পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৫৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দশম সংখ্যা । ] বাল্মীকি ও কৃত্তিবাস। ひむ> উপস্থিত। , অতিকায় আসিয়াছেন— “চিন্তী করি মনে মনে বলিছে তখন । শ্ৰীচরণে স্থান দাও কৌশল্যানন্দন ॥ রাবণসন্তান বলে দয়া না করিবে। দয়াময় রামনামে কলঙ্ক রটিবে ॥” অপর একজন বলিতেছেন—“জন্মিয়া ভারতভূমি আমি দুরাচার। করেছি পাতক কত সংখ্যা নাহি তার ॥” অতিকায়ের স্তব শুনিয়া রাম প্রীত হইলেন—“স্তব শুনি তুষ্ট হয়ে কন গদাধর। পরম ধাৰ্ম্মিক তুমি লঙ্কার ভিতর ॥” কিন্তু তরণী সেনই সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ ভক্তিবীর—“অঙ্গে লেখা রামনাম রামের চারিপাশে । তরণীর ভক্তি দেখে কপিগণ হাসে ॥” বানরের দল হইতে নীল আসিয়া পথরোধ করিয়া দাড়াইল, কিন্তু তরণী তাহাকে প্রকৃত বৈষ্ণবোচিত বিনয়ের সহিত অভিবাদন করিলেন—“জোড়হস্তে বলে বিভীষণের নন্দন । পথ ছাড় দেখি গিয়া শ্রীরামলক্ষ্মণ ॥” পাঠক বাঙালীর যুদ্ধক্ষেত্র কিরূপ বস্তু,তাহার নমুনা কোন ইতিহাসেই পাইবেন না, যেমন এইখানে পাইবেন । তার পর তরণী গুণ্ডিচ পার হইয়া প্রভুর শ্ৰীবিগ্ৰহ দর্শন করিলেন, তাহার অঙ্গ কদম্বকোরক বৎ কণ্টকিত হইয়া উঠিল। “রামের সর্বাঙ্গ বীর নেহারিয়া দেখে । ব্ৰহ্মাও এক এক লোমকুপের ভিতর। চরণে তরঙ্গময়ী গঙ্গা ভাগীরথী।” বীরবাহ নুপুর পায়ে দিয়৷ যুদ্ধে যাইতেছেন, কবি ভুলিয়া গিয়াছেন যে, তাহাকে সঙ্কীর্তনে নাচিতে হুইবে না । রামকে দেখিয়া তিনি “রাক্ষসবিনাশকারী ভুবনমোহন ‘বলিয়া অতিপাঠ আরম্ভ করিলেন । /** রাবণ আর জগাই বোধ や হয় একরের ভক্ত, ইঙ্গর অনুতাপ ও ভক্তি কোনটি বেশি প্রশংসনীয়, তাহ ঠিক করা কঠিন। “জোড়হন্তে স্তব করে রাজা দশানন” ইত্যাদি অংশ পাঠ করুন। স্তবস্তুতিপাঠ, চণ্ডীপাঠ ইত্যাদি মূলবছিভূত বিচিত্র কল্পনারাশি এই যুদ্ধকাও অবলম্বন করিয়া বাংলা রামায়ণে স্থান পাইয়াছে। কি উপাদান ভাঙিয়া যে কিরূপ হইয়াছে, তাহা একান্ত বিস্ময়কর। কোথায় আদিকাব্যের যুদ্ধকাও !—যেখানে রাক্ষসগণ অসীম দোদণ্ডপ্রভাবে মহাহবে যুদ্ধ করিয়া প্রাণ দিতেছে এবং ক্রকুটকুটিলমুখে রাবণ শেষ পর্য্যন্ত স্বীয় ভুবনবিজয়ী প্রতাপ ও প্রতিজ্ঞা অক্ষুণ্ণ রাখিতেছেন,অদ্ভুত দ্বৈরথযুদ্ধে রামকে ধ্বস্তবিধ্বস্ত করিয়া দিতেছেন। যে রাবণকে দেখিয়া ভয়ে নদীসকল স্তিমিতগতি ও বৃক্ষপত্র নিষ্কম্প হইয়। যাইত, যাহায় নিকট মরুৎ শঙ্কিত হইয় প্রবাহিত হইত, সেই ঐশ্বৰ্য্যময়, আন্তর তেজের সাক্ষাৎবিগ্ৰহস্বরূপ রাবণের মূৰ্ত্তি যে ভক্তির উপাদান দিয়া নবনীতকোমলভাবে গঠিত হইতে পারে, ইহা কোন কবিশিল্পী বোধ হয় ইতিপূৰ্ব্বে ধারণাও করিতে পারিতেন না । এই কাও হইতে কি অপূৰ্ব্ব ভক্তির কথা প্রচারিত হইয়াছে। এ যেন কণমান ভাঙিয়া ফুলধমুর স্বষ্টি করা হইয়াছে, লৌহদণ্ডকে মঞ্জরিত করিয়৷ সপুষ্প লতিকায় পরিণত করা হইয়াছে । এই কাও অবশু যে অভিধানে অভিহিত হউক, কিন্তু আদিকবির নামের সঙ্গে ইহাকে সংশ্লিষ্ট করা সঙ্গত হইবে না। পৃথ্বীর উত্তর কেন্দ্র এবং দক্ষিণ কেন্দ্রেও এত পার্থক্য নাই।