পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম সংখ্যা ৮] নববর্ষ। C) গণ এই একাকিত্ব ভারতবর্ষকে দান করিয়া গেছেন। "মহাভারত-রামায়ণের দ্যায় ইহা আমাদের জাতীয় সম্পত্তি । . & e. সকল দেশেই একজন অচেনা বিদেশী পখিক অপূৰ্ব্ব বেশভূষায় আসিয়া উপস্থিত হইলে, স্থানীয় লোকের কৌতুহল যেন উন্মত্ত হইয় উঠে—তাহাকে ঘিরিয়া, তাহাকে প্রশ্ন করিয়া, আঘাত করিয়া, সন্দেহ করিয়া বিত্ৰত করিয়া তোলে। ভারতবাসী অতি সহজে তাহার প্রতি দৃষ্টিপাত করে-তাহার দ্বারা আহত হয় না এবং তাহাকে আঘাত করে না । চৈনিক পরিব্রাজক ফাহিয়ান, হিয়োন্‌থ সাং যেমন অনায়াসে আত্মীয়ের দ্যায় ভারত পরিভ্রমণ করিয়া গিয়াছিলেন, যুরোপে কখনো সেরূপ পারিতেন না। ধৰ্ম্মের ঐক্য বাহিরে পরিদৃশুমান নহে,— যেখানে ভাষা, আকৃতি, বেশভূষা, সমস্তই স্বতন্ত্র,সেখানে কৌতুহলের নিষ্ঠুর আক্রমণকে পদে পদে অতিক্রম করিয়া চলা অসাধ্য। কিন্তু ভারতবর্ষীয় একাকী আত্মসমাহিত —সে নিজের চারিদিকে একটি চিরস্থায়ী নির্জনতা কুন করিয়া চলে—সেইজন্য কেহ তাহার একেবারে গায়ের উপর আসিয়া পড়ে না । অপরিচিত বিদেশী তাহার পাশ্ব দিয়া চলিয়া যাইবার যথেষ্ট স্থান পায় । যাহারা সৰ্ব্বদাই ভিড় করিয়া, দল বাধিয়া, রাস্ত। জুড়িয়া বসিয়া থাকে,তাহাদিগকে আঘাত না করিয়া এবং তাঁহাদের কাছ হইতে আঘাত नl offश्च। नूडन লোকের চলিবার সম্ভাবন নাই। তাহাকে সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়া, সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া, তবে এক-প অগ্রসর হইতে হয়। কিন্তু ভারতবর্ষীয় যেখানে থাকে, সেখানে কোন বাধা রচনা করে না—তাহার স্থানের টানাটানি নাই— তাহার একাকিত্বের অবকাশ কেহ কাড়িয়া লইতে পারে না। গ্রীকৃ হউক, আরব হউকৃ, চৈন হউকৃ, সে জঙ্গলের হ্যায় কাহাকেও আটক করে নী,বনস্পতির ন্তায় নিজের তলদেশে চারিদিকে অবাধ স্থান রাখিয়া দেয়— অtশ্রয় লইলে ছায়া দেয়, চলিয়া গেলে কোন কথা বলে না । এই একাকিত্বের মহত্ত্ব যাহার চিত্ত আকর্ষণ করে না, সে ভারতবর্ষকে ঠিকমত চিনিতে পরিবে না। বহুশতাব্দী ধরিয়া প্রবল বিদেশী উন্মত্ত বরাহের স্তায় ভারতবর্ষকে এক প্রান্ত হইতে আর এক প্রান্ত পর্যন্ত দস্তদ্বারা বুিদীর্ণ করিয়া ফিরিয়াছিল, তখনো ভারতবর্ষ আপন বিস্তীর্ণ একাকিত্বদ্বারা পরিরক্ষিত ছিল—কেহই তাহার মৰ্ম্মস্থানে আঘাত করিতে পারে নাই । ভারতবর্ষ যুদ্ধ-বিরোধ না করিয়াও নিজেকে নিজের মধ্যে অতি সহজে স্বতন্ত্র করিয়া রাখিতে জানে—সেজন্ত এ পর্য্যন্ত অস্ত্রধারী প্রহরীর প্রয়োজন হয় নাই। কৰ্ণ যেরূপ সহজ কবচ লইয়া জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন, ভারতবর্ষীয় প্রকৃতি সেইরূপ একটি সহজ বেষ্টনের দ্বারা আবৃত-সৰ্ব্বপ্রকায় বিরোধবিপ্লবের মধ্যেও একটি দুর্ভেদ্য শান্তি তাহার সঙ্গে সঙ্গে অচলা হইয়া ফিরে—তাই সে ভাঙিয়া পড়ে না, মিশিয়া যায় না, কেহ তাহাকে গ্রাস করিতে পারে না—সে উন্মত্ত ভিড়ের মধ্যেও একাকী বিরাজ করে। যুরোপ ভোগে একাকী, কৰ্ম্মে দলবদ্ধ । ভারতবর্ষ তাহার বিপরীত। ভারতবর্ষ ভাগ