পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় প্রথম খণ্ড.djvu/৩৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অষ্টম-সংখ্যা । ] দীপ্তিময় হইয়া উঠিয়াছে। কলকল করিয়া নদী চলিতেছে, শীত-সুগন্ধ মৃদুসমীরণ পৃথিবীতে শাস্তির সমাচার প্রচার করিতেছে, জলে স্থলে, গ্ৰহতারকায়, গগনে পবনে বিকশিত অবিচ্ছিন্ন-উজ্জল শারদ শ্রী নয়নে মনে আনন্দধারা ঢালিয়া দিতেছে ! আশ্বিনের আরম্ভেই গ্রামের সখের দল কবির মহলা আরম্ভ করিয়াছে। মাসিক মাহিয়ানা ধাৰ্য্য করিয়া দুলী একজনও হাজির হইয়াছে। টাকার অনটনে অত আগে যদি দুলী না-ও আসে, থোল বাজাইয়াই মহলার কাজ চলিয়া যায় । কবির মধ্যে টপ্পা, গান, কবি প্রভৃতি নানা শ্রেণীবিভাগ, আর তিন কলি, পাচ কলি প্রভৃতি গানের অঙ্গ-বিভাগ আছে। প্রতিদিন বিকালে ও রাত্রে পৃথকৃ পৃথক্ করির সেই বিচিত্র বিভিন্ন গানের আখড়া চলিতে থাকে। প্রথম হইতেই গানের দল ‘মোহাড়া’ ও ‘খাদ’ দুই দলে বিভক্ত করা হয় । মোহাড়ার প্রধান• গায়ক বড় বড় আর পাচ-ছয়জন সুকণ্ঠ গায়ককে লইয়া গান আরম্ভ করেন ; আর থাদের দলে বাকি বিশ-পচিশতিরিশ জনে দুই-চারি-জন তাললয়জ্ঞের অধীনে ঠিক সমান স্বরে তাহ পাণ্টাইয়া গায় । পৌরাণিক সুরুচি-কুরুচি-সঙ্গত উপাখ্যানের মৰ্ম্ম লইয়াই কবির গান গ্রথিত । মধ্যে মধ্যে অদ্যপ্রকারের বিচিত্র প্রহেলিকাও তাঁহাতে স্থানলাভ করে । সমস্ত গানের ভিতর কতকগুলি জিজ্ঞাসা থাকে । অপর পক্ষ তাহার উত্তর দিতে বাধ্য হয় । পারিলে সে উত্তর নিজে, গাহিয়া দেয় । পল্লীপাৰ্ব্বণ శ్రీaa এদিকে যাহাদের বাড়ীতে দুর্গোৎসব, তাহার একটি শুভদিন দেখাইয়া, যাহার উপর প্রতিমানিৰ্ম্মাণ হইবে, সেই বাশের ব। কাঠের ‘পাটাখানি’ প্রস্তুত করাইলেন । জানপদ বালকবৃন্দ সেই গুস্ক কারুহীন ‘পাটখানি'র ভিতর কল্পনায় কত-কি অনিৰ্ব্বচনীয় সৌন্দৰ্য্য দেখিয়া চক্ষু জুড়াইতে লাগিল । যথাসময়ে একজন সহকারী সঙ্গে প্রতিমানিৰ্ম্মাতা কারিকর আসিল, আর খড়, বাশ, পাট, কাটারী, তাহার কাছে ধরা হইল । তাহার হুকুমমতে বালকেরা ছোট-বড় সরুমোট নানারকমের দড়ি পাকাইতে বসিয়া গেল। কারিকর তখন তাম্রকুটের বিশেষ সমাদর করিয়া প্রথমে ‘পাটাখানি'র উপর বাঁশ পুতিয়া কাঠামো বাধিল, তাহার পর তাহাতে খড় জড়াইয় প্রতিমার আকার প্রস্তুত করিতে লাগিল। দুই তিন দিনে খড়ের কাজ শেষ হইল। আমনি মাটির ডাক্‌ পড়িয়া গেল ; তালতাল অ্যাটাল মাটি বাছিয়া ঠিক করিয়া রাখা হইয়াছে,—সমস্ত কারিকরের কাছে উপস্থিত করা হইল । তখন খড়ের উপরে মাটির প্রতিমা তৈয়ার হইতে লাগিল। ক্রমে একমেটে, একমেটের পর দোমেটে হইয়া গেল। এইরূপে প্রতিমানিৰ্ম্মাণের কার্য্য যতই অগ্রসর হইতে থাকে, সেই উৎসবকুল জনপদমগুলীও দিনে fদনে ততই উৎসুক হইয়া উঠে। মাটি শুষ্ক না হইলে আর রং দেওয়া চলে না ; কাজেই মাঝে দুই-চারি-দিন প্রতিমার কাজ বন্ধ থাকে। সেই বন্ধের সময় শিশুরা বড়ই অধীর হইয় পড়ে। পারিলে তাহারা বোধ হয় মাটির জল চুৰিয়া লইয়া প্রতিমা শুষ্ক করিয়া