পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\')ფ8 যদি হুইত, তবে বাঙালিবাবুর কুসুমকোমল বাবুয়ানা তাহার প্রথম স্থান অধিকার করিত। নিলন্তর্জ বাবুকে তাহার বিলাতী দোকানের আরাম-চৌকি হইতে টানিয়া উৎপাটত করিতে পারে, এমন একটা আকস্মিক দৈবছর্যোগ বিধাতার কাছে প্রার্থনা করি । ত্যাগের বিলাসবিরল কঠোরতার মধ্যে পৌরুষ আছে। যদি স্বেচ্ছায় তাহা বরণ করি, তবে নিজেকে লজ্জা হইতে বাচাইতে পারিব । এই দুই রাস্তা আছে- এক ক্ষত্রিয়ের রাস্তা, অার এক ব্রাহ্মণের রাস্তা । যাহারা মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করে, পৃথিবীর মুখসম্পদ তাহাদেরি। যাহার। জীবনের সুখকে অগ্রাহ করিতে পারে, তাছাদের আনন্দ মুক্তির । এই দুয়েতেই পৌরুষ । প্রাণটা দিব, এ কথা বল। যেমন শক্ত – সুখটা চাই না, এ কথা বলা তাহ অপেক্ষা কম শক্ত নয়। পৃথিবীতে যদি মনুষ্যত্বের গৌরবে মাথা তুলিয়া চলিতে চাই, তবে এই দুয়ের একটা কথা যেন বলিতে পারি। হয় বীৰ্য্যের সঙ্গে বলিতে হইবে—“চাই!” নয়, বীৰ্য্যেরই সঙ্গে বলিতে হইবে—“চাই না ।” “চাই” বলিয়া কঁাদিব, অথচ লইবার শক্তি নাই ; “চাই না” বলিয়া পড়িয়া থাকিব, কারণ চাহিবার উদ্যম নাই ;-—এমন ধিক্কার বহন করিয়াও যাহারা বাচে,যম তাহাদিগকে নিজগুণে দয়া করিয়া না সরাইয়া লইলে তাহাদের মরণের আর উপায় নাই । বাঙালি আজকাল লোকসমাজে বাহির হইয়াছে। মুস্কিল এইষে, জগতের মৃত্যুশালা হইতে তাহার কোনো পাস ন ই । কু ও র' বঙ্গদর্শন । [ ২য় বর্ষ, কাৰ্ত্তিক । তাহার কথাবাৰ্ত্ত যতই বড় হেক্‌, কাছারে। কাছে সে খাতির দাবী করিতে পারে না । এইজন্ত তাহার আস্ফালনের কথায় অত্যস্ত বেসুর এবং নাকিমুর লাগে । না মরিলে সেটার সংশোধন হওয়া শক্ত । পিতামহদের বিরুদ্ধে আমাদের এইটেই সব চেয়ে বড় অভিযোগ । সেই ত আজ র্তাহারা নাই, তবে ভালমন্দ কোন-একটা অবসরে তাহারা রীতিমত মরিলেন না কেন ? তাহারা যদি মরিতেন, তবে উত্তরাধিকারস্থত্রে আমরাও নিজেদের মরিবার শক্তিসম্বন্ধে আস্থা রাখিতে পাঞ্জিতাম । র্তাহারা নিজে না থাইয়াও ছেলেদের অল্পের সঙ্গতি রাখিয় গেছেন, শুধু মৃত্যুর সঙ্গতি রাখিয়া যান নাই। এত-বড় দুর্ভাগ্য, এত-বড় দীনতা আর কি হইতে পারে । প্রতাপাদিত্য, সীতারাম, সিস্ট্রেবিজয়ী বিজয়সিংহ, তোমাদের স্মৃতি ধারাবিহীন জলের মত বাংলার ইতিহাসমরুর মধ্যে কোথায় শুকাইয়া গেছে । আমাদের প্রাণের পিপাসা মিটাইবার জন্ত তাহ আমাদের হৃদয়ের ভিতর পর্য্যন্ত আসিয়া পৌছিতে পারে নাই। তোমাদের রক্তপুত চরিতধারাজলে বাঙালিজাতির অভিষেকক্রিয়৷ সম্পন্ন হইতে পারিল না। কারণ, তোমরা বিচ্ছিন্ন—এই দীনরক্তের দেশে তোমরা স্রোত বহাইয়া গেলে না ! এখন আমাদিগকে কিসে গৌরব দিবে ! ইংরাজ আমাদের দেশের যোদ্ধ জাতিকে ডাকিয়া বলেন, “তোমরা লড়াই” করিস্বtছ- প্রাণ দিতে জান ; যাহারা কখনো লড়াই করে নাই, কেবল বকিতে জানে,