পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় প্রথম খণ্ড.djvu/৩৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অষ্টম-সংখ্যা। ] সঞ্চালিত মুরঞ্জিত সিংহাসনের মধ্যে উজ্জলমধুৱবেশে সজ্জিত যুগলমধুরী নিরীক্ষণ করিয়া তুপ্তিলাভ করেন। প্রবন্ধলেখকের দেশে শ্রাবণে মনসপুজা সাৰ্ব্বজনীন হিন্দু উৎসব। বর্ষাকালে প্রচুর সর্পভয়, তজ্জন্তই সৰ্পমাতা সর্পভূষিতা মনসা শ্রাবণে ভক্তিযুক্ত অৰ্চনা লাভ করেন । শ্রাবণের প্রথম পঞ্চমী হইতে একটি মনসার ডাল বা চারা সংগ্ৰহ করিয়া যথাবিধি পঞ্চোপচারে প্রতি পঞ্চমীতে তাহাতে পূজা করা হয়। ইহার নাম স্থাপন । শ্রাবণের শেষ—সংক্রাস্তিদিনে আসল পুজা । এই পুজায় প্রায় প্রতি বাড়ীতেই চতুভূজা, বিচিত্রনাগসর্পমণ্ডিত, হংস বাহিনী, গৌরী, মনসামূৰ্ত্তি আনয়ন করা হয় । সর্পভীত জানপদ অবস্থানুসারে মনসাপূজার আয়োজনে কিছুমাত্র কৃপণতা প্রকাশ করেন না । পুরোহিতগণ মনসাপুজায় একান্তই গলদঘৰ্ম্ম হইয়া পড়েন ; কেন না, সপঞ্জননীর পূজার-প্রতি যজমানগণের খুব সতর্ক মনোযোগ। পূজা-জপ-হোমাদি কৰ্ম্মে একান্ত তাড়াতাড়ি করিলে যজমানের পুরোহিতের শাস্ত্রজ্ঞান এবং নিষ্ঠার প্রতি অবিশ্বাস স্থাপন করিতে পারে, এই সন্দেহে অনেকসময় মিথ্যা বিলম্ব কয়িয়া অসময় পর্য্যন্তও মনসা-পুজায় তাহাদিগকে ব্যস্ত থাকিতে হয় । ব্ৰাহ্মণগৃহের লক্ষ্মীরা অল্পব্যঞ্জন-পায়সপিষ্টকাদি করিয়া মনসার ভোগ দেন । সকলের অবস্থায় অবশু সকল রকম ঘটিয়া উঠে না। যাই হোক, পুজান্তে অপরাহ্ল হইতে রাত্রি পর্য্যন্ত সমস্ত পাড়ায় পাড়ায় পল্লীপাৰ্ব্বণ ৩৭১ পরম্পরের মধ্যে প্রসাদ পাওয়ার ও প্রসাদ আদান-প্রদানের অভিনয় চলে। ব্ৰাহ্মণবাড়ীতেই প্রসাদার্থীর অধিক ভিড় হয় । পূৰ্ব্বে মনসার প্রভাববিষয়ক বাঙলাপ্রাচীন-পদ্যময় পদ্মপুরাণ পাঠ হইত এবং উহ! জানপদ-নরনারীকে মাসব্যাপী আনন্দে মগ্ন করিয়া রাথিত । শ্রাবণের প্রথম হইতেই পদ্মপুরাণ-পাঠক পাড়ার সমস্ত বালবৃদ্ধতরুণকে সমবেত করিয়া—যে-দিন যেখানে যেমন সুবিধা—বাহিরে, ঘরের বারেণ্ডায় বা বৈঠকখানায় পাটি, চাটাই, শতরঞ্জ বিছাইয়া, খোল-করতালের কলরোলে পাঠ আরম্ভ করিয়া দিতেন । পাঠকের ভক্তি ও শক্তি অনুসারে প্রথমের বন্দনাগীতি হ্রস্ব বা দীর্ঘ হইয়া পড়িত । বন্দনাগীতির পরই একটি ধুয়ার সহিত রাম রাম রাম রাম রাম রাম রাম’ ইত্যাদি বচনপরম্পরা, খোল-করতাল এবং সমবেত কণ্ঠের লিচিত্র অট্টরোলে, পল্লীবাসী সকলে পাঠের সমাচার পরিজ্ঞাত হইতেন । তার পরে ধুয়ার অংশবিশেষ সকলে তাললয়ে মিলাইয়া গান করিতেন, আর সেই রাগিণীর অনুপাতে পাঠক পদ্মপুরাণ পাঠ করিতে থাকিতেন । পদ্মপুরাণপাঠ অনেকটা রামায়ণগানের মত। পাড়ায় পাড়ায় আড়াআড়ি করিয়া পদ্মপুরাণপাঠের স্বর যখন সপ্তমে চড়িয়া উঠিত, আর সকলের কণ্ঠে “রামনামের মালা যার গলে, শমনের ভয় নাই তার কোন কালে” প্রভৃতি ধুম্বার অংশ উচ্চ হইতে উচ্চতর হইতে থাকিত, তখন সেই কোলাহল দেশপ্লাবী বর্ষার জলে প্রতিহত হইয়া কেবল পাড়াকে মুখরিত করিভ না,