পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় প্রথম খণ্ড.djvu/১২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bペ বঙ্গদর্শন । কথাটা আশাকে হঠাৎ বাজিল ;–তৎক্ষণাৎ চলিয়া যাইবার উপক্রম করিয়া কহিল, “আমি তোমার পড়ার কি বাধা দিয়াছি ?” মহেন্দ্র তাহার হাত ধরিয়া কহিল, “তুমি তাহার কি বুঝিবে ? আমাকে ছাড়িয়া তুমি যত সহজে পড়া করিতে পার, তোমাকে ছাড়িয়া তত সহজে আমি আমার পড়া করিতে পারি না ।” গুরুতর দোষারোপ ! ইহার পরে স্বভাবতই শরতের একপস লার মত একদফা কান্নার স্বষ্টি হয় এবং অনতিকালমধ্যেই কেবল একটি সজল উজ্জ্বলতা রাখিয়া সোহাগের স্বৰ্য্যালোকে তাহা বিলীন হইয়া যায়। শিক্ষক যদি শিক্ষার সৰ্ব্বপ্রধান অন্তরায় হয়, তবে অবল ছাত্রীর সাধ্য কি, বিদ্যারণ্যের মধ্যে পথ করিয়া চলে ? মাঝে মাঝে মাসীমার তীব্র ভৎসনা মনে পড়িয়া চিত্ত বিচলিত হয়—বুঝিতে পারে, লেখাপড় একটা ছুতা-মাত্র ; শাশুড়িকে দেখিলে লজ্জায় মরিয়া যায়। কিন্তু শাশুড়ি তাহাকে কোন কাজ করিতে বলেন না, কোন উপদেশ দেন না ; অনাদিষ্ট হইয়া আশ শাশুড়ির গৃহকার্য্যে সাহায্য করিতে গেলে, তিনি ব্যস্তসমস্ত হইয়া বলেন—“কর কি, কর কি, শোবার ঘরে যাও, তোমার পড়া কামাই যাইতেছে ।” অবশেষে অন্নপূর্ণ। আশাকে কহিলেন, “তোর যা শিক্ষা হইতেছে, সেত দেখিতেছি, এখন মহিন্কেও কি ডাক্তারি দিতে দিবি না ?” শুনিয়া আশা মনকে খুব শক্ত করিল— মহেন্দ্রকে বলিল, “তোমার এগজামিনের [ জ্যৈষ্ঠ পড়া হইতেছে না—আজি হইতে আমি নীচে মাসীমার ঘরে গিয়া থাকিব!” এ বয়সে এত বড় কঠিন সন্ন্যাসত্রত ! শয়নালয় হইতে একেবারে মাসীমার ঘরে আত্মনিৰ্ব্বাসন ! এই কঠোর প্রতিজ্ঞ উচ্চারণ করিতে তাহার চোখের প্রান্তে জল আসিয়া পড়িল, তাহার অবাধ্য ক্ষুদ্র অধর কঁাপিয়া উঠিল এবং কণ্ঠস্বর রুদ্ধপ্রায় হইয়৷ আসিল । মহেন্দ্র কহিল, “তবে তাই চল, কাকীর ঘরেই যাওয়া যাকৃ–কিন্তু তাহা হইলে র্তাহাকে উপরে আমাদের ঘরে আসিতে হইবে।” আশা এত বড় উদার গম্ভীর প্রস্তাবে পরিহাস প্রাপ্ত হইয়া রাগ করিল। মহেন্দ্র কহিল—“তার চেয়ে তুমি স্বয়ং দিনরাত্রি আমাকে চোখে চোখে রাখিয়া পাহারা দাও, দেখ আমি এগজামিনের পড়া মুখস্ত করি কি না!” অতি সহজেই সেই কথা স্থির হইল । চোখে চোখে পাহারার কার্য্য কিরূপ ভাবে নিৰ্ব্বাহ হইত, তাহার বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া অনাবশ্বক—কেবল এইটুকু বলি লেই যথেষ্ট হইবে যে, সে বৎসর মহেন্দ পরীক্ষায় ফেল করিল এবং চারুপাঠেয় বিস্তারিত বর্ণনা-সত্ত্বেও পুরুভুজসম্বন্ধে আশার অনতিজ্ঞতা দূর হইল না ! এইরূপ অপূৰ্ব্ব পঠন-পাঠন-ব্যাপার যে সম্পূর্ণ নিৰ্ব্বিঘ্নে সম্পন্ন হইয়াছিল, তাহ বলিতে পারি না। বিহারী মাঝে মাঝে আসিয়া অত্যন্ত গোল বাধাইয়া দিত। “মছিন্‌ দা,মহিন্‌ দা” করিয়াসে পাড়া মাথায়