পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় প্রথম খণ্ড.djvu/৩৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○デ● বঙ্গদর্শন । [ অগ্রহায়ণ । অল্প-স্বল্প, চওঁীপাঠের ঘট বা মন্ত্রের তেমন আড়ম্বর নাই । কাজেই সে দিন সখের দল সখ, মিটাইয়—কণ্ঠের কওয়ন যথেষ্ট দূর করির, প্রায় আড়াইপ্রহর বেলায় গান সমাপ্ত করেন। উভয় দলের মধ্যে সপ্তমী-অষ্টমীর সঞ্চিত বিবাদের বিষ সেইদিন সম্পূর্ণরূপে উদগীরিত হইয়া উঠে ; পুরাণের উপাখ্যান সেদিন ক্রমশ অভদ্র গালাগালিতে পরিণত হয় । অনেক সময় সেই উন্মত্ত কবির লড়াই এতটা জঘন্ত নীচ কলহের ভাষার অগ্রসর হয় যে, অস্তঃপুরের চিকের অন্তরালবৰ্ত্তী মহিলাশ্রোতৃকুল বাধ্য হইরা স্থানত্যাগ পুৰ্ব্বক পলায়ন করেন। বিশিষ্ট ভদ্র সভাকে তখন অগত্যা উভয়দলের বিবাদমীমাংসা করিয়া দিতে হয় । এই বিবাদমীমাংসাতেই গানের শেষ। ইতরশ্রেণীর লোক গালাগালির পটুতা-অপটুতা লইয়াই জর-পরাজর নিদ্ধারণ করিয়া থাকে। বলা বাহুল্য, তিনদিনের রাত্ৰিজাগরণ ও চীৎকারে গায়কদলের বায়ু এত প্রবল হইরা পড়ে যে, সেই চীৎকারভয় বিকৃত কণ্ঠে মহাকষ্টে গান করিয়াও তাহাদের সখ আর মেটে না । মাধুৰ্য্য, স্বাস্থ্য ও শিষ্টাচার শেষটায় তাহাদের নিকট হইতে যেন বহুদূরে সরিয়া যায়। অপরাহ্লে ভাসান। ভাসানের নামে সকলের প্রাণই নিতাস্ত কাতর-ক্লিষ্ট হইয়া পড়ে। গৃহলক্ষ্মীরা তখন বিচিত্র বাসাচ্ছাদন পরিধান করিয়া ধান্তদুৰ্ব্বাদি লইয়া মায়ের বিদায়সম্ভাষণ করিতে উপস্থিত হন। বিদায়কালে তাহারা কত করুণভাবে সাশ্রনয়নে মেনকার মত একবার মাতৃস্নেহ প্রকাশ করেন, আবার কস্তার মত—দীনহীন দাসীর মত কত করুণ দীনতা-কত কাতরপ্রার্থনা জানাইরা শত স্তুতি-প্ৰণতি সহকারে সকল দেবদেবীর সহিত পৰ্ব্বতনন্দিনীর বিদায়বন্দন করেন । যখন দেবীপ্রতিমা মণ্ডপ হইতে বাহিরে আনীত হইলেন, তখন বিদায়কালীন আরতির বাদ্যভাও ও কীৰ্ত্তনের ধ্বনির সঙ্গে ধূপধুনার সুবাস চতুর্দিকে বিস্রস্ত হইয়া পড়িল । সে বাদ্যধ্বনি, সে কীৰ্ত্তনের রাগিণী, সে ধূপের সৌগন্ধ, সকলের প্রাণে কি-এক করুণ আকুলত জাগাইয়৷ তুলিল। অবশেষে দেবীপ্রতিমা বাহকের স্কন্ধে “থলী’, নদী বা পুষ্করিণীতে নীত হইতে লাগিলেন । শতশত বালক, যুবা, প্রৌঢ়, বৃদ্ধ সঙ্গে চলিল, কীৰ্ত্তন করিতে করিতে কীৰ্ত্তনসম্প্রদারও সঙ্গ লইলেন। তাহার পর সকলে ষথাস্থানে উপস্থিত হইলে, শত লোকের সজল করুণদৃষ্টির সম্মুখে গভীর জলে দেবীপ্রতিমার বিসর্জন হইল। তখন মৰ্ম্মাহত অমুচরগণ কাতরভাবে গান ধরিলেন—“ছেড়ে যেতে বিদরে পরাণ গো অভয়া ! মারে ভাসারে জলে কি লয়ে বঞ্চিব ঘরে, ছেড়ে যেতে বিদরে পরাণ গো অভয়া!” বাস্তবিকই তখন জানপদ-নরনারীর প্রাণ যেন বিদীর্ণ হইতে থাকে। শূন্ত প্রাণ, সাশ্র নয়ন লইয়া সকলে ফিরিয়া আসিয়া যখন শূন্তমগুপের দিকে দৃষ্টিপাত করেন, তখন র্তাহাদের দেহবন্ধনগুলি যেন শিথিল হইয়া পড়ে,—ষথার্থই অস্তরে বাহিরে তখন একটা ব্যাকুল বিরহকাতরতা পরিস্ফুট হইয়া উঠে। সেই দুঃখের অন্ধকারে পুরোহিত