পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

g বঙ্গদর্শন । [ ২য় বর্ষ, অগ্রহায়ণ । নিবিষ্ট করা। রেলগাড়িতে চক্ষু মুদিত করিয়া যে কাশ্মীর দেখিয়াছিলাম, তাহাও কাশ্মীর, এবং তাহার কিছুদিন পরে চক্ষু মেলিয়া যে কাশ্মীর দেখিলাম, তাহাও কাশ্মীর; দুই কাশ্মীরের মধ্যে প্রভেদ এই যে, ভাব-জগতের সে-যে কাশ্মীর, তাহ আমার আত্মশক্তিরই ব্যাপার ; পক্ষান্তরে, সত্য-জগতের এ-যে কাশ্মীর, ইছ সাক্ষাৎ ঐশী শক্তির ব্যাপার। . কাশ্মীর-দর্শন যেমন দুইরূপ— ( ১ ) তাব-জগতের কাশ্মীর-দর্শন এবং (২) সত্য-জগতের কাশ্মীর-দর্শন ; আত্মজ্ঞানও তেমনি দুইরূপ—( ১ ) ভাব-জগতের আত্মজ্ঞান এবং (২) সত্য জগতের আত্মজ্ঞান। পুনশ্চ, ভাব-জগতের কাশ্মীরদর্শনে যেমন আত্মশক্তির প্রাধান্ত এবং সত্য-জগতের কাশ্মীর-দর্শনে যেমন ঐশী শক্তির প্রাধান্ত প্রকাশ পায় ; ভাবজগতের আত্মজ্ঞানে তেমনি আত্মশক্তির প্রাধান্ত এবং সত্য-জগতের আত্মজ্ঞানে তেমনি ঐশী শক্তির প্রাধান্ত প্রকাশ পায়। প্রথমে, ভাব-জগতের আত্মজ্ঞানের সাধন-পদ্ধতি কিরূপ, তাহ পর্য্যালোচনা করিয়া দেখা যা’ক্‌ ! ( এটা যেন মনে থাকে যে, দুই পদ্ধতিরই সাধনীয় কাৰ্য্য একই ; কি ? না, জ্ঞাতাকে জ্ঞেয়স্থানে আনয়নপুৰ্ব্বক জ্ঞাতৃজ্ঞেয়ের একীকরণ । ) পাতঞ্জলের যোগশাস্ত্রে যেরূপ ধারণাধ্যানের প্রণালী-পদ্ধতি উপদিষ্ট হইয়াছে, তদনুসারে প্রথমে চিদাকাশের কোনো একটি বিন্দু-পরিমিত জ্ঞেয়স্থানে মনের লক্ষ্য নিবদ্ধ কর। তাহার পরে পড়া মুখস্থ করিবার সময় বালক যেমন একষ্ট শব্দ পুনঃ পুন উচ্চারণ করে, অথবা জপ করিবার সময় যেমন ভক্ত বৈষ্ণব বা শাক্ত একই বীজমন্ত্র পুনঃপুন উচ্চারণ করেন, তেমনি সেই লক্ষ্য বিন্দুটিতে মনকে পুনঃপুন সন্নিবিষ্ট করিবে—যেন সেখান হইতে মন অন্য কোনো স্তানে সরিয়া পলাইতে অবসর না পায়। দুই হ্রস্ব ই ক্রমাগত উচ্চারণ করিতে থাকিলে ক্রমে যেমন দুই ই মিলিয়া এক দীর্ঘ ঈ হইয়া দাড়ায়, এবং ই ই ই ই ক্রমাগত উচ্চারণ করিতে থাকিলে ক্রমে যেমন দুই দীর্ঘ-ঈ মিলিয়া এক মহাদীর্ঘ ঈ হইয়া দাড়ায়, তেমনি সেই লক্ষ্য বিন্দুটিতে মন ক্রমাগত পরিচালিত হইতে থাকিলে ক্রমে মনের খণ্ড খণ্ড প্রযত্ন একতানে মিলিত হইয়া নিরবচ্ছিন্ন ধ্যান-প্রবাহে পরিণত হইবে । তাহার পরে ধ্যানের সেই একটান স্রোত লক্ষ্য-বিন্দুটির প্রতি এরূপ একাগ্রতা সহকারে আনন্তমানসে প্রধাবিত করিবে—যেন লক্ষ্য-বিন্দুটি ছাড়। অপর কোনো কিছুই জ্ঞেয়স্থানে তিলমাত্রও অধিকার না পায় । তাহা হইলে সমস্ত জানিবার বস্তু, এবং সেই সঙ্গে জ্ঞাত আপনি, সেই লক্ষ্য-বিন্দুটিতে কেন্দ্রীভূত হইয়া যাইবে ; তাহাতে দাড়াইবে এই যে, আত্মা জ্ঞাতৃস্থানে যেরূপ এক অপরিবর্তনীয় সত্যরূপে অধিষ্ঠান করিতেছেন, জ্ঞেয়স্থানে সেইরূপ এক অপরিবর্তনীয় সত্যরূপে প্রকাশ পাইতেছেন। পরিবর্তন কাহাকে বলে ? একটি হইতে আরেকটিতে যাওয়ার নাম পরিবর্তন। কাজেই, যুদি এরূপ হয় যে, জ্ঞানের সন্নিধানে একটি বস্তু ছাড়া দ্বিতীয় কোনো বস্তুই প্রকাশ পাইতেছে