পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৫৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

t(tR এ রামায়ণ ও আদিরামায়ণ, ইছাদের মধ্যে যত প্রভেদ, তাহাতে উভয়কে দুইখানি স্বতন্ত্র বহি বলিয়া গণ্য করিলেও অত্যুক্তি হয় না । বাল্মীকির পরে কৃত্তিবাস,.যে স্থানে প্রকাও রাজপ্রাসাদ ছিল, সেখানে যেন দীনহীন কুটার বাধিয়াছেন। মগধের রাজগৃহের ভগ্ন ইষ্টকস্তুপের পার্শ্বে রাখাল গরু চরাইতেছে, কিন্তু তাহার নামটি এখনও রায়গড় রহিয়াছে। সেই জলাঘাততীব্ৰহাসোগ্রা ফেননিৰ্ম্মলহাসিনী গঙ্গার বর্ণনা মনে পড়ে— কোথাও জলরাশি বেণীকৃত, কোথাও আবৰ্ত্তশোভী, কোথাও তীরব্রুহ বৃক্ষ দ্বারা মালার দ্যায় সমলস্কৃত । কণিকার-প্রতিসংচ্ছন্ন গিরিসামুদেশে তরুরাজি পীতাম্বরপরিহিত নরের স্তায় সুন্দর। চন্দনরঞ্জিত সন্ধ্য ও পদ্মরেণুতে রক্তাঙ্গ চক্রবাক । বাল্মীকিবর্ণিত এই সকল বিচিত্র দৃগু মনে পড়ে। অপ্রমেয় কবিপ্রতিভার বিশাল অনুভূতিতে অপ্রমেয় সমুদ্রের কি ভৈরবমধুর প্রতিবিম্ব পড়িয়াছে । কবি সমুদ্রকল্পনায় আহলাদে ও বিস্ময়ে বিমূঢ় হইয়। গিয়াছেন। “হসস্তমিব ফেনেীঘৈনৃত্যস্তমিব চোৰ্ম্মিভিঃ” প্রভৃতি কথায় সমুদ্রের বর্ণনা আরম্ভ করিয়া শেষে বলিয়াছেন—সমুদ্রের উপমা আকাশ, আকাশের উপমা সমুদ্র,— ইহাদের পরস্পরের আর উপমা নাই—আকাশ সমুদ্রে মিশিরাছে, সমুদ্র আকাশে মিশিয়াছে, সমুদ্রে বীচিমালা, আকাশে মেঘমালা । বাতাহত বিপুলকম্পিত পয়োনিধি, সমুৎপতিত-মেঘ-মেদুর অম্বর, এই উতয়ের সদৃশ বিরাটু দৃশ্য বিশ্বে আর কি আছে। এই বিচিত্র প্রকৃতির বর্ণনা একটিও বঙ্গীয় [ ২য় বর্ষ, মাঘ । g রামায়ণে প্রতিফলিত হয় নাই। মামর আৰ্য্যজাতির বংশধর বলিয়া পরিচয় দিই, কিন্তু বাঙালীর সৌন্দৰ্য্যবুদ্ধির যে কতদূর অধোগতি হইয়াছিল, ইহার দ্বারাই তাহ প্রতিপন্ন হইবে। তবে রামায়ণে গার্হস্থজীবনের যে সুনীতির প্রসঙ্গ আছে, তাহার কয়েকটি লহরী বাঙালী কবিগণ স্বীয় শুক্তিবৎ শক্তির দ্বারা বঙ্গীয় সাহিত্যে প্রবেশ করাইয়া দিয়াছেন। সেই গার্হস্থ্যজীবনের পবিত্র ত্যাগস্বীকার এবং অসামান্ত দুঃখসহিষ্ণুতার পবিত্র কথা যাহা-কিছু আমাদের দীনহীন গৃহে আসিয়াছে, তাহাতেই আমাদের ক্ষুদ্র গৃহ পবিত্র হইয়া গিয়াছে। পুরুষচরিত্রগুলি যতদূরই খৰ্ব্ব ও বিকৃত হউক না কেন, নারীচরিত্রের পবিত্রতা এখনও আমাদের গৃহে সীতাসাবিত্রীর আদর্শবিচ্যুত হয় নাই। এখনও পল্লীতে পল্লীতে অনেক শ্মশানভূমি আছে, যেখানে স্বেচ্ছায় বঙ্গের সতীগণ পতঙ্গের দ্যায় স্বামীর সঙ্গে পুড়িয়া ছাই হইয়াছেন। কৃত্তিবাসের দ্যায় কবিগণ সীতাসাবিত্রীর আদর্শ চক্ষের নিকট ধরিয়া বদি সেইরূপ দুইএকটি সতীচরিত্রগঠনে, ভ্রাতা ও পিতার প্রতি আমুগত্যের আদর্শ প্রদানে কিছুমাত্র সহায়তা করিয়া থাকেন, তবেই যথেষ্ট লাভ মনে করি। বাংলা রামায়ণ পাঠে রামের দ্যায় বিক্রাস্ত হইবার আশা বোধ হয় কেহ পোষণ করেন নাই, কৃত্তিবাসও সেরূপ কোন সুবিধা দেন নাই । কিন্তু গাৰ্হস্থ্যজীবনে কতকটা ত্যাগীকার ও স্ত্রীলোকগণের পক্ষে সতীত্বের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত অমুকুত হইলেই \ রামায়ণের