পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৫৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দশম সংখ্যা । ] ধৰ্ম্মের সরল।আদর্শ। (vවම් আমি একদা একখানি নৌকার একাকী বাস করিতেছিলাম। একদিন সায়াহ্লে একটি মোমের বাতি জালাইয়। পড়িতে পড়িতে অনেক রাত হইয়া গেল । শ্রান্ত হইয়। যেমনি বাতি নিবাইয়। দিলাম, অমনি একমুহূর্বেই পুঠিমার চন্দ্রলোক চারিদিকের মুক্ত বাতায়ন দিয়া আমার কক্ষ পরিপূর্ণ করিয়া দিল। আমার স্বহস্তজালিত একটিমাত্র ক্ষুদ্র বাতি এই আকাশপরিপ্লবী অজস্র আলোককে আমার নিকট হইতে অগোচর করিয়া রাখিয়াছিল। এই অপরিমেয় জ্যোতিঃসম্পদ লাভ করিবার জন্য আমাকে আর-কিছুই করিতে হয় নাই, কেবল সেই বাতিটি এক ফুৎকারে নিবাইয়া দিতে হইয়াছিল । তাহার পরে কি পাইলাম ! বাতির মত কোন নাড়িবার জিনিষ পাই নাই, সিন্ধুকে ভরিবার জিনিষ পাই নাই—পাইয়াছিলাম আলোক, আনন্দ, সৌন্দৰ্য্য, শান্তি। যাহাকে সরাইয়াছিলাম, তাহার চেয়ে অনেক বেশি পাইয়াছিলাম— অথচ উভয়কে পাইবার পদ্ধতি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। ব্ৰহ্মকে পাইবার জন্য সোনা পাইবার মত চেষ্টা না করিয়া আলোক পাইবার মত চেষ্টা করিতে হয়। সোনা পাইবার মত চেষ্টা করিতে গেলে নানা বিরোধ-বিদ্বেষ বাধা-বিপত্তির প্রাচুর্ভাব হয়, আর, আলোক পাইবার মত চেষ্টা করিলে সমস্ত সহজ, সরল হইরা যায় । আমরা জানি বা না জানি, ব্রহ্মের সহিত আমাদের যে নিত্যসম্বন্ধ আছে, সেই সম্বন্ধের মধ্যে নিজের চিত্তকে উদ্বোধিত' ক্টরিয়া তোলাই ব্ৰহ্ম প্রাপ্তির সাধনা । ভারতবর্ষে এই উদ্বোধনের যে মন্ত্র ' অাছে, তাহাও অত্যস্ত সরল । তাহা একনিশ্বাসেই উচ্চারিত হয়—তাহ গায়ত্রীমন্ত্র। ওঁ ভুভুবঃ স্বঃ—গায়ত্রীর এই অংশটুকুর নাম ব্যাহৃতি ! ব্যাহৃতিশব্দের অর্থ—চারিদিক্ হইতে আহরণ করিয়া আন । প্রথমত ভূলোক-ভূবলোক-স্বলে কি অর্থাৎ সমস্ত বিশ্বজগৎকে মনের মধ্যে আহরণ করিয়া আনিতে হয়—মনে করিতে হয়, আমি বিশ্বভুবনের অধিবাসী-আমি কোন বিশেষপ্রদেশবাসী নহি—আমি যে রাজ-অট্টালিকার মধ্যে বাসস্থান পাইয়াছি, লোকলো কান্তর তাহার এক-একটি কক্ষ। এই রূপে, যিনি যথার্থ আর্য্য, তিনি অন্তত প্রত্যহ একবার চন্দ্র স্থৰ্য্যগ্রন্থতারকার মাঝখানে নিজেকে দণ্ডায়মান করেন, পৃথিবীকে অতিক্রম করিয়া নিখিল জগতের সহিত আপনার চিরসম্বন্ধ একবার উপলব্ধি করিয়া লন—স্বাস্থ্যকামী যেরূপ রুদ্ধগৃহ ছাড়িয়া প্রত্যুধে একবার উন্মুক্ত মাঠের বায়ু সেবন করিয়া আসেন, সেইরূপ আর্য সাধু দিনের মধ্যে একবার নিখিলের মধ্যে, ভূভু বঃশ্বলোকের মধ্যে নিজের চিত্তকে প্রেরণ কয়েন। তিনি সেই অগণ্যজ্যোতিষ্কখচিত বিশ্বলোকের মাঝখানে দাড়াইয়া কি মন্ত্র উচ্চারণ করেন ?— তৎসবিতুৰ্ব্বরেণ্যং ভর্গে দেবস্ত ধীমহুি— এই বিশ্বপ্রসবিতা দেবতার বরণীয় শক্তি ধ্যান করি । এই বিশ্বলোকের মধ্যে সেই বিশ্বলোকেশ্বরের যে শক্তি প্রত্যক্ষ, তাহাকেই ধ্যান করি । একবার উপলব্ধি করি—বিপুল বিশ্বজগৎ একসঙ্গে এই মুহূর্বে