পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় প্রথম খণ্ড.djvu/১৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তিন কথায় বলে, “তিন শত্রু দিতে নাই।” কিন্তু এমনি আমাদের পোড়াকপাল যে, ভারতের ভাগ্যদেবতা জীবজ্জাগ্ৰং তিন তিন জন বৈরী আমাদের স্বন্ধে চাপাইয়া দিয়াছেন । র্তাহীদের প্রকোপে আমাদের জাতীয় জীবনলীলার শেষ পাল! সমাসন্ন প্রায় । যেমন ত্র্যহস্পর্শের তিথিগুলি একে একে ভাল, কিন্তু সংস্পর্শবশতঃ গড়ে মন্দ হইয়া দাঁড়ায়, তেমনি তাহারা দেশকালভেদে নিজে নিজে ভাল হইলেও সম্মেলন-সংঘর্ষ-হেতু মারাত্মক হইরা পড়িয়াছেন। তার কারা ? প্রথম।—বৃথাভিমানী হিন্দু-হিন্দু-রবনিৰ্ঘোষকারী গোড়ার দল। র্তাহাদের নিকটে সনাতনে ও নূতনে আর্ষে ও অনার্ষে, ভগবদগীতার ও মন্দা-ঘেঁটুর গীতে কোন প্রভেদ নাই। অম্বষ্ট পছন্দে সংস্কৃতভাষায় লেখা হইলেই, তাহাতে যাহাই থাকুক না কেন-আচার, অনাচার, বামাচার—তাহণ বেদ । বেদগাথা যদিও ইহাদের কর্ণকুহরে কখনও প্রবেশ করে নাই, তথাপি ইহার শপথ করিয়া বলিতে পারেন যে, বেদে বাষ্পযান ও ব্যোমযানের কথা উল্লিখিত আছে—নহিলে রেলগাড়ি চড়িয়া তাহার। স্লেচ্ছবিজ্ঞানকে প্রশ্রয় দিতেন না। একজন মহাদেবের নিন্দ করিয়া বলিয়াছিল—“কোন গুণ নাই তার কপালে আগুন।” ভোলানাথ মহেশ ধুতুরার ঘোরে এ নিন্দাবাদকে স্তুতি বলিয়া গ্রহণ করিয়াছিলেন। ‘কোন গুণ নাই” অর্থাৎ শত্ৰ । বেদান্তবেদ্য নিগুণ ব্রহ্ম, আর ‘কপালে আগুন’ ত শিবের বিশেষ বৈভব। গোড়া মহোদয়ের তেমনি স্বদেশগৌরবের নেশায় আমার নিন্দাকে স্তুতি বলিয়া গ্ৰহণ করিলে, আমাকে ধন্ত মনে করিব । তাহার এক কথা জানেন, আর কিছুই জানেন না, শোনেন না । ‘হিন্দু ‘হিন্দু এই তাহাদের বুলি। দর্শনবিজ্ঞানশিল্পবাণিজ্যে হিন্দুজাতি উৎকর্ষের চূড়ায় আরোহণ করিয়াছিল। যুরোপীয়ের তলদেশে বলিয়া গারের জোরে কেবল আস্ফালন করে । হিন্দুর সবই ভাল । শাসও ভাল, খোসা ও ভাল, তণ্ডুলও ভাল, তুষও ভাল। আহ ! গোড়ামির এই ত প্রকৃত লক্ষণ । “সকণ্টক কই মাছ কররে ভক্ষণ । গোড়ামির এই তুমি জানিও লক্ষণ ॥” এখন ইহাদের গলার কাটা বিধিয়া কোন্‌ দিন না প্রাণটা যার । এই গোড়ারাই দেশের গোড়ার শক্র । দ্বিতীয় —ইংরাজিনবিশ হিন্দুনামধারী রামপক্ষিভক্ষীর দল । ইহাদের যে পাঠ পড়াও, সেই পাঠই পড়েন । “রাধাকৃষ্ণ” বলাও, তা-ও বলেন, “কালীকল্পতরু” ভজাও, ভা-ও ভজেন। ইংরাজি সভ্যতার প্রথমাবেগে শ্বেতাঙ্গ গুরুদেবের শিখাইয়াছিলেন যে, হিন্দুর চিরকালই ইষ্টককাষ্ঠ পূজা করিয়া আসিতেছে-ঈশ্বর বলিয়া কোন বস্তু তাহার জানিতও না, জানেও না । আমনি ‘তথাস্ত”