পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় প্রথম খণ্ড.djvu/২৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষষ্ঠ-সংখ্যা। ] সেবায় সাত্বনায়, নিঃস্বার্থ সখীপ্রমে, সে মর্ত্যবাসিনী দেবী !” বিহারী অনেকক্ষণ অন্ধকারে বসিয়া রছিল। অন্ধের গান থামিয়া গেলে, বিহারী সশব্দে পা ফেলিয়া কাশিয়া মহেঞ্জের ঘরের দিকে চলিল । দ্বারের কাছে না যাইতেই ঘোমটা টানিয়া অাশা দ্রুতপদে অন্তঃপুরের দিকে ছুটিয়া গেল । ঘরে ঢুকিতেই বিনোদিনী বলিয়৷ উঠিল—“এ কি বিহারিবাবু? আপনার কি অসুখ করিয়াছে ?” বিহারী । কিছু না ! বিনোদিনী । চোখ দুটা আমন লাল কেন ? বিহারী তাহার উত্তর না দিয়া কহিল— · “বিনোদ-বোঠা’ণ, মহেন্দ্র কোথায় গেল !” বিনোদিনী মুখ গম্ভীর করিয়া কছিল--- “শুনিলাম, হাসপাতালে তাহায় কাজ পড়িয়াছে বলিয়া কলেজের কাছে তিনি বাসা করিয়া আছেন। বিহারিবাবু একটু সরুন, আমি তবে আসি।” অদ্যমনস্ক বিহারী দ্বারের কাছে বিনোদিনীর পথরোধ করিয়া দাড়াইমাছিল। চকিত হইয়া তাড়াতাড়ি পথ ছাড়িয়া দিল । সন্ধ্যার সময় একলা বাহিরের ঘরে বিনোদিনীর সঙ্গে কথাবার্তা লোকের চক্ষে সুদৃশ্য নয়, সে কথা হঠাৎ মনে পড়িল । বিনোদিনী চলিয়া যাইবার সময় বিহারী তাড়াতাড়ি বলিয়া লইল—“বিনোদ-বোঠা’ণ, আশাকে তুমি দেখিয়ো—সে সরলা কাহাকেও আঘাত করিতেও জানে না, নিজেকে আঘাত হইতে বাচাইতেও *ां८ग्न नां ।” চোখের বালি । ২৬৭ বিহারী অন্ধকারে বিনোদিনীর মুখ দেখিতে পাইল না, সে মুখে হিংসার বিদ্যুৎ খেলিতে লাগিল । আজ বিহারীকে দেখিয়াই সে বুঝিয়াছিল যে, আশার জন্য করুণায় তাহার হৃদয় ব্যথিত । বিনোদিনী নিজে কেহই নহে! আশাকে ঢাকিয়া রাখিবার জন্য, আশার পথের কাটা তুলিয়া দিবার জন্য, আশার সমস্ত মুখ সম্পূর্ণ করিবার জন্যই তাহার জন্ম ! ঐযুক্ত মহেন্দ্র বাবু আশাকে বিবাহ করিবেন, সেইজন্য অদৃষ্টের তাড়নায় বিনোদিনীকে বারাসতের বৰ্ব্বর বানরের সহিত বনবাসিনী হইতে হইবে—শ্ৰীযুক্ত বিহারিবাবু সরলা আশার চোখের জল দেখিতে পারেন না, সেইজন্য বিনোদিনীকে তাহার অাচলের প্রান্ত তুলিয়া সৰ্ব্বদা প্রস্তুত হইয়া থাকিতে হইবে। একবার এই মহেন্দ্রকে, এই বিহারীকে, বিনোদিনী তাহার পশ্চাতের ছায়ার সহিত ধূলায় লুষ্ঠিত করিয়া বুঝাইতে চায়, আশাই বা কে আর বিনোদিনীই বা কে,—দু'জনের মধ্যে কত প্রভেদ ! প্রতিকুল-ভাগ্য-বশত বিনোদিনী আপন প্রতিভাকে কোন পুরুষের চিত্তক্ষেত্রে অব্যাহতভাবে জয়ী করিতে না পারিয়া জ্বলন্ত শক্তিশেল উষ্ঠত করিয়া সংহারমূৰ্ত্তি ধরিল ! অত্যন্ত মিষ্টস্বরে বিনোদিনী বিহারীকে বলিয়া গেল—“আপনি নিশ্চিন্ত থাকিবেন বিহারিবাবু! আমার চোখের বালির জন্য ভাবিয়া ভাবিয়া নিজেকে বেশি কষ্ট দিবেন না !” ( २०) অনতিকাল পয়েই মহেন্দ্র তাহার ছাত্রাবাসে চেনা হাতের অক্ষরে একখানি চিঠি পাইল ।