পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় প্রথম খণ্ড.djvu/২৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চম-সংখ্যা । ] পক্ষে বুঝিয়া উঠা কঠিন । কিন্তু বুঝা নিতান্ত আবশুক হইয়া পড়িয়াছে । নেশনের লক্ষণসম্বন্ধে রেনার মত বঙ্গদর্শনে সঙ্কলিত হইয়াছে। যিনি অবহিতভাবে উহ! পাঠ করিবেন, তিনিই বুঝিবেন, এক কথায় নেশনের সংজ্ঞা দেওয়া চলে না । রাষ্ট্র আশ্রয় করিয়া নেশন উৎপন্ন হয় ; কিন্তু রাষ্ট্রমাত্রেই নেশন জন্মে না । ইউরোপখণ্ডে রুশিয়া প্রবল প্রতাপ রাষ্ট্র ; কিন্তু রুশীয়জাতিকে নেশন বলা যায় কি না, সন্দেহ । নেশন বলা যার না ; কেন না, রুশিয়ানামক মহারাষ্ট্রের একমাত্র নিয়ন্ত্রী সৰ্ব্বতোমুখী রাজশক্তি। এই রাজশক্তি প্রজাশক্তির একবারে মুখাপেক্ষা করে না । প্রজাশক্তি স্বেচ্ছাপ্রবৃত্ত হইয়। রাজশক্তিকে সমর্থন করে না । যেখানে রাজশক্তিতে ও প্রজাশক্তিতে এরূপ বিচ্ছেদ নাই, সেইখানেই নেশন মূৰ্ত্তিমস্ত অবস্থায় দ গুীয়মান । ইউরোপে fরটিশ, ফরাসী ও জম্মাণ এবং আমেরিকার মিলিতরাষ্ট্রের প্রজাগণ নেশনের উৎকৃষ্ট উদাহরণ । কিন্তু ইউরোপের ইতিহাস আলোচন। করিলে দেখা যায় যে, বহুদিন পূৰ্ব্বে সেখানে ও নেশনের অস্তিত্ব ছিল না । তবে ইউরোপের সমাজক্ষেত্রে বহুদিন পূৰ্ব্বে এমন বীজ উপ্ত হইয়াছিল, যাহা হইতে বিবিধ নেশন অঙ্কুরিত ও প্রবৃদ্ধ হইয়াছে। ইতালীয় নেশন ও জৰ্ম্মাণ নেশন প্রকৃতপক্ষে বিগত উনবিংশ শতাব্দীর সর্বপ্রধান ঐভিহাসিক স্বষ্টি । . ংক্ষেপে নেশনের লক্ষণবিবৃতি চলে রাষ্ট্র ও নেশন। २९$ না ; যদি নিতান্তই সংক্ষেপে বলিতে হয়, তাহা হইলে নেশন অর্থে আমরা সুগঠিত, সংহত, শরীরবদ্ধ মানবসমাজ বুঝিব ; ঐ সমাজ শরীর সর্বদা জাগ্রত ও সচেতন থাকিয় আপনার স্বার্থ অর্থাৎ সাধারণ স্বার্থ রক্ষার জন্য সচেষ্ট্র ; শক্র হইতে আত্মরক্ষণে ও পরের বিরুদ্ধে আত্ম প্রসারে ‘সৰ্ব্বদাই উন্মুখ ; উহার প্রত্যেক অঙ্গ সাধারণ স্বার্থ রক্ষার জন্য একযোগে কাজ করে ; এক মঙ্গে আঘাত দিলে অন্য অঙ্গ হইতে আৰ্ত্তপবনি উদগত হয় ; এবং সমগ্র শরীরের মঙ্গলের জন্য প্রত্যেক অঙ্গ আপনার সঙ্কীর্ণ মঙ্গল পরিহার করিতে কুষ্ঠিত হয় না । সমগ্র নেশনের শক্তিকে রাজশক্তি ও প্রজাশক্তি এই দুই ভাগে বিভক্ত করিলে দেখা যায়, নেশনের রাজশক্তির মুল প্রজাশক্তির ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত, ও প্রজ+ শক্তিকে অবলম্বন করিয়া দণ্ডায়মান । প্রজাশক্তি সৰ্ব্বদ ও সৰ্ব্বত্র রাজশক্তির মাহাত্ম্য অক্ষুঃ রাথিতে যত্নপর । এবং যে প্রজাসজঘ লইয়া নেশনের শরীর, সেই প্রজাসত্তেঘর সৰ্ব্বাঙ্গীণ-মঙ্গল-সাধনার্থই রাজশক্তি বর্তমান। রাজশক্তির অস্তিত্বের অন্য কোন উদ্দেশ্য নাই । গজনীপতি মামুদ যখন সোমনাথমহাদেবের মন্দির . লুণ্ঠন করেন, তখন ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রাদেশিক হিন্দুসমাজের সকলে সেই অত্যাচারকাহিনীর সংবাদ রাখা ও কর্তব্য বোধ করে নাই। মহারাণা প্রতাপসিংহ যখন একাকী সিংহবিক্রমে দিল্লীশ্বরের সহিত যাবজ্জীবন সংগ্রাম করিয়াও