পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

boe ভাবিল, এখানে থাকিলে পূৰ্ব্ববন্ধুর সহিত ংঘর্ষ কোন-একদিন এমন বীভৎস হইয়া উঠিবে যে, তাহার পর চিরজীবন অমুতাপের কারণ থাকিয়া যাইবে । পরদিন মহেন্দ্র যখন উঠিল, তখন বেলা এগারোটা । উঠিয়াই সন্মুখের টিপাইয়ের উপর ভাহার দৃষ্টি পড়িল। দেখিল, বিনোদিনীর হস্তাক্ষরে বিহারীর নামে এক পত্র পাথরের কাগজচাপ দিয়া চাপা রহিয়াছে। তাড়াতাড়ি তাহা তুলিয়া লইয়া দেখিল, পত্র এখনো খোলা হয় নাই। প্রবাসী বিহারীর জন্য তাহ অপেক্ষা করিয়া আছে। কম্পিতহস্তে মহেন্দ্র তাড়াতাড়ি তাহা খুলিয়া পড়িতে লাগিল। এই চিঠিই বিনোদিনী তাহীদের গ্রাম হইতে বিহারীকে লিখিয়াছিল এবং ইহার কোন জবাব সে পায় নাই । চিঠির প্রত্যেক অক্ষর মহেন্দ্রকে দংশন করিতে লাগিল । বাল্যকাল হইতে বরাবর বিহারী মহেন্দ্রের অন্তরালেই পড়িয়া ছিল । জগতে মেছপ্রেমসম্বন্ধে মহেন্দ্রদেবতার শুষ্ক নিৰ্ম্মাল্যই তাহার ভাগ্যে জুটিত। আজ মহেন্দ্র স্বয়ং প্রার্থী এবং বিহারী বিমুখ, তবু মহেন্দ্রকে ঠেলিয়া বিনোদিনী এই অরসিক বিহারীকেই বরণ করিল ? মহেন্দ্র ও বিনোদিনীর দুইচারিধান চিঠি পাইয়াছে, কিন্তু বিহারীর এ চিঠির কাছে তাহ নিতান্ত কৃত্রিম, তাহা নিৰ্ব্বোধকে ভুলাইবার শূন্ত ছলনা ! নুতন ঠিকানা জানাইবার জন্ত গ্রামের ডাকঘরে মহেন্দ্রকে পাঠাইতে বিনোদিনীর ব্যগ্রতা মহেন্দ্রের মনে পড়িল এবং তাহার কারণ সে বুঝিতে পারিল। বিনোদিনী বঙ্গদর্শন । [ tखाले । ভাহীর সমস্ত মনপ্রাণ দিয়া বিহারীর চিঠির উত্তর পাইবার জন্ঠ পথ চাছিয়া বসিয়া আছে ! পূৰ্ব্বপ্রথামত মনিব না থাকিলেও ভজুবেহার। মহেন্দ্রকে চা এবং বাজার হইতে জলখাবার আনাইয়া খাওয়াইল । মহেন্দ্র স্নান ভুলিয়া গেল। উত্তপ্ত বালুকার উপর দিয়া পথিক যেমন দ্রুতপদে চলে, মহেন্দ্র সেইরূপ ক্ষণে ক্ষণে বিনোদিনীর জালাকর চিঠির উপর দ্রুত চোখ বুলাইতে লাগিল । মহেন্দ্র পণ করিতে লাগিল, বিনোদিনীর সঙ্গে আর কিছুতেই দেখা করিবে না। কিন্তু তাহার মনে হইল, আর দুইএকদিন চিঠির জবাব ন পাইলে বিনোদিনী বিছারীর যাড়ীতে আসিয়া উপস্থিত হইবে এবং তখন সমস্ত অবস্থা জানিতে পারিস্ব সাস্তুনালাভ করিবে । সে সম্ভাবনা তাহার কাছে অসহ বোধ হইল । তখন চিঠিখান পকেটে করিয়া মহেন্দ্র সন্ধ্যার কিছু পূৰ্ব্বে পটলডাঙার বাসায় আসিয়া উপস্থিত হইল । মহেঞ্জের স্নান অবস্থায় বিনোদিনীর মনে দয়া হইল - সে বুঝিতে পারিল, মহেন্দ্ৰ কাল রাত্রি হয় ত পথে পথে অনিদ্রায় যাপন করিয়াছে। জিজ্ঞাসা করিল-—“কাল রাত্রে বাড়ী যাও নাই ?” মহেন্দ্র কহিল—“না।” বিনোদিনী ব্যস্ত হইয়া বলিয়৷ উঠিল, “আজি এখনো তোমার খাওয়া হয়নি ন৷ কি ?”—ললিয়া সেবাপরায়ণা বিনোদিনী তৎক্ষণাৎ আহারের আয়োজন করিতে উদ্যত হুইল ।