পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૭8ર বঙ্গদর্শন । ২য় বর্ষ, আশ্বিন। পুস্তকখানি উদ্ধৃত করিতে হয়। কম্বলের লোম বাছিয়া ফেলিতে হইলে; গোটা কম্বলথানি বাছিয়া ফেলিতে হয়। শেক্ষপীয়রের কথাতেই এই সমালোচনা শেষ করা ভাল বলিয়া মনে হইতেছে । তাহার নিদাঘ-নিশার স্বপ্ন’ নামক নাটকে বটমের স্বন্ধে গর্দভের মণ্ড দেখিয়া কুইন্‌স বলিতেছে— Bless thee, Botion ! bless thee ! thou art. translated.” আমরাও এই অনুবাদ পড়িয়া বলিতে পারি-- “ওগো শেক্ষপীয়র, জগদীশ্বর তোমার মঙ্গল করুন ! তুমি যে দেখিতেছি, অনু বাদিত হইয়াছ ।” যতীন্দ্রবাবু দুঃখিত হইবেন না। আমাদের ভাষায় শেক্ষপীসরের যতগুলি অনুবাদ আমি দেখিয়াছি, তাহার প্রায় সবগুলির সম্বন্ধেই এইরূপ সমালোচনা করিতে হয়। পঞ্চ-পুষ্প বা উপন্যাসগুপ্ত। শ্ৰীহরিসাধন মুখোপাধ্যায় প্রণীত । দ্বিতীয় সংস্করণ । মূল্য ১০/০ এক টাকা দুই আনা । বঙ্গীয় সাহিত্য-ক্ষেত্রে হরিসাধনবাবু অপরিচিত নহেন। অনেক সাময়িক পত্রে তাহার লিখিত অনেক প্রবন্ধ পড়িয়াছি বলিয়া মনে হয়। সেই সকল পড়িয়া এইরূপ মনে হইয়াছে যে, মোগল অধিপত্যের সময়ের ভারতেতিহাস হরিসাধনবাবু ষত্নসহকারে অধ্যয়ন করিয়াছেন । এই উপন্যাস-গুচ্ছ তাহারই একটি ফল। ফল, মোটের উপর তালই হইয়াছে। এই গল্পগুলি পাঠ করিয়া মোগলের ঐশ্বৰ্য্য ও প্রতাপ এবং রাজপুতের শৌর্য্য ও চিত্তবলের একটা চিত্র মনশ্চক্ষে প্রতিভাত হয়। এবং সে চিত্র স্বভাবমুকারী, সুতরাং প্রকৃত। " এই পুস্তকের সব কয়টি গল্পই আল্লাধিক পরিমাণে চিত্তাকর্ষক ; তবে ‘লাল বারদোয়ার’ গল্পটি আমাদের সর্বাপেক্ষা ভাল লাগিয়াছে । আজকালকার বাঙ্গালা উপন্থfাসের যেরূপ দশা, তাহাতে এই পুস্তকের আদর হওয়া বাঞ্ছনীয় মনে করি । তাই বলিয়া দোষ যে নাই, এমন নহে। স্থানে স্থানে অসঙ্গতি-দোয ঘটিয়াছে। একটা দৃষ্টান্ত দেখান যাউক । আগ্রার রাজপ্রাসাদে আকবরশাহকে দরিদ্রের বেশে দেখিয়া— “রঞ্জন ভাবিতেছিলেন—ঐশ্বৰ্য্য যেন দারিদ্র্যের মূৰ্ত্তি পরিগ্রহ করিয়াছে। প্রমোদকানন যেন শ্মশানের ভাব ধরিয়াছে—তেজ যেন ধূমাচ্ছাদিত হইয়াছে—দীর্ঘকায় পৰ্ব্বত যেন তুষারের মলিন আচ্ছাদনে ভূষিত হইয়াছে—সুখ যেন দুঃখকে আলিঙ্গন করিয়াছে—প্রফুল্লতা যেন বিষাদকে সঙ্গে করিয়৷ আনিয়াছে।” স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনা করিলে বলিতে হয় যে, এই কবিত্বোচ্ছ,সি নিতান্ত অসঙ্গত হইয়াছে। রজনীতে, আগ্রার দুর্গে, আকবরশাহের সম্মুখে এতটা তাব-তরঙ্গ রঞ্জনের ন্যায় লোকের মনে উছলিয়া উঠিতে পারে না-কাহারও পারে কি না, সন্দেহ। এমন আরও আছে। কিন্তু পুস্তকখানি যখন মোটের উপর চিত্তাকর্ষক হইয়াছে, তখন এমন দুই-চারিটা দোষ আমরা উপেক্ষা ও মার্জন করিতে পারি। " e শ্ৰীচন্দ্রশেখর মুখোপাধ্যায়।