পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

وان " বঙ্গদর্শন । [ বৈশাখ । ংযমের দ্বারা, বিশ্বাসের দ্বারা, ধ্যানের দ্বারা, এই মৃত্যুভয়হীন আত্মসমাহিত শক্তি ভারতবর্ষের মুখ শ্ৰীতে মৃত্নতা এবং মজ্জার মধ্যে কাঠিন্ত, লোকব্যবহারে কোমলতা এবং স্বধৰ্ম্মরক্ষায় দৃঢ়ত্ব দান করিয়াছে। শাস্তির মৰ্ম্মগত এই বিপুল শক্তিকে অনুভব করিতে হইবে, স্তব্ধতার আধারভুত এই প্রকাগু কাঠিন্তকে জানিতে হইবে । বহু দুৰ্গতির মধ্যে বহুশতাব্দী ধরিয়া ভারতবর্ষের অন্তনিহিত এই স্থির শক্তিই আমাদিগকে রক্ষণ করিয়া আসিয়াছে, এবং সময়কালে এই দীনহীনবেণী ভূষণহীন বাক্যহীন নিষ্ঠাদ্রঢ়িষ্ঠ শক্তিই জাগ্রত হইয়া সমস্ত ভারতবর্ষের উপরে আপন বরাভয়হস্ত প্রসারিত করিবে,--ইংরাজি কোর্তা, ইংরাজের দোকানের আসবাব, ইংরাজি মাষ্টারের বাকভঙ্গিমার অবিকল নকল কোথাও থাকিবে না, কোন কাজেই লাগিবে না । আমরা আজ যাহাকে অবজ্ঞা করিয়া চাহিয়া দেখিতেছি না,—জানিতে পারিতেছি না, ইংরাজিস্কুলের বাতায়নে বসিয়া যাহার সজ্জtহীন ভাসমাল চোখে পড়িতেই আমরা লাল হইয়া মুখ ফিরাইতেছি, তাহাই সনাতন বৃহৎ ভারতবর্ষ, তাহা আমাদের বাগীদের বিলাতী পটতালে সভায় সভায় নৃত্য করিয়া বেড়ায় না,--ভাহা আমাদের নদীতীরে রুদ্ররেদ্রবিকীর্ণ, বিস্তীর্ণ, ধূসর প্রান্তরের মধ্যে কেীপীনবস্ত্র পরিয়া তৃণাসনে একাকী মৌন বসিয়া আছে। তাহ বলিষ্ঠ ভীষণ, তাহা দারুণ সহিষ্ণু, উপবাস-ব্রতধারী—তাহার কৃশপঞ্জরের অভ্যন্তরে প্রাচীন তপোবনের অমৃত, অশোক, অভয় হোমাগ্নি এখনো জলি তেছে। আর আজিকার দিনের বহু আড়স্বর, আস্ফালন, করতালি, মিথ্যাধাক্য, যাহা আমাদের স্বরচিত, যাহাকে সমস্ত ভারতবর্ষের মধ্যে আমরা একমাত্র সত্য, একমাত্র বৃহৎ বলিয়া মনে করিতেছি, যাহা মুখর, যাহা চঞ্চল, যাহা উদ্বেলিত পশ্চিমসমুদ্রের উদগীর্ণ ফেনরাশি—তাহ, যদি কখনো ঝড় আসে, দশদিকে উড়িয়া অদৃগু হইয়। যাইবে। তখন দেখিব, ঐ অবিচলিতশক্তি সন্ন্যাসীর দীপ্তচক্ষু দুর্যোগের মধ্যে জলিতেছে তাহার পিঙ্গল জটাজুট ঝঞ্চার মধ্যে কম্পিত হইতেছে ;—যখন ঝড়ের গর্জনে অতিবিশুদ্ধ উচ্চারণের ইংরাজি বক্তৃতা আর শুনা যাইবে ন, তখন ঐ সন্ন্যাসীর কঠিন দক্ষিণবাহুর লৌহবলয়ের সঙ্গে তাহার লৌহদণ্ডের ঘর্ষণঝঙ্কার সমস্ত মেঘমন্দ্রের উপরে শদিত হইয়া উঠিবে। এই সঙ্গহীন নিভৃতবাসী ভারতবর্ষকে আমরা জানিব, যাহা স্তব্ধ—তাহাকে উপেক্ষা করিব না, যাহা মেীন— তাহাকে অবিশ্বাস করিব না,— যাহা বিদেশের বিপুল বিলাসসামগ্রীকে ক্ৰক্ষেপের দ্বারা অবজ্ঞা করে, তাহাকে দরিদ্র বলিয়া উপেক্ষা করিব ন ; করজোড়ে তাহার সম্মুখে আসিয়া উপবেশন করিব, এবং নিঃশবে তাহার পদধূলি মাথায় তুলিয়া স্তব্ধভাবে গৃহে আসিয়া চিন্ত৷ করিব । আজি নববর্ষে এই শূন্ত প্রাস্তরের মধ্যে ভারতবর্ষের আর একটি ভাব আমরা হৃদয়ের মধ্যে গ্রহণ করিব। তাহা ভারতবর্ষের একাকিত্ব। এই একাকিত্বের অধিকার বৃহৎ অধিকার। ইহা উপার্জন করিতে হয় । ইহা লাভ করা, রক্ষা করা দুরূহ। পিতামহ