পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় সংখ্যা । ] নানারূপ আয়োজন আরন্ধ হইয়াছে। কিন্তু তাহাতেও অতিপুরাতন বিলুপ্ত বিবরণ সঙ্কলিত হইবার সম্ভাবনা নাই। তথাপি এই , সকল প্রশস্তি সমালোচনা করিয়া, জনসমাজের শিক্ষা-দীক্ষা ও আচার-ব্যবহারেয় অনেক পুরাতত্ত্ব সংগ্রহ করা সম্ভব বলিয়া বোধ হয়। একালের স্তায় সেকালে আচার-ব্যবহার ও শাসন প্রণালী এত খরবেগে পরিবৰ্ত্তিত হইত না। রাজা বা রাজবংশের পরিবর্তনের সঙ্গে লোকব্যবহার ও শাসনপ্রণালী পরিবৰ্ত্তিত হুইবার প্রয়োজন উপস্থিত হইত না । কেবল ধৰ্ম্মমতের পরিবৰ্ত্তনে সময়ে সময়ে কৰ্ম্মকাণ্ডের পরিবর্তন ও তদনুরূপ লোকব্যবহারের পার্থক্য প্রচলিত হইত ; কিন্তু তাহাতে জনসাধারণের মূল প্রকৃতি সম্পূর্ণরূপে পরিবৰ্ত্তিত হইত ললিয়া বোধ হয় না । বৈদিক মতের প্রাধান্ত প্রতিষ্ঠিত থাকিবার সময়ে অার্য্যোপনিবেশের দিষ্মণ্ডল নিয়ত যজ্ঞধুমে সমাচ্ছন্ন ও মন্ত্রনিনাদে প্রতিধ্বনিত হইত। বেদমন্ত্রের আবৃত্তি ও অর্থবোধের জন্ত অধ্যয়ন ও অধ্যাপন সমাদর লাভ করিত, জনসমাজ দ্বিধা বিভক্ত হইয়। কেহ জ্ঞানালোচনায় কেছু বা শিল্পালোচনায় ভারতবর্ষের গৌরববৰ্দ্ধন করিত । কালক্রমে শাক্যসিংহপ্রবর্তিত বৌদ্ধমত প্রবল হইয়া চৈত্য, বিহার ও সংঘারাম প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিল ; কিন্তু তখনও অধ্যয়ন, অধ্যাপন, জ্ঞান ও শিল্পালোচনা পুৰ্ব্ববৎ প্রচলিত ছিল। জ্ঞানালোচনাই ভারতীয় অধুর্য্যসমাজের প্রকৃতিগত অভিজ্ঞান ;–তাহ সকল যুগেই সমভাবে অভিব্যক্ত ছিল । সে জ্ঞানপিপাসা গৌড়ের পূর্বকাহিনী। فاننا জানিয়া তৃপ্তিলাভ করিত না ; আরও জানিবার জষ্ট তত্বজিজ্ঞাসা করিত। জনসমাজ কেবল অর্থাহরণে অনন্তকৰ্ম্ম হইয়া আধুনিক ইহসৰ্ব্বস্ব সভ্যসমাজের ন্যায় পৃথিবীর ধূলামাটির কলহকোলাহলে আত্মবিস্তৃত হুইত না। লোকোত্তর-সদগতিকামনায় জ্ঞানের সঙ্গে শ্রদ্ধা, শক্তির সঙ্গে ক্ষম, সম্ভোগের সঙ্গে সংযম, আসক্তির সঙ্গে বৈরাগ্য অভ্যাস করিয়া শিক্ষাদীক্ষার স্বল্পাতিস্বল্প বিধিনিষেধের অবতারণায় জীবনগত পুণ্যপিপাসার পরিচয় প্রদান করিত। সুতরাং ধৰ্ম্মমতের পরিবর্তন ও কৰ্ম্মকাণ্ডের পার্থক্যের মধ্যেও প্রকৃতিগত পুণ্যপিপাসা সমভাবে প্রভাব বিস্তার করিত । কি বৈদিকমত, কি বৌদ্ধমত,-সকল মতের মধ্যেই জ্ঞান ও কৰ্ম্মের প্রকৃষ্ট অমুণীলনে লোকোত্তর সদগতিলাভকামনাই পরিস্ফুট। রাজবিধি ও শাসনপ্রণালী এই মূলপ্রকৃতি অক্ষুণ্ণ রাখিয়া লোকশাসনে অগ্রসর হইত। সুতরাং রাজ বা রাজবংশের পরিবর্তনের সঙ্গে জনসাধারণের মূলপ্রকৃতি পরিবৰ্ত্তিত হইত না । যে আদর্শ অতিপুরাকালে ভারতীয় আর্য্যসমাজকে পরিচালিত করিত, সেই আদর্শই নানা শাস্ত্রে, নানা ধৰ্ম্মে, নানা কৰ্ম্মে পুনঃপুন অমুস্থত হইয়া আসিয়াছে। বাহরূপে পার্থক্য স্বচিত হইলেও, প্রকৃতপ্রস্তাবে লোকব্যবহারের মূলপ্রকৃতিতে বিশেষ পার্থক্য প্রবেশ করিতে পারে নাই । যাহা ইতিহাস নহে, তাহাকে ইতিহাস বলিয়া গ্রহণ করিয়া পাশ্চাত্য পণ্ডিতমণ্ডলী ভারতীয় পুরাতত্বের অনেক অপসিদ্ধান্ত প্রচারিত করিয়াছেন। তজন্ত অনেক ঐতি