পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՏԵ কিৎস্য ব্যাধি আরোগ্য করিয়া উক্ত চিকিৎসক রাজদরবারে বিশেষ সম্মান ও প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। ওমরাহমাত্রেই তাহাকে সম্মানসম্বৰ্দ্ধনা করিবার জন্য ব্যগ্র হইতেন। র্তাহার যেমন প্রভূত অর্থ-উপার্জন হইত, তেমনি সে অর্থ তিনি অকাতরে এই কাঞ্চনীদের মধ্যে বিতরণ করিতেন। সুতরাং এই সম্প্রদায় যে র্তাহার একান্ত অনুগত হইয়া পড়িবে, তাহা বিচিত্র নহে। তাহার গৃহে প্রত্যহ ইহাদের সান্ধা বৈঠক বসিত। ঘটনাক্রমে যাহারা তাই র আবাসে এইরূপ নিত্য গতায়াত কাৰ্বত, তাহাদের মধ্যে রূপলাবণ্যবতী কোন কাঞ্চনীর প্রেমে তিনি উন্মত্ত হইয় উঠেন। কিন্তু অপৰ্য্যাপ্ত অর্থ ও বারংবার সামুনয় ভিক্ষানিবেদনেও ইহার অভিভাবকদিগকে তিনি বশীভুত করিতে পারেন নাই। ফরাসী চিকিৎসকের অবৈধ প্রস্তাবে সন্মত হইলে, কাঞ্চনীর স্বাস্থ্য ও রূপলাবণ্য যুগপৎ তিরোহিত হইবে, এই আশঙ্কায় তাহার অভিভাবকেরা তাহাকে বর্ণাডের নেত্রপথ হইতে সাধ্যমত দূরে রাখিত। মানবচরিত্রের স্বাভাবিক ধৰ্ম্ম এই যে, উদ্ধাম উচ্ছৃঙ্খল প্রবৃত্তি যতই বাধা পায়, উহার বল ততই বাড়িয়া উঠে। এ ক্ষেত্রেও তাহাই ঘটিয়াছিল। ফরাসী চিকিৎসক ব্যর্থমনোরথ হইলেন, কিন্তু নিরাশ হইলেন না। এই সময়ে তাহার অভীষ্টসিদ্ধির এক অমুকুল অবসরও উপস্থিত হইল। তাহার চিকিৎসাগুণে জাহাগীরের অন্তঃপুরে এক অতি উৎকট রোগ আরোগ্য হইল, সম্রাটু প্রকাগু দরবারে পারিতোষিকস্বরূপ তাহাকে এক মহা বঙ্গদর্শন । [ বৈশাখ। মূল্য, উপহার প্রদান করিলেন। সম্রাটের দানে কোথায় কৃতার্থমন্ত হইবেন!—ন, 'অসঙ্কোচে তিনি সে উপহার ফিরাইয়া দিলেন। র্তাহার এ অদ্ভূত আচরণে উপস্থিত ওমরাহ বৃন্দের ভয় ও বিস্ময়ের সীমা রহিল না । সকলেই মনে করিলেন, সম্রাটু বুঝি বা ক্রুদ্ধ হইয়া চিকিৎসকের এ দারুণ ঔদ্ধত্যের উপযুক্ত দণ্ডবিধান করিবেন। যে রাজদরবারে রাজার ক্ষুদ্রতম ইচ্ছাও অলঙ্ঘ্য আজ্ঞা— তুচ্ছতম দানও শিরোধাৰ্য্য, সেই প্রকাশু দরবারে তাহার বিশেষ অনুগ্রহঞ্জাপক মহামূল্য উপঢৌকন অগ্রাহ করা–এ কি ভয়ানক বেয়াদবি ! অনেকের মনে হইল, বর্ণাড় বোধ হয় নিজের মৃত্যু নিজে ঘনাইয়া আনিতেছেন। কিন্তু জাহাগীর কোনরূপ দণ্ডের ব্যবস্থা করিলেন না, বিস্মিত হইয়া কেবল জানিতে চাহিলেন, তাহার প্রার্থনা কি ? তখন বর্ণাডের উচ্ছ,সিত আবেগময় উত্তরে প্রকাশ পাইল, রাজান্ত:পুরের কোন রূপযেীবনসম্পন্ন কাঞ্চনীই চিকিৎসকের মনোহরণ করিয়াছে ও তাহার পাণিগ্রহণই তাহার একমাত্র প্রার্থনীর । সকলেই সিদ্ধান্ত করিলেন, তাহার এ অসম্ভক আকাজ পুর্ণ হইতে পারে না। বর্ণাড একে বিদেশীয়, তাহাতে বিধৰ্ম্মী—কাফেরের সহিত মুসলমানবালিকার বিবাহ বড়ই বিসদৃশ। কিন্তু মুসলমানধৰ্ম্মে শিথিলবিশ্বাস সম্রাটের চক্ষে ইহা বিসদৃশ বলিয়া বোধ হইল না। তিনি উচ্চহাস্তে আপনার সন্মতিজ্ঞাপন করিলেন এবং অনুচরবর্গের প্রতি লক্ষ্য করিয়া কাঞ্চনীকে চিকিৎসকের স্কন্ধে উঠাইয়া দিতে বলিলেন। তখন পূর্ণমনোরথ বর্ণাড় বালি