পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় সংখ্যা । ] করেন নাই। কারণ লছিমাদেবীর রাজত্বকালে বিদ্যাপতিই রাজত্বনীতির প্রধান উপদেষ্ট ছিলেন এবং সমস্ত প্রধান প্রধান রাজকাৰ্য্যের পরিচালনা ও তত্ত্বাবধান তিনিই করিতেন। সুতরাং তাছার উভয়সঙ্কট হইয়াছিল,—প্রশংসা করিলেও আত্মপ্রশংসা করা হয়, আবার নিজের নিন্দাই ব৷ নিজে কেমন করিয়া করিতে পারেন ; এই বিবেচনাতেই বোধ হয় কবি লছিমাদেবীর বর্ণনায় বিরত হইয়াছেন । ‘কীৰ্ত্তিলতা গ্ৰন্থখানি যদি প্রত্নতত্ত্ববিদ পণ্ডিতগণ অনুসন্ধান করিয়া সংগ্ৰহ করিতে পারেন এবং সংগ্ৰহ করিয়া তাহ মুদ্রিত করেন,তবে তাহা হইতে অনেক ঐতিহাসিক তত্ত্বের উদ্ধার হইতে পারে । পদ্মসিংহের মহিষী রাণী বিশ্বাসদেবী এক জন আদর্শমহিলা ছিলেন । সংস্কৃতশাস্ত্রে ইহার অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল । স্বামীর মৃত্যুর পর ইনি ব্রহ্মচৰ্য্যব্রত অবলম্বন করিয়া অসুক্ষণ ধৰ্ম্মকাৰ্য্যের অনুষ্ঠানেই জীবন ব্যয় করিয়াছিলেন । দীনদরিদ্রের প্রতি ইহার জননীস্নেহ সততই উদ্বুদ্ধ ছিল। ইনি নানাস্থানে স্ববৃহৎ দীর্ঘিকাদি খনন্স করাইয় প্রজাবর্গের জলকষ্ট দূর করিয়াছিলেন। ইহার সে সকল কীৰ্ত্তি এখনও বিদ্যমান আছে। ইহার সাধারণ নাম বিগুলি ছিল। নিজনামে ইনি বিশৌলিনামক গ্রাম স্থাপন করেন । বিদ্যাপতি বিশ্বাসদেবীকে বধুরাণী বলিতেন। ইহার আদেশে বিদ্যাপতি “শৈবসৰ্ব্বস্বসার’নামক একখানি গ্রন্থ রচনা করেন। উক্ত পুস্তকে বিশ্বাসদেবীর সম্বন্ধে এইরূপ লিখিত ७टिष्ट्र 3 বিদ্যাপতি-প্রসঙ্গ । ૧ “যিনি ক্ষীরসমুদ্র হইতে লক্ষ্মীর ন্যায়, গুণযুক্ত ' বিশ্বপ্রখ্যাত বংশে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন ; যিনি মহারাজ পদ্মসিংহের প্রিয়তমা মহিষী ; যিনি ধৰ্ম্মকৰ্ম্মের একমাত্র সীমাস্বরূপিণী ; যিনি পতির সিংহাসনে আরোহণ করিয়া বিশাল মিথিলা শাসন করিতেছেন ; যিনি চরিত্রে অরুন্ধতীর হার ; সেই বিশ্বাসদেবী জয়যুক্ত হউন । যিনি ইন্দ্রের শচীর ন্যায় সমুজ্জলগুণবর্তী; যিনি মহাদেবের গৌরীর ন্তায় ; যিনি কন্দপের রতির ন্যায় স্বভাবমধুরা ; যিনি রামের সীতার ন্যায় ; যিনি বিষ্ণুর লক্ষ্মীর ন্যায় ; র্যাহার নীতি বিশ্ববিখ্যাত ; এতাদৃশী দ্বিজেন্দ্রতনয়া পদ্মসিংহ রাজার পরমা প্রেয়সী। বিশ্বাসদেবী ভূমণ্ডলে রাজত্ব করিতেছেন। ভূমণ্ডলে কত কত দাতা ছিলেন ও অদ্যপি বর্তমান আছেন । কিন্তু আর কেহই বিশ্বাসদেবীর ন্যায় প্রথিতযশা নহেন। যাহার স্বর্ণময়-তুলাপুরুষ-মহাদান প্রভৃতি ংসারে অতুলনীয়। যিনি নিত্য দেবদ্বিজের নিমিত্ত ঐশ্বৰ্য্য দান করিয়া সম্পদের সার্থকতা করেন ; যিনি ধৰ্ম্মশাস্ত্রে অভিজ্ঞ এবং প্রতিদিন চন্দ্রচূড়ের আরাধনায় নিমগ্নচিত্ত ; যিনি স্বয়ং বিদুষী ও বিদ্যাপতিকে আদেশ প্রদান করিয়া এই ‘শৈখসৰ্ব্বস্বসার’গ্ৰন্থ রচনা করাইয়া বিশ্ববিখ্যাত কীৰ্ত্তি লাভ করিতেছেন।” এতদ্ব্যতীত কবি দুর্গাতক্তিতরঙ্গিণী’নামক আরও একখানি স্মৃতিপুস্তক ও প্রণয়ন করিয়াছেন, শুনা যায়। আর কোনও সংস্কৃতপুস্তক এই কবির লেখনী হইতে প্রস্থত হইয়াছিল কি না,