পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম সংখ্যা । ] রংমহল বা মোগল-বাদশাহের অন্তঃপুর। 는 ইবার জন্ত হিন্দু ও মুসলমান পরিবার হইতে নিৰ্ব্বাচিত হইয়া আসিত। ইহাদের তন্‌থা প্রাসাদের অন্তান্ত অঙ্গনারই উনুরূপ ছিল, কিন্তু ইহীরা বাদশাহের মন্ত্রণাসভায় প্রবেশাধিকার পাইত না । ঐকতানবাদনের সময়াদি নিৰ্দ্ধারণ, বীণাবিশেষবাদনে তরুণী শিষ্যদের শিক্ষাদান এবং বেগম ও শাজাদীদের চিত্তরঞ্জনার্থ নূতন নূতন রাগরাগিণীর উদ্ভাবন,—কেবল উদ্ভাবন নহে, উদ্ভাবন করিয়া সেগুলি তাহাদিগকে শুনাইয়া দেওয়া —ইহাদের নির্দিষ্ট কৰ্ত্তব্যের মধ্যে পরিগণিত হইত। বেগম ও শাজাদীমাত্রেরই নিজস্ব এইরূপ একএকদল গায়িক নিযুক্ত থাকিত। পরীক্ষা করিয়া ইহাদের মধ্যে যাহাকে পছন্দ হইত, বেগম ও শাজাদীরা তাহাকে আপনাদের বিশ্বস্ত প্রিয়পাত্ৰী করিয়া রাখিতেন। যে সমস্ত কার্য্য অতি গোপনে সম্পাদিত হওয়! আবশ্যক, ইহাদের হস্তে সেই সব দায়িত্বপূর্ণ কাব্যভার অর্পিত হইত। রংমহলের কোন মহোৎসবের দিন এই সমগ্র গায়িকামণ্ডলী সমবেত হইয়া সৰ্ব্বশক্তিমান অনন্তপুরুষের বন্দনাগীতি বা তাহার পার্থিব প্রতিনিধি বাদশাহের, গুণগান করিত। শেষোক্ত স্তুতিরচনা এরূপ অত্যুক্তিপূর্ণ অলঙ্কারভারে জড়িত ও এরূপ হাস্তোদ্দীপক চাটুবাদে পূর্ণ যে, এস্থলে তাহার দুই একটি দৃষ্টান্ত বোধ হয় পাঠকের অপ্রতিকর হইবে না । মনে করুন, বাদশাহের প্রবল প্রতাপ ও বিপুল বীরত্ব বিক্রুমের বর্ণনা আরম্ভ হইয়াছে—অমনি দেখিবেন, দিগুনাগ, গণ তাহার প্রচণ্ড গতিবেগে কম্পিত হই তেছে-কোথাও বা ভগবান মরীচিমালী র্তাহার মস্তকরক্ষার উপাধান হইয়াছেন – আর কোথাও বা নিশাপতি তাহার অশ্বপৃষ্ঠে আরোহণ করিবার রেকাবে পরিণত ! প্রাচ্য প্রদেশস্থলভ অত্যুক্তিতে এই সকল স্তোত্র সত্য ও সন্তাব্যের সীমা অতিক্রম করিয়া বাদশাহের শ্রুতিমুখ সম্পাদন করিত। ংমহলের অষ্টান্ত বরবর্ণিনীদের মত স্বয়ং বাদশাহ ইহাদের ও এক একটি নাম রক্ষা করিতেন। যেমন, কাহারও নাম হইত সারক বাই (মধুকণ্ঠ বা কলকষ্ট ), কাহারও বা জ্ঞান বা গেয়ান বা জেহন (প্রতিভাশালিনী বা জ্ঞানময়ী ) । হাস্তরসোদ্দীপক দৃষ্ঠাবলীর উদ্ভাবনায় ইহাদের বিশেষ পটুতা ছিল। বেগমদের জন্ত নুতন নুতন ক্রীড়াকৌতুক স্বষ্টি করিয়৷ ইহার নিজেদের দক্ষতার যথেষ্ট পরিচয় দিত। মেনুষী এমন কথাও বলিয়াছেন যে, উচ্চবংশদভূত না হইলেও, ইহাদের ভিতর হইতে কেহ কেহ কেবল সুন্দর সুসম্বদ্ধ আমোদপ্রদ নাট্যগীতিরচনার পারিপাট্যে প্রথমশ্রেণীস্থ বেগমদের পদে উন্নীত হইত। মেনুষীর এই নর্তকীদের বর্ণনার বার্ণিয়েকথিত একটি গল্প আমাদের মনে পড়িয়া গেল। এই শ্রেণীর নর্তকীসম্প্রদায়কে বাণিয়ে কাঞ্চন বা কাঞ্চনী নামে অভিহিত করিয়াছেন।* সম্রাটু জাহাগীরের রাজসভায় এইরূপ কোন একটি যুবতী ও রূপবতী কাঞ্চনীকে লইয়। বর্ণাড়নামধেয় একজন ফরাসী চিকিৎসক এক কৌতুককর ব্যাপারের অভিনয় করিয়াছিলেন। অনেক দুশ্চি

  • দিল্লীসহরে কাশ্মীরীগেটের নিকুট ‘কাঞ্চনী-গলি বলিয়া প্রসিদ্ধ একটি স্থান অদ্যপি বৰ্ত্তমান।