পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপ্তম সংখ্যা । ] উৎসবের নালী সম্বন্ধ ছিল । র্তাহীদের প্রাসাদে প্রমোদের দীপ জলিলে তাহার আলোক চারিদিকে প্রজাদের ঘরে ছড়াহয়৷ পড়িত—র্তাহীদের তোরণদ্বারে যে নহবৎ বসিত, তাহার আনন্দধ্বনি দীনের কুটীরের মধ্যেও প্রতিধ্বনিত হইয়া উঠিত। ইংরেজ সিভিলিয়ানগণ পরস্পরের আমন্ত্রণে-নিমন্ত্রণে-সামাজিকতায় যোগদান করিতে বাধ্য, যে ব্যক্তি স্বভাবদোষে এই সকল বিনোদনব্যাপারে অপটু, তাহার উন্নতির অনেক ব্যাঘাত ঘটে । এই সমস্তই নিজেদের জন্ত । যেখানে পাচটা ইংরেজ আছে, সেখানে আমোদ-আহলাদের অভাব নাই –কিন্তু সে আমোদের চারিদিকৃ আমোদিত হইয়৷ উঠে না । আমর। কেবল দেখিতে পাই -- কুলিগুলা বাহিরে বসিয়৷ সন্ত্রস্তচিত্তে পাথার দড়ি টানিতেছে, সহিস ডগ্‌কাটের ঘোড়ার লাগাম ধরিয়া চামর দিয়া মশামাছি তাড়াইতেছে, মৃগয়ার সময় বাজেলোকের জঙ্গলের শিকার তাড়া করিতেছে এবং বন্দুকের দুটো একটা গুলি পগুলক্ষ্য ইহঁতে ভ্ৰষ্ট হইয় নেটিভের মন্মভেদ কfরতেছে। ভারতবর্ষে ইংরেজরাজ্যের বিপুল শাসনকাৰ্য্য একেবারে আনন্দহান, সৌন্মঘাহন—তাহার সমস্ত পথই আপিস-আদালতের দিকে—জনসমাজের হৃদয়ের দিকে নছে। হঠাৎ ইহার মধ্যে একটা খাপছাড়া দরবার কেন ? সমস্ত শাসন প্রণালীর সঙ্গে তাহার কোনখানে যোগ ? গাছেলতায় ফুল ধরে, আপিসের কড়ি-বরগায় ত মাধবী-মঞ্জরী ফোটে না ! এ যেন মরুভূমির মধ্যে মরীচিকার মত। এ ছায়। তাপ অত্যুক্তি । ○ケめ নিবারণের জন্ত নহে, এ জল তৃষ্ণ দুর করিবে না । পূৰ্ব্বেকার দরবারে সম্রাটের যে নিজের প্রতাপ জাহির করিতেন, তাছা নহে ; সে সকল দরবার কাহারো কাছে তারস্বরে কিছু প্রমাণ করিবার জন্ত ছিল না,— তাহা স্বাভাবিক ;–সে সকল উৎসব বাদশাহ-নবাবদের ঔদার্য্যের উদ্বেলিত-প্রবাহস্বরূপ ছিল ;–সেই প্রবাহ বদল্পিতা বহন করিত, তাহাতে প্রার্থীর প্রার্থন পুণ করিত, দীনের অভাব দূর হইত, তাহাতে আশা এবং আনন্দ দূরদূরান্তরে বিকীর্ণ হইয়া যাহত । আগামী দরবার উপলক্ষ্যে কোন পীড়িত আশ্বস্ত হইয়াছে, কোন দরিদ্র মুখস্বপ্ন দেখিতেছে ? সেদিন যদি কোনো চুরাশাগ্রস্ত দুভাগ দরখাস্তহাতে সম্রাঢ়প্রতিনিধির কাছে অগ্রসর হইতে চায়, তবে কি পুলিশের প্রহর পৃষ্ঠে লইয়া তাহাকে কাদিয়া ফিরিতে হহবে না ? তাই বলিতেছিলাম আগামী দিল্লির দরবার পাশ্চাত্য অত্যুক্তি, তাহ মেকি অত্যুক্তি। এদিকে হিসাবকিতাব এবং দোকানদারিটুকু আছে—ওদিকে প্রাচ্যসম্রাটের নকলটুকু না করিলে নয়। আমরা দেশব্যাপী অনশনের দিনে এই নিতান্ত ভূয়া দরবারের আড়ম্বর দেখিয়া ভীত হইয়াছিলাম বলিয়। কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়া বলিয়াছেন— খরচ খুব বেশি হইবে না, যাহাও হইবে, তাহার অৰ্দ্ধেক আদায় করিয়া লইতে পারিব । কিন্তু সেদিন উৎসব করা চলে ন, যেদিন খরচপত্র সাম্‌লাইয়া চলিতে হয়। তহবিলের টানাটানি লইয়া উৎসব করিতে