পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় প্রথম খণ্ড.djvu/১৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

X(ło বঙ্গদর্শন। [ শ্রাবণ । যায় যে, অধ্যাপকের মতে জড়ের জীবনধৰ্ম্ম আছে, অবৈজ্ঞানিক শ্রোতাদের মনে এইরূপ সংস্কার জন্মিয়াছে। জীবমাত্রই যে সচেতন, এ কথা মনে আনিবার প্রয়োজন নাই। অন্তত এখনো তাছার প্রমাণ হয় নাই। উদ্ভিদের চেতনা আছে কি না, কেহ বলিতে পারে না, কিন্তু তাহার জীবন আছে, এ কথা সকলেই জানে । লৌহদণ্ড পড়িয়া গেলে তাহার বেদনাবোধ হয়, এ কথা কেহ বলে না ; কিন্তু সে যে আঘাত পায়, এ কথাও কেহ বলিত না । অর্থাৎ সজীব পদার্থ আছাড় খাইলে তাহাতে আঘাতের যেরূপ লক্ষণ প্রকাশ পায়, ধাতুপদার্থেও সেইরূপ লক্ষণ দেখা দেয়, ইহা এান ছিল না। আচাৰ্য জগদীশ পরীক্ষা দ্বারা তাহাই প্রকাশ করিয়াছেন। সাধারণ শ্রোতার কথা উপরে লিখিলাম। এক্ষণে বিজ্ঞানৰিদ বিশেষজ্ঞ কি বলেন, তাহা আলোচনা করিলে বিষয়টার আভাস পাওয়া যাইবে। তড়িৎ-তত্ত্ব-সম্বন্ধে বিখ্যাত ংরাজী পত্র ইলেক্ট শুানে অধ্যাপক বস্থর বক্তৃতার যে মৰ্ম্ম প্রকাশ করিয়াছেন, আমরা তাহারই সার সংগ্ৰহ করিয়া দিতেছি । সজীব মাংসপেশিকে যদি চিম্টি কাটা যায় বা তাহাতে মোচড় বা চাপ দেওয়া যায়, তবে তাহা লম্বীয় ছোট হইয়া চওড়ার দিকে ফুলিয়া উঠে। চাপ উঠাইয়া লইলে মাংসপেশী আবার প্রকৃতিস্থ হয় । বিশেষ যন্ত্রের দ্বারা মাংসপেশীর এই বিকৃতি ও প্রকৃতির উত্থানপতন-রেখা অাকিয়া লওয়া যায়। যদি মাংসপেশীতে থাকিয়া থাকিয়া চাপ পড়ে, তবে তাহার তরঙ্গরেখা ( curve ) করাতের মত দস্তুর হইয়া অঙ্কিত হয়। যদি এই চাপ অত্যন্ত ঘন ঘন হইতে থাকে, তবে অবশেষে এমন একটি অবস্থা আসে, যখন মাংসপেশী নিরস্তুর সঙ্কুচিত হইয়া ধনুষ্টঙ্কারের আক্ষেপ উৎপন্ন করে । অতিরিক্ত ঠাণ্ড বা গরমে মাংসপেশী আড়ষ্ট হইয়া যায়, তখন আঘাতে তাহার সাড়া পাওয়া যায় না এবং প্রকৃতিস্থ হইতেও বিলম্ব ঘটে। আযার বিশেষ মাত্রার উত্তাপে মাংসপেশীর সাড় সৰ্ব্বাপেক্ষা বাড়িয়া উঠে। এই উত্তাপের মাত্রা ভিন্ন মাংসপেশীর পক্ষে ভিন্নরূপ । - দ্রব্যগুণে মাংসপেশীর সাড় বাড়ে কমে। উত্তেজক পদার্থে সাড় প্রবল হইয়া উঠে এবং প্রকৃতিস্থতাও শীঘ্র ফিরিয়া আনে। অবসাদক পদার্থে বিপরীত ফল হয় এবং ধরে এই সাড়-শক্তি একেবারে নষ্ট করিয়া ফেলে। ইহাও দেখা গিয়াছে, কোন কোন দ্রব্য মাত্রাবিশেষে উত্তেজনা ও অন্যমাত্রার অবসাদ আনয়ন করে । সজীব মাংসপেশীকে ছাড়িয়া যদি সজীব স্বায়ুকে লইয়া পরীক্ষা করা যায়, তবে তাহাতেও এইরূপ পরে পরে সাড় ও প্রকৃতিলাভ দেখা যায়। কিন্তু স্নায়ুতে এই সাড়ার প্রকাশ অন্যপ্রকার। ঘা লাগিলে স্নায়ুর আহত বা উত্তেজিত অংশ হইতে সুস্থ অংশ পৰ্য্যন্ত একটি বিদ্যুৎপ্রবাহের স্বষ্টি হয়। পুনঃপুন আঘাত, শীতাতপের মাত্রাধিক্য, এবং উত্তেজক বা অবসাদক দ্রব্যদ্বারা স্নায়ুতে যে ক্রিয়া ও ক্রিয়াশাস্তি উপস্থিত হয়, যন্ত্রবিশেষের দ্বারা তাহার রেখাচিত্র লওয়া হইয়াছে ।