পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপ্তম সংখ্যা । ] আশা সম্রমুখে কছিল, “কি করিতে হুইবে বল ?” অন্নপূর্ণ কহিলেন, “বিনোদিন এখন বিহারীর জন্তে চা তৈরি করিতেছে । তুষ্ট দুধ-চিনি-পেয়ালা সমস্ত লইয়া যা—দুইজনে মিলিয়া কাজ কর " ` আশা আদেশপালনের জন্ত উঠিল । অন্নপূর্ণ কছিলেন, “এটা সহজ—কিন্তু আমার আর-একটি কথা আছে, সেটা আরো শক্ত-সেইটে তোকে পালন করি, তেই হইবে । মাঝে মাঝে মহেন্দ্রের সঙ্গে বিনোদিনীর দেখা হয় বেই, তখন তোর মনে কি হইবে, তাহ। আমি জানি— সে সময়ে তুই গোপন-কটাক্ষে ও মহেন্দ্রের ভাব কিংবা বিনোদিনীর ভাব দেখিবার চেষ্টামাত্রও করিস্ ে । বুক ফাটিয়া গেলেও তোকে অবিচলিত থাকিতে হইবে । মহেন্দ্র ইহা জানিবে যে, তুই সন্দেহ করিস্ না, শোক করিস না,—তোর মনে ভয় নাই, চিস্তা নাই ;–জোড় ভাঙিবার পূৰ্ব্বে যেমন ছিল, জোড় লাগিয়া আবার ঠিক তেমনিই হইয়াছে—ভাঙনের দাগটুকুও মিলাইয়া গেছে । মহেন্দ্র কি আর কেহ তোর মুখ দেখিয়া নিজেকে অপরাধী বলিয়া মনে করিবে না। চুনি, ইহা আমার অনুরোধ বা উপদেশ নহে, ইহা তোর মাসিমার আদেশ । আমি যখন কাশী চলিয়৷ যাইব, আমার এই কথাটি একদিনের জন্যও ভুলিস নে ৷” আশা চায়ের পেয়ালা প্রভৃতি লইয় বিনোদিনীর কাছে উপস্থিত হইল । কহিল, “জল কি গরম হইয়াছে ? আমি চায়ের দুধ আনিয়াছি।” 尊 চোখের বালি । SNet বিনোদিনী আশ্চৰ্য্য হইয়া আশীর মুখের দিকে চাহিল। কছিল—“বিহারি-ঠাকুরপো বারানায় বসিয়া আছেন, চা তুমি তাহার কাছে পাঠাইয়া দাও, আমি ততক্ষণ পিসিমার জন্ত মুখ ধুইবার বন্দোবস্ত করিয়া রাখি । তিনি বোধ হয় এখনি উঠিবেন ।” বিনোদিনী চা লইয়া বিহারীর কাছে গেল না। বিহারী ভালবাসা স্বীকার করিয়া তাহাকে যে অধিকার দিয়াছে, সেই অধিকার স্বেচ্ছামতে থাটাইতে তাহার , সঙ্কোচবোধ হইতে লাগিল । অধিকারলাভের যে মৰ্য্যাদা আছে, সেই ময্যাদা রক্ষা করিতে হইলে অধিকারপ্রয়োগকে সংযত করিতে হয় । যতটা পাওয়া যায়, ততটা লইয়া টানাটানি করা কাঙtলকেই শোভা পায়— ভাগকে খৰ্ব্ব করিলেই সম্পদের যথার্থ গৌরব । এখন, বিহারী তাহাকে নিজে না ডাকিলে, কোন একটা উপলক্ষ্য করিয়া বিনোদিনী তাহার কাছে আর বাছতে পারে না । বলিতে বলিতেই মহেন্দ্র আসিয়া উপস্থিত হইল । আশার বুকের ভিতরটা যদিও ধড়াস করিয়া উঠিল, তবু সে আপনাকে ংবরণ করিয়া লইয়া স্বাভাবিক স্বরে মহেন্দ্রকে কহিল—“তুমি এত ভোরে উঠিলে যে ? পাছে আলে। লাগিয়া তোমার ঘুম ভাঙে, তাই আমি জানলা-দরজা সব বন্ধ করিয়া আসিয়াছি।” বিনোদিনীর সম্মুথেই আশাকে এইরূপ সহজভাবে কথা কহিতে শুনিয়া মছেন্দ্রের বুকের একটা পাথর যেন নামিয়া গেল । সে আনন্দিতচিত্তে কছিল, “ম। কেমন