পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

w)8 বঙ্গদর্শন । [ বৈশাখ। মঞ্জরী শাখা পরিপূর্ণ করিয়া মুখর মৌমাছির দস্থ্যবৃত্তিতে বিব্রত হইয়া উঠিয়াছে। এখানে কৰ্ম্মের ক্ষুদ্রতা, কালের অনিত্যত, জীবনের অনিশ্চয়তা, সুখদুঃখের চাঞ্চল্য—এই সমস্ত কথা আলোচনা করিবার নহে। নিজের সমস্ত ক্ষুদ্রতা ও দীনতার দিকে চাহিয়া চাহিয়া বিলাপ-পরিতাপ করিবার জন্য এখানে আসি নাই। এখানে নুতনতার নিস্তব্ধ সমুদ্রের মধ্যে অবগাহন করিয়া লইব । এখানে কালিও যে নুতন ছিল, আজিও সেই নুতনই রহিয়াছে, কেবল আজ প্রভাতে আমাদের চিন্তাকীটজীর্ণ জীবনযাত্রার অতি ক্ষুদ্র প্রাচীনত্বটাকে ক্ষণকালের জন্ত সরাইয়া দিয়া সেই যুগযুগান্তরের অবসানহীন নবীনতার, দিকে দৃষ্টিপাত করিবার অবসর লইয়াছি। আমাদের ক্লান্তজীবনে যখন নুতনত্ব খুজি,তখন ক্রমাগত বৈচিত্র্য এবং উত্তেজনার আশ্রয় লইয়া থাকি। সেই অবিশ্রাম চাঞ্চল্য আমাদিগকে কেবলি নবতর ক্লাস্তি ও জরীর দিকেই অগ্রসর করিয়া দেয়। বৈচিত্র্যের খণ্ডখণ্ড ক্ষুদ্রক্ষুদ্র নুতনত্বকে মুহূর্তে মুহূর্তে গ্রহণ ও বর্জন করিয়৷ সেই আবর্জনার মধ্যে অন্তঃকরণকে কবর দেওয়া হয় । আজ চিরনূতনের রহস্ত এই প্রান্তরবাসিনী প্রকৃতির কাছে শিক্ষা করিয়া লইব । অধুনা আমাদের কাছে কৰ্ম্মের গৌরব অত্যন্ত বেশি। হাতের কাছে হৌক—দূরে হেীকৃ, দিনে হৌক —দিনের অবসানে হৌক, কৰ্ম্ম করিতে হইবে। কি করি, কি করি,— কোথায় মরিতে হইবে—কোথায় আত্মবিসর্জন করিতে হইবে, ইহাই অশাস্তচিত্ত্বে আমরা খুজিতেছি। যুরোপে লাগাম-পয় অবস্থায় মরা একটা গৌরবের কথা। কাজ, অকাজ, অকারণ কাজ, যে উপায়েই হৌকৃ, জীবনের শেষ নিমেষপাত পৰ্য্যন্ত ছুটাছুটি করিয়া— মাতামাতি করিয়া মরিতে হইবে ! এই কৰ্ম্মনাগরদোলার ঘূর্ণিনেশা যখন একএকট। জাতিকে পাইয়৷ বসে, তখন পৃথিবীতে আর শান্তি থাকে না। তখন, দুর্গম হিমালয়শিখরে যে লোমশছাগ এতকাল নিরুদ্বেগে জীবন বহন করিয়া আসিতেছে, তাহার অকস্মাৎ শিকারীর গুলিতে প্রাণত্যাগ করিতে থাকে। বিশ্বস্তচিত্ত সীল এবং পেঙ্গুয়িন পক্ষী এতকাল জনশূন্ত তুষার-মরুর মধ্যে নিৰ্ব্বিরোধে প্রাণধারণ করিবার স্বথটুকু ভোগ করিয়া আসিতেছিল,—অকলঙ্ক শুভ্রনীহার হঠাৎ সেই নিরীহ প্রাণীদের রক্তে রঞ্জিত হইয় উঠে। কোথা হইতে বণিকের কামান শিল্পনিপুণ প্রাচীন চীনের কণ্ঠের মধ্যে অহিফেনের পিগু বর্ষণ করিতে থাকে,— এবং আফ্রিকার নিভৃত অরণ্যসমাচ্ছন্ন কৃষ্ণত্ব সভ্যতার বজে বিদীর্ণ হইয়া আৰ্ত্তস্বরে প্রাণত্যাগ করে। - t এখানে আশ্রমে নির্জন প্রকৃতির মধ্যে স্তব্ধ হইয়া বসিলে অস্তরের মধ্যে স্পষ্ট উপলব্ধি হয় যে, হওয়াটাই জগতের চরম আদর্শ, করাটা নহে। প্রকৃতিতে কৰ্ম্মের সীমা নাই, কিন্তু সেই কৰ্ম্মটাকে অন্তরালে রাখিয়া সে আপনাকে হওয়ার মধ্যে প্রকাশ করে। প্রকৃতির মুখের দিকে যখনি চাই, দেখি, সে অক্লিষ্ট—অক্লান্ত, যেন সে কাহার নিমন্ত্রণে সাজগোজ করিয়া বিস্তীর্ণ নীলা