পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় প্রথম খণ্ড.djvu/৪৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবম-সংখ্যা । ] “ইন”প্রত্যয়সম্বন্ধে যাহা বলিয়াছি, স্ত্রীলিঙ্গে “ইনী” ও “ঈ” সম্বন্ধেও সেই একই কথা। বাংলায় স্ত্রীলিঙ্গে “ইনি” “ই’ পাওয়৷ যায়, কিন্তু তাহা সংস্কৃত-ব্যাকরণের ছাঁচ মানে না । সে বাঙালী হইয়া আর এক পদার্থ হইয়া গেছে । তাহার চেহারা ও বদল হইয়াছে। রয়ের পরে সে আর মূদ্ধন্য ণ গ্রহণ করে না ( কলমের মুখে করিতে পারে, কিন্তু জিহবাগ্রে করে না )—সংস্কৃত-বিধানমতে সে কোথাও স্ত্রীলিঙ্গে আকার মানে না, এই জন্ত সে অধীনাকে অধীনি বলে । সে যদি নিজেকে সংস্কৃত বলিয়া পরিচয় দিতে ব্যাকুল হইত, তবে “পাঠ” হইতে “পাঠি” হইক না, “বাঘ’ হইতে “বাঘিনি’ হই ত না । কলু হইতে কলুনি, ঘোড়া হইতে ঘুড়ি, পুরুৎ হইতে পুরুৎনি নিম্পন্ন করিতে হইলে, মুগ্ধবোধের স্বত্র টুক্র টুকুর এবং বিদ্যাবাগীশের টীকা আগুন হইয়া উঠিত। পণ্ডিতমশায় বলিবেন, ছিছি ও কথা‘ෂුද්‍රි মুকিঞ্চিৎকর উতাদের সম্বন্ধে কোন বাক্যব্যয় না করাই উচিত। তাঙ্কার উত্তর এই যে, “কম্‌লি নেই ছোড় তা !” পণ্ডিতমশায় ও ঘরের মধ্যে কলুর স্ত্রীকে "কদ্বী” অথবা “তৈলযন্ত্রপরিচালিকা” বলেন ন}, সে স্থলে আমরা কোন ছার! মাকে ম৷ বলিয়া স্বীকার না করিয়া প্রপিতামহীকেই মা বলিতে যা ওয়া দোষের হয়—সেইরূপ বাংলাকে বাংলা না বলিয়া কেবলমাত্র সংস্কৃতকেই যদি বাংলা বলিয়া গণ্য করি, তবে তাহাতে পাণ্ডিত্যপ্রকাশ হইতে পারে, কিন্তু কাণ্ডজ্ঞানের পরিচয় থাকে না। পণ্ডিত বলেন, বাংলা স্ত্রীলিঙ্গশব্দে বাংলা ব্যাকরণ । 86 X তুমি দীর্ঘ ঈ ছাড়িয়া হ্রস্ব ই ধরিলে যে ? আমি বলিব, ছাড়িলাম আর কই ? একতলাতেই যাহার বাস, তাহাকে যদি জিজ্ঞাসা কর, নীচে নামিলে যে, সে বলিবে, নামিলাম আর কই, নীচেই ত আছি । “ঘোটকী”র দীর্ঘ হষ্টতে দাবি আছে ; সে ব্যাকরণের প্রাচীন সনন্দ দেখাইতে পারে,–কিন্তু “ঘুড়ি"র তাঙ্গা নাই। প্রাচীন ভাষা তাহাকে এ অধিকার দেয় নাই, কারণ, তখন তাহার জন্ম হয় নাই,--তাহার পরে জন্মাবধি সে তাহার ইকারের পৈতৃক দীর্ঘতা খোয়াষ্টরা বসিয়াছে। টিপুসুলতানের কোন বংশধর যদি নিজেকে মৈগুরের রাজা বলেন, তবে তাহার পারিযদরা তাহাতে সায় দিতে পারে, কিন্তু রাজত্ব মিলিবে না । হ্রস্ব ইকে জোর করিয়া দীর্ঘ লিখিতে পার, কিন্তু দীর্ঘত্ব মিলিবে না । যেখানে খাস্ বাংলা স্ত্রীলিঙ্গশব্দ, সেখানে ত্বস্ব ইকারের অধিকার, সুতরাং দীর্ঘ ঈর সেখান হইতে ভাসুরের মত দূরে চলিয়া যাওয়াই কর্তবা । পণ্ডিতমশায় বলিবেন, বানানের মধ্যে পূৰ্ব্ব ইতিহাসের চিন্তু বজায় রাখা উচিত । দেখা যাক, “মেছনি” কথাটার মধ্যে পূৰ্ব্ব ইতিহাস কতটা বজায় আছে । ৎ, স এবং যফলা কোথায় গেল ? ময়ে একার কোন্‌ প্রাচীন ব্যবহারের চিহ্ল ? “ন’টা কোথাকার কে ? ওটা কি মৎস্ত্যজীবিনীর “ন’ ? তবে জীবিটা গেল কোথায় ? এমন আরো অনেক প্রশ্ন হইতে পারে। সন্ধুত্তর এই যে, ৎ এবং স বাংলায় ছ হইয়৷ গেছে—এই “ছ”ই ৎ এবং সয়ের ঐতিহাসিক চিত্ব, এই চিন্তু বাংলা "বাছা”শব্দের মধ্যেও