পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় প্রথম খণ্ড.djvu/১৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয়-সংখ্যা । ] ম। যে তাহার স্বখের অন্তরায়, ইহাই প্রমাণ হইবে। কাজ কি !” আজকাল দিনের বেলা মহেন্দ্র ডাকিয়া পাঠাইলে, বধু যাইতে ইতস্তত করিত— কিন্তু রাজলক্ষ্মী ভৎসনা করিয়া বলিতেন, “মহীন ডাকিতেছে, সে বুঝি আর কানে তুলিতে নাই ? বেণী আদর পাইলে শেষকালে এমনি ঘটিয়া থাকে ! যাও, তোমার আর তরকারীতে হাত দিতে হইবে না !” আবার সেই শ্লেট, পেন্সিল চারুপাঠ লইয়া মিথ্য খেলা ! ভালবাসার অমূলক অভিযোগ লইয়া পরস্পরকে অপরাধী করা ! উভয়ের মধ্যে কাহার প্রেমের ওজন বেশী, স্থা। লষ্টয়। বিনা যুক্তিমূলে তুমুল তর্কবিতর্ক । বর্ষার দিনকে রাত্রি কর; এবং জোৎস্নাবা একে দিন করিয়! তোলা । শ্রন্থি এবং অবসাদকে গায়ের জোরে দূর করিয়া দে ওয়! : পরম্প কে এমনি করিয়া ম ভাগ করা যে, সঙ্গ যখন অসাড়চিত্তে আনন্দ দিতেছে না, তখনে৷ ক্ষণকালের জন্ত মিলনপাশ হইতে মুক্তি ভয়াবহ মনে হয়—সম্ভোগমুখ ভস্মাচ্ছন্ন, অথচ কৰ্ম্মান্তরে যাইতে ও পা ওঠে না । ভাগমুখের এই ভয়ঙ্কর অভিশাপ যে, সুখ অধিকদিন থাকে না, কিন্তু বন্ধন দুচ্ছেদ্য হইয় উঠে । এমন সময় বিনোদিনী একদিন আসিয়া আপার গলা জড়াইয়া ধরিয়া কহিল—“ভাই, তোমার সৌভাগ্য চিরকাল অক্ষয় হোক, কিন্তু আমি দুঃখিনী বলিয়া কি আমার দিকে একবার তাকাইতে নাই!” আত্মীয়গৃহে বাল্যকাল হইতে পরের গত লালিত হইয়াছিল বলিয়া, লোকসাধা চোখের বালি । $3) রণের নিকট আশার একপ্রকার আন্তরিক কুষ্ঠিতভাব ছিল। ভয় হইত, পাছে কেহ প্রত্যাখ্যান করে । বিনোদিনী যখন তাহার যোড়ী-ভুরু ও তীক্ষ্ণদৃষ্টি, তাহার নিখুৎ মুখ ও নিটোল যৌবন লইয়া উপস্থিত হইল, তখন আশ অগ্রসর হইয় তাহার পরিচয় লইতে সাহস করিল না ! আশা দেখিল, শাশুড়ি রাজলক্ষ্মীর নিকট বিনোদিনীর কোন প্রকার সঙ্কোচ নাই । রাজলক্ষ্মী ও যেন আশাকে বিশেষ করিয়া দেখাইয়া দেখাইয়া বিনোদিনীকে বহুমান দিতেছেন,—সময়ে অসময়ে আশাকে বিশেষ করিয়া শুনাইয়; শুনাক্টর। বিনোদনীর প্রশংসাবাক্যে উচ্ছসিত হইয় উঠতেছেন। আশ। দেখিল, বিনোদিনী সৰ্ব্ব প্রকার গৃহকৰ্ম্মে মুনিপুণ,—প্রভুত্ব যেন তাহার পক্ষে নিতান্ত সহজ স্বভাৰসিদ্ধ,—দাসদাসৗদিগকে কৰ্ম্মে নিয়োগ করিতে, ভংসনা করিতে ও আদেশ করিতে সে লেশমাত্র কুষ্ঠিত নহে । এই সমস্ত দেখিয়া আশা বিনোদিনীর কাছে নিজেকে নিতান্ত ক্ষুদ্র মনে করিল। সেই সৰ্ব্বগু৭শালিনী বিনোদিনী যখন অগ্রসর হইয়া আশার প্রণয় প্রার্থনা করিল, তখন সঙ্কোচেম বাধায় ঠেকিয়াই বালিকার আনন্দ আরো চারগুণ উছলিয়া পড়িল । যাদুকরের মায়াতরুর.মত তাহাদের প্রণয়বীজ একদিনেই অঙ্কুরিত, পল্লবিত ও পুষ্পিত হইয়া উঠিল। o আশা কহিল, “এস তাই, তোমার সঙ্গে একটা কিছু পাতাই!” বিনোদিনী হাসিয়া কহিল—“কি পাতাইবে ?” -