ।” বিহারা চুপ করিয়া বসিয়া রছিল । বিনোদিনীও আর কোন কথ। কহিল না । অপরাহ্লের আলোক প্রতিক্ষণে স্নান হইয়া আসতে লাগিল । এমন-সময় মহেন্দ্র ঘরের দ্বারের কাছে আসিয়া বিহারীকে দেখিয়া চম্কিয়া উঠিল । বিনোদিনীর প্রতি তাহার যে একটা ঔদাসীন্ত জন্মিতেছিল, ঈর্ষার তাড়নায় তাহা দূর হইবার উপক্রম হইল। বিনো দিনী বিহারীর পায়ের কাছে স্তব্ধ হইয়া বসিয়া আছে" দেখিয়া, প্রত্যাখ্যাত মছেন্দ্রের গৰ্ব্বে আঘাত লাগিল । বিনোদিনীর সহিত বিহারীর চিঠিপত্রদ্বারা এই মিলন ঘটয়াছে, ইহাতে তাহার আর সন্দেহ রহিল না । এতদিন বিহারী বিমুখ হইয়া ছিল, এখন সে যদি নিজে আসিয়া ধরা দেয় তবে বিনোদিনাকে ঠেকাইবে কে ? মহেন্দ্র বিনোদিনীকে ত্যাগ করিতে পারে, কিন্তু আর কাহারে হাতে ত্যাগ করিতে পারে ন, তাহ আজ বিহারীকে দেখিয়া বুঝিতে পারিল । ব্যর্থরোযে তাত্র বিদ্রুপের স্বরে মহেন্দ্র বিনোদিনীকে কহিল, “এখন তবে রঙ্গভূমিতে মহেন্দ্রের প্রস্থান, বিহারীর প্রবেশ ? দৃশুটি সুন্দর–হাততালি দিতে ইচ্ছা হইতেহে । কিন্তু আশা করি, এই শেষ অঙ্ক, ইহার পরে আর কিছুই ভাল লাগিবে না ।” বিনোদিনীর মুখ রক্তিম হইয়া উঠিল। মহেন্দ্রের আশ্রয় লইতে যথন তাহাকে বাধা হইতে হইয়াছে, তখন এ অপমানের উত্তর তাহার আর কিছুই নাই,—ব্যাকুলবৃষ্টিতে সে কেবল একবার বিহারীর মুখের দিকে চাহিল । বিহারী খাট হইতে উঠিল—অগ্রসর হইয়া কহিল, "মহেন্দ্র, তুমি বিনোদিনীকে কাপুরুষের মত অপমান করিয়ো না— তোমার ভদ্রতা যদি তোমাকে নিষেধ ন করে, তোমাকে নিষেধ করিবার অধিকার আমার আছে ।” মহেন্দ্র হাসিয়া কহিল, “ইহারই মধ্যে অধিকার সাব্যস্ত হইয়া গেছে ? আঞ্জ