পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম সংখ্যা । ] নববর্ষ। VL রশ্মি আকর্ষণ করিয়া আমাদের চারিদিকের যাহা কিছুক্ষুদ্র, তুচ্ছ, জীর্ণ তাহারই ক্ষুদ্রতা, তুচ্ছত, জীর্ণতা প্রত্যক্ষ করি,এবং তাঁহারই ' একাধিপত্য হইতে মনকে মুক্তি দিতে চেষ্টা করি । এবারে ভাগ্যক্রমে বেখানে আছি, সেখানে অভ্ৰভেদী কৰ্ম্মস্থপের মধ্যে ছিদ্র করিয়া বর্ষারম্ভের দিনকে কেবল একদিনের অভ্যাগতের মত আমাদের ঘরের মধ্যে ডাকিয়া আনিতে হয় না । এখানে আমরাই সনাতন নববর্ষের বিপুল প্রাসাদে অতিথি রূপে সমবেত । উন্মুক্তদ্বার প্রাসাদ এই-যে আমাদের চারিদিকেই। বিরলতৃণ অনুৰ্ব্বর মাঠ কোথায় চলিরা গেছে ! তাহার অবাধবিস্তৃত নতো ন্নত ভঙ্গিমার নিশ্চল বৈচিত্র্য অমুসরণ করিতে করিতে দুই চক্ষু আকাশের পাখীর মত মুদুর দিক প্রান্তের নীলাভ কুহেলিকার মধ্যে আপনাকে হারাইরা লুপ্ত করিয়া ফেলে। এই মাঠ দিগম্বর রুদ্রদেবের মত রিক্ত – শূন্ততাই ইহার মহৎ ঐশ্বৰ্য্য । মাঝেমাঝে. কাটা-গুল্ম, খৰ্ব্ব-খেজুর ও বলীকন্তুপে এই মাঠের চতুৰ্ব্বরতার সাক্ষ্য দিতেছে, ইহার সম্পূর্ণ অনাবশুকতার গৌরব প্রমাণ করিতেছে। শস্ত প্রভৃতি মানুষের ক্ষুদ্র কাম্যবস্তু হইতে এই প্রকাও ভূখণ্ড নিজেকে এমনি নিৰ্ম্মত্ত করিয়া রাখিয়াছে যে,ইহার কাছে শূন্তবিস্তীর্ণ ইহাকে ছাড়া আর কিছুই প্রত্যাশা করিবার নাই। এখানে দুঃসহদীপ্তি বৈশাখ তাহার অখণ্ড রুদ্রভাবে একাকী আসিয়া দণ্ডায়মান হয় ; তাহার কোন কাজ—কোন প্রয়োজন নাই ; e. og সে ফলে পাক ধরাইতে বা মৌমাছির মধুভাগুর পূর্ণ করিতে আসে না। ঘনঘোরশুামল শ্রাবণ বিদ্যুচ্চকিত দিগদিগন্তরে তাহার বিপুল সমারোহ প্রসারিত করিয়া গম্ভীর মেঘগর্জনে এখানে আবিভূত হয়— শস্তক্ষেত্রে জলসেচন করিবার জন্ত নহে ;— তাহার নববারিধারা গৈরিকবসনা মুনিকস্তাদের মত এই বিশাল নির্জনতার মধ্যে আঁকাবঁকা চিত্র কাটিয়া, গহবর খুদিয়া, বালি ও কুড়ির স্তুপ রচনা করিয়া,কলহান্তে অকারণ খেলা খেলিয়া যায়। ঋতুপর্য্যায় এখানে ঘরের ছেলের মত আসে, কাহারে কোন কাজ করিতে নহে—নিজের বিশুদ্ধ স্বরূপে বিরাজ করিতে । এই প্রয়োজনমুন বিপুল রিক্ততার মাঝথানে আমাদের স্নিগ্ধচ্ছায় আশ্রমটি । চারিদিকের এত-বড় বৃহৎ অবকাশের দ্বারা আমাদের আশ্রমশ্ৰী নিজেকে প্রকাশ করিতেছে। শিবের স্ববিশাল দারিদ্র্যের মাঝখানে অন্নপূর্ণ যেমন নিজের ঐশ্বৰ্য্য পরিস্ফুট করেন, সেইরূপ। পরস্পরকে পরস্পরের একান্ত প্রয়োজন ছিল—শু্যামলা আশ্রমলক্ষ্মী এই রক্তপাংগুমণ্ডিত শূন্তহস্ত উদাসীনকে বহুবর্ষ তপস্ত। দ্বারা প্রাপ্ত হইয়া পূর্ণতা লাভ করিয়াছে এবং পূর্ণতা দান করিয়াছে। এই আশ্রমের মধ্যে তরুলতা আজ নবপল্লবে বিকশিত,আম্রবন এতকাল মুকুলগন্ধে বাতাসকে পাগল করিয়া দিয়া আজ তরুণফলভারেসার্থক। আমলকীশ্রেণী তাহার গতবৎসরের গর্ভভার মোচন করিয়া নবকিসলয়ে নবযৌবন লাভ করিয়াছে। শিরীষের গাছে ফুল ধরিয়া ঝরিয়া পড়িতেছে। জামের