পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় প্রথম খণ্ড.djvu/৪৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8(te বঙ্গদর্শন। [ পৌষ। নব অমুরাগিণী অখিল-সোঁহাগিনী, পঞ্চম-রাগিণী মোহিনীরে । গোবিন্দদাস মহাশয়ের বলিবার অভিপ্রায় এরূপ নহে যে, রাধিকার রাগ সৰ্ব্বদা পঞ্চমেই চড়িয়া আছে। ইহা হইতে স্পষ্ট দেখা যাইতেছে, সঙ্গীতের “রাগিণী” কথাটা ংস্কৃত প্রত্যয়ের দ্বারা তৈরি। “অনুরাগী” কথাটা ও সেইরূপ । পণ্ডিতমশায় বলিবেন, সে যেমনি হউক, এ সমস্তই সংস্কৃত ভাষার ব্যবহার হইতে উৎপন্ন, আমি ও সে কথা স্বীকার করি । প্রমাণ হইয়াছে, একই মূল হইতে “হংস” এবং ইংরাজি “গ্যা গুার” শব্দ উৎপন্ন । কিন্তু তাই বলিয়া “গ্যাণ্ডার” সংস্কৃত “হংস”শব্দের ব্যাকরণগত নিয়ম মানে না, এবং তাহার স্ত্রীলিঙ্গে"গ্যাণ্ডারী”ন হইয়“গৃদ্‌”হয়। ইহাও প্রমাণ হইয়াছে, একই আর্য্যপি তামহ হইতে বপ, বার্ণফ প্রভৃতি যুরোপীয় শান্ধিক ও বাঙালি ব্যাকরণজ্ঞ পণ্ডিত জন্মিয়াছেন, কিন্তু যুরোপীয় পণ্ডিতরা ব্যাকরণকে যে বিজ্ঞানসন্মত ব্যাপকভাবে দেখেন, আমাদের পণ্ডিতরা তাই দেখেন না ; অতএব উৎপত্তি একই হইলে ও ব্যুৎপত্তি ভিন্ন প্রকারের হওয়া অসম্ভব নহে। “ইন্‌”প্রত্যয় হইতে বাংলা “ই”প্রত্যয় উৎপন্ন হইয়াছে বটে, তবু তাহ "ষ্টন্‌”প্রত্যয়ের সমস্ত নিয়ম মানিয়া চলে না,—এইজন্য এই দুটিকে ভিন্ন কোঠায় না ফেলিলে কাজ চালাইবার অসুবিধা হয়। লাঙলের ফলার লোহা হইতে ছুচ তৈরি হইতে পারে, কিন্তু তাই বলিয়া সেই ছুচ দিয়া মাটি চষিবার চেষ্টা করা পাণ্ডিত্য নহে বস্তুত প্রত্যেক ভাষার নিজের একটা ছাঁচ আছে। উপকরণ যেখান হইতেই সে সংগ্রহ কর ক্, নিজের ছাচে ঢালিয়া সে তাহাকে আপনার সুবিধামত করিয়া বানাইয়া লয়। সেই ছাঁচটাই তাহার প্রকৃতিগত, সেই ছাচেই তাছার পরিচয়। উর্দু ভাষায় পারসি আরবি কথা ঢের আছে, কিন্তু সে কেবল আপনার ছাচেই চতুর ভাষাতত্ত্ববিদের কাছে হিন্দীর বৈমাত্র সহোদর বfলয়া ধরা পড়িয়া গেছে । আমাদের বাঙালি কেহ যদি মাথায় হ্যাটু, পায়ে বুটু, গলায় কলার এবং সৰ্ব্বাঙ্গে বিলাতী পোষাক পরেন, তবু তাহার রঙে এবং দেহের ছাচে কুললক্ষণ প্রকাশ হইয় পড়ে। ভাষার সেই প্রকৃতিগত ছাচট বাহির করাই ব্যাকরণকারের কাজ । বাংলায় সংস্কৃতশব্দ ক’টা আছে, তাহার তালিকা করিয়া বাংলাকে চেনা যায় না, কিন্তু কোন বিশেষ ছাচে পড়িয়। সে বিশেষরূপে বাংলা হইয়া উঠি য়াছে, তাহ সংস্কৃত ও অন্ত ভাষার স্লামদানিকে কি ছাচে ঢালিরা আপনার করিয়া লয়, তাহাই নির্ণয় করিবার জন্য বাংলা ব্যাকরণ । সুতরাং ভাষার এই আসল ছাচটি বাহির করিতে গেলে, এখনকার ঘরগড়া কেতাবি ভাবার বাহিরে গিয়া চলিত কথার মধ্যে প্রবেশ করিতে হয় । সে সব কথা গ্রাম্য হইতে পারে, ছাপাখানার কালির ছাপে বঞ্চিত হইতে পারে, সাধু ভাষায় ব্যবহারের অযোগ্য হইতে পারে, তবু ব্যাকরণকারের ব্যবসা · রক্ষা করিতে হইলে, তাহীদের মধ্যেই গতিবিধি রাখিতে ङ्य़ । 橡