পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ꮼbrb° বোঝা আমাদের পক্ষে শূক্ত । এইজন্ত তাহা অক্ষরে-অক্ষরে বিশ্বাস করিয়া, আমরা নিজের অবস্থাকে হস্তিকর ও শোচনীয় করিয়া তুলিয়াছি । ইংরেজ বলিয়াছিল, আমরা তোমাদের ভাল করিবার জন্তই তোমাদের দেশ শাসন করিতেছি, এখানে শাদা-কালোয় অধিকারভেদ নাই, এখানে বাঘে-গোরুতে একঘাটে জল খায়, সম্রাট্‌শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ আকবর যাহা কল্পনামা ত্র করিয়াছিলেন, আমাদের সাম্রাজ্যে তাহাই সত্যে ফলিতেছে । আমরা তাড়াতাড়ি ইহাই বিশ্বাস করিয়া আশ্বাসে স্ফীত হইয়া বসিয়া আছি । আমাদের দাবীর আর অন্ত নাচ । ইংরেজ বিরক্ত হইয়া আজকাল এই সকল অত্যুক্তিকে খৰ্ব্ব করিয়া লইতেছে । এখন বলিতেছে —ষাহী তরবারি দিয়া জয় করিয়াছি, তাহা তরবারি দিয়া রক্ষা করিব । শাদা-কালোয় যে যথেষ্ট ভেদ আছে, তাহা এখন অনেক সময়ে নিতান্ত গায়ে পড়িয়া নিতান্ত স্পষ্ট করিয়া দেখানে হইতেছে । কিন্তু তবু বিলাতি অভু্যক্তি এমনি মুনিপুণ ব্যাপার সে, আজো আমরা দাবী ছাড়ি নাই, আজে আমরা বিশ্বাস আঁকড়িয়া বসিয়া আছি, সেই সকল অত্যুক্তিকেই আমাদের প্রধান দলিল করিয়া আমাদের জীর্ণ-চীর প্রান্তে বহু যত্নে বাধিয়া রাখিয়াছি । অথচ আমরা প্রত্যক্ষ দেখিতেছি, এক সময়ে ভারতবর্ষ পৃথিবীকে কাপড় জোগাইয়াছে, আজ সে পরের কাপড় পরিয়া লজ্জ বাড়াইতেছে-- এক সময়ে ভারতভূমি অন্নপূর্ণ ছিল, আজ “হাদে লক্ষ্মী হইল লক্ষ্মীছাড়া”—এক সময়ে ৰঙ্গদর্শন । [ ২য় বর্ষ, কাৰ্ত্তিক । ভারতে পৌরুষরক্ষা করিবার অস্ত্র ছিল, আজ কেবল কেরাণীগিরির কলম কাটিবার ছুরিটুকু আছে । ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি রাজত্ব পাইয় অবধি ইচ্ছাপূৰ্ব্বক চেষ্টাপূৰ্ব্বক ছলে-বলে-কৌশলে ভারতের শিল্পকে পঙ্গু করিয়া সমস্ত দেশকে কৃষিকার্য্যে দীক্ষিত করিয়াছে, আজ আবার সেই কৃষকের খাজনা বাড়িতে বাড়িতে সেই হতভাগ্য ঋণসমুদ্রের মধ্যে চিরদিনের মত নিমগ্ন হইয়াছে—এই ত গেল বাণিজ্য এবং কৃষি । তাহার পর বীয্য এবং অস্ত্র, সে কথার উল্লেখ করিবার প্রয়োজন নাই । ইংরেজ বলে, তোমরা কেবলি চাকৃরির দিকে ঝুকিয়াছ, ব্যবসা কর না কেন ? এদিকে দেশ হইতে বর্ষে বর্ষে প্রায় পাচশতকোটি টাকা খাজনায় এবং মহাজনের লাভে বিদেশে চলিয়। যাই তেছে , মূলধন থাকে কোথায় ? এই অবস্থায় দাড়াইয়াছি। তবু কি বিলাতি অত্যুক্তির উপর সম্পূৰ্ণ নির্ভর করিয়া কেবলি দরখাস্তজারি করিতে হুইবে ? হায় ভিক্ষুকের অনন্ত ধৈয্য ! হায় দরিদ্রাণাং মনোরথাঃ ! রোমের শাসনে, স্পেনের শাসনে, মোগলের শাসনে এত-বড় একটা বৃহৎ দেশ কি এমন নিঃশেষে উপায়বিহীন হইয়াছে ? অথচ পরদেশশাসনসম্বন্ধে এত বড়-বড় নীতি কথার দস্তপূর্ণ অত্যুক্তি আর কেহ কি কখনো উচ্চারণ করিয়াছে ? কিন্তু এ সকল অপ্রিয় কথা উত্থাপন করা কেন ? কোন একটা জাতিকে অনাবগুক আক্রমণ করিয়া পীড়া দেওয়া আমা দের দেশের লোকের স্বভাবসঙ্গত নহে— ইহা আমরা ক্রমাগত ঘা থাইয়া ইংরেজের