পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপ্তম সংখ্যা । ] অত্যুক্তি। به اراری যে ব্যক্তি অসম্ভব স্থান হইতেও সাপ দেখিতেই চায়, সাপুড়ে তাহাকে ঠকাইতে বাধ্য হয় । সে নিজের ঝুলির ভিতর হইতেই সাপ বাহির করে, কিন্তু ভাণ করে যেন দর্শকের চাদরের মধ্য হইতে বাহির হইল। কিল্পিং নিজের কল্পনার ঝুলি হইতেই সাপ বাহির করিলেন, কিন্তু নৈপুণ্যগুণে ব্রিটিশ পাঠক ঠিক বুঝিল যে, এসিয়ার উত্তরায়ের ভিতর হইতেই সরীসৃপগুলা দলে দলে বাহির হইয়া আসিল । বাহিরের বাস্তব সত্যের প্রতি আমাদের এরূপ একান্ত লোলুপতা নাই। আমরা কল্পনাকে কল্পনা জানিয়া ও তাহার মধ্য হইতে রস পাই ! এজন্ত গল্প শুনিতে বসিয়া আমরা নিজেকে নিজে ভুলাইতে পরি—লেখককে কোনরূপ ছলনা অবলম্বন করিতে হয় না । কাল্পনিক সত্যকে বাস্তব সত্যের ছদ্মগোপদাড়ি পরিতে হয় না । আমরা বরঞ্চ বিপরীত দিকে যাই । আমরা বাস্তব সত্যে কল্পনার রং ফলাইয় তাহাকে অপ্রাকৃত করিয়া ফেলিতে পারি, তাহাতে আমাদের দুঃখবোধ হয় না। আমরা বাস্তব সত্যকে ও কল্পনার সহিত মিশাইয়। দিষ্ট —আর য়ুরোপ কল্পনাকে ও বাস্তব সত্যের মূৰ্ত্তি পরিগ্রহ করাইয়। তবে ছাড়ে। আমাদের এই স্বভাবদে যে আমাদের বিস্তর ক্ষতি হইয়াছে—আর ইংরেজের স্বভাবে ইংরেজের কি কোনে লোকসান করে নাই ? গোপন-মিথ্য কি সেখানে ঘরে-বাহিরে বিহার করিতেছে না ? সেথানে খবরের কাগজে থবর-বানানো চলে, তাহা দেখা গিয়াছে এবং সেখানে ব্যবস্নাদার-মহলে শেয়ার-কেনা-বেচার বাজারে যে কিরূপ সৰ্ব্বনেশে মিথ্যা বানানো হইয়া থাকে, তাহাও কাহারো অগোচর নাই । বিলাতে বিজ্ঞাপনের অত্যুক্তি ও মিথ্যোক্তি নানা বর্ণে নানা চিত্রে নানা অক্ষরে দেশে-বিদেশে নিজেকে কিরূপ ঘোযণা করে, তাহ আমরা জানি—এবং আজকাল আমরাও ভদ্রাভদ্রে মিলিয়া নির্লজ্জভাবে এই অভ্যাস গ্রহণ করিয়াছি ! বিলাতে পলিটিক্সে বানানো বাজেট তৈরি করা, প্রশ্নের বানানো উত্তর দেওয়া প্রভৃতি অভিযোগ তুলিয়া এক পক্ষের প্রতি অপর পক্ষে যে সকল দোষারোপ করিয়া থাকেন, তাহা যদি মিথ্যা হয় তবে লজ্জার বিষয়, যদি না হয় তবে শঙ্কার বিষয়, সন্দেহ নাই । সেখানকার পালামেণ্টে পালামেণ্ট সঙ্গত ভাষায় এবং কখনো বা তাহা লঙ্ঘন করিয়াও বড় বড় লোককে মিথু্যক, প্রবঞ্চক, সত্যগোপনকারী বলা হইয়া থাকে ; হয়, এরূপ নিন্দাবাদকে অত্যুক্তিপরায়ণতা বলিতে হয়, নয়, ইংলণ্ডের পলিটিক্স, মিথ্যার দ্বারা জীর্ণ, এ কথা স্বীকার করিতে হয়। যাহা হউক, এ সমস্ত আলোচনা করিলে এই কথা মনে উদয় হয় যে, বরঞ্চ অত্যুক্তিকে সুস্পষ্ট অত্যুক্তিরূপে পোষণ করাও ভাল, কিন্তু অত্যুক্তিকে স্বকৌশলে ছাটিয়াছুটিয়া তাহাকে বাস্তবের দলে চালাবার চেষ্টা করা ভাল নহে—তাহাতে বিপদ অনেক বেশি। পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি, যেখানে দুই পক্ষে উভয়ের ভাষা বোঝে, সেখানে পরস্পরের যোগে অত্যুক্তি আপনি সংশোধিত হইয়া আসে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে বিলাতি অত্যুক্তি