পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় প্রথম খণ্ড.djvu/১৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ-সংখ্যা । ] তিন শত্র । >Q○ বলিয়া হাটুকোটুরূপ চুড়াধড়া পরিধান করিয়া কঁাটাচামচ বাজাইয়া সাহেবী পন্থা তাহারা গ্রহণ করিয়াছিলেন । আবার আীজ সেই শ্বেতাঙ্গদেবের শিখাইয়াছেন যে, হিন্দুর অধ্যাত্মদর্শনের অত্যুচ্চশিখরে উঠিয়াছিলেন, কিন্তু ব্যবহারবিদ্যায় তাহার বড় একটা মন দিতেন না । ধৰ্ম্মমতে হিন্দু হওয়া চাই, কিন্তু যেখানে রাজনীতি, সমাজনীতি, সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতার ব্যাপার, সেখানে যুরোপীয় হওয়াই উচিত। যুরোপীয়ের অধ্যাত্মদর্শনের বড় একটা ধার ধারে না । কিন্তু বিজ্ঞানবাণিজ্যবিদ্যায় তাহারা জগদগুরু। হিন্দুরা জগৎ মিথ্যা এই পরমার্থতত্ত্ব বুঝিয়ুছিল, তাই পার্থিব ব্যাপারে তারা বড় উদাসীন। ইহার প্রমাণ কি ? দেখ আমরা এমনি আধ্যাত্মিক যে লড়াই করি না এবং করিতে আমাদের প্রবৃত্তিও হয় না। আমরা কেমন শাস্ত ও সমাহিত, স্থির, ধীর, অলসগতি! আর যুরোপীয়ের কিছুতেই সস্তুষ্ট নয়—একমাসের পথকে একদিনের করে, সমুদ্রলঙ্ঘন করে, অভেদ্যগিরিকে ভেদ করে—কেবল উদ্যমশীলতা ও ব্যস্ততা ! ভীরুতা ও আলস্য কি আধ্যাত্মিকতার পরিচায়ক নহে ? যেমনি প্রতীচ্য বুধগণ এই কথা প্রচার করিলেন, অমনি ইংরাজি নবিশ ংস্কারকের। তার-স্বরে বলিয়৷ अठिप्शन, “नऊा द5न !” “नऊा वल्लन !!” আমরা ধৰ্ম্মে হিন্দু—অর্থাৎ পরমার্থ বিষয়ে কোন মতামত রাখি না—কিন্তু পার্থিব বিষয়ে আমরা যুরোপকে আদশ করিব । এই ইংরাজিশিক্ষিত সভ্যদলটি যথেচ্ছাচারী-না স্থলচর, না জলচর। উভচর কি ? তৃতীয় — সমম্বয়বাদীর দল। এর জোড়াতাড়া দিয়া একীভূত করেন। আমাদেরও কিছু আছে, ওদেরও কিছু আছে, সকলেরই কিঞ্চিৎ কিঞ্চিৎ আছে । এই বিকীর্ণ *কিঞ্চিৎ'গুলা জড় করিয়া একটা স্তুপ বাধিলে পুর্ণাবয়ব সৰ্ব্বাঙ্গীন সত্য লাভ করা যায়। হিন্দুরা বলে, জগৎ অলীক, ব্ৰহ্মই একমাত্র সত্য বস্তু। আর হারবার্ট স্পেন্সর বলেন, জগৎই একমাত্র সত্য, ব্ৰহ্ম বলিয়া কোন পদার্থ আছে কি না, জানা যায় না । এস, দর্শন ও বিজ্ঞানকে মিলাইয়া দাও এবং পূর্ণসত্য গ্রহণ কর। ব্রহ্ম সৎপদার্থ বটে, কিন্তু একাকী নহে। পাচটা ভূতও সৎ ও তার চিরসঙ্গী। আমরা বড় ধ্যান করিতে ভালবাসি, সদাই স্তিমিতলোচন, আর য়ুরোপীরেরা কেবল দৌড়ঝাপ করে ; এস আমরা ও দৌড়াই, কিন্তু চক্ষু মুদিয়া । হিন্দুর ঈশ্বরপরায়ণ, আর মেচ্ছের সংসারভক্ত ; যদি পূর্ণতা লাভ করিতে চাও, তবে ঈশ্বর ও সংসার, দুই সমানমাত্রায় বজায় রাখ। আমরা কদলীপত্রে ভোজন করি, আর সাহেবের টেবিলে খায় ; এস আমরা টেবিলে কলাপাতা বিছাইয়া খাই । সকলেরই মন রাখা উচিত, কাহাকেও ছোটবড় করা ভাল নয়। দুই জমিদার সমান ঘুষ দেওয়াতে কোন এক ন্যায়বা মুন্সেফ রায় দিয়াছিলেন—এক পক্ষের অৰ্দ্ধেক ডিক্ৰী অদ্ধেক ডিসমিস্, অপর’ পক্ষেরও অৰ্দ্ধেক ডিক্ৰী অৰ্দ্ধেক ডিসমিস্ । পুরাতন সভ্যতা উপহার লইয়া উপস্থিত, নুতনও ভেট পাঠাইয়াছে; এখন কাহাকে ছাড়ি, কাহাকে ফেলি। ছ’জনেরই কিঞ্চিৎ কিঞ্চিৎ লইয়া একটা