পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় প্রথম খণ্ড.djvu/৫১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতের অধঃপতন । -{ఖాళిళంస్థ43* ভারতবর্ষের একখানিও সম্পূর্ণ ইতিহাস আজ পর্য্যস্ত লিখিত হয় নাই । কতদিনে যে হইবে, তাহ বলা যায় না। জাতীর জীবন বৈজ্ঞানিক-ভাবে দেখা আমাদের প্রকৃতিগত নহে । ইতিবৃত্ত লিখিতে বসিলেই আমরা পুরাণ গড়িয়া ফেলি। কাজে কাজেই পাশ্চাত্য পণ্ডিত ব্যতীত “নাস্তি গতিরদ্যথা।" কিন্তু যে দেবতাদিগের উপর আমাদের ষোল-আনা নির্ভর, তাহার। ভারতবর্ষীর স্বচ্ছ ঐতিহাসিক সভ্যগুলিকে অতিরঞ্জিত করিয়া এক বিপুল প্রমাদচ্ছবি মাকিয় থাকেন। তাছাদেরই বা দোষ কি ? য়ুরোপীয় রাজসিক রঙীন লাল চশমার দ্বার হিন্দুর সত্বশুভ্ৰ কাৰ্যকলাপ ও রীতিনাতি পয্যবেক্ষণ করিলে স্বরূপের পরিবর্তে বৈরূপ্য ই প্রতিভাত হইবে । যতগুলি ভারতবর্ষের ইতিহাস আছে, সকলগুলিই যেন জোড়া-তাড়া-দে ওয়া। অনেক অসম্বদ্ধ ঘটনাবলিকে প্রতীচ্যস্বম্ভাবসুলভ কল্পনাডোরে জোর করিয়৷ কাৰ্য্যকারণভাবে সংযোজিত করা হইরাছে। যখন আমাদের ইতিবৃত্তের এইরূপ দুরবস্থা, তখন ভারতের মধঃপতনবিবরণী ৰথাযথ লিখিয়া উঠা একপ্রকায় শসম্ভব । তবে এই প্রবন্ধে দুই-একটা কথার অবতারণ করা যাইবে, যাহ। ভবিমতে তথ্যনিরূপণকার্য্যে লাগিতে পারে। 银必 য়ুরোপে ষোড়শ শতাব্দীর ধৰ্ম্মবিপ্লবের পর হইতে অনেকের ধারণ ইরাছে যে, পূৰ্ব্বতন মত বা প্রথার বিরুদ্ধে যত সংগ্রাম ঘটয়াছে বা ঘটবে, তাহা সকলই দ্যায্য ও বীরোচিত । ‘বিদ্রোহ’শব্দটি তাহাদিগকে একেবারে মাতোয়ারা করে। এই যুরোপীয় বিদ্রোহিদল বৈদিক ব্রাহ্মণ্যধৰ্ম্মের ঘোর বিরোধা ; ইহাদের দৃষ্টিতে বেদবিপ্লাবী বৌদ্ধমত অত্যন্ত উচ্চ ; কেন না, ইহা পুরাতনকে ভাঙিয়াছে। ক্রমতঙ্গ প্রবণ যুরোপার বিৰেক বেদবিহিত বর্ণধৰ্ম্মকে মানবকুলের বৈরী বলিয়া ঘৃণা করে, বেদান্তের নিগুৰ্ণব্ৰহ্মজ্ঞান ও মায়াবাদকে পরিহাস করে, কিন্তু নাস্তিকবৌদ্ধমার্গকে স্বর্গে তোলে। এই বিদ্রোহবিকৃত দৃষ্টিই আমাদের পুরাতন ইতিহাসে ఇER আরোপ করিয়াছে । ব্রাহ্মণ্যধৰ্ম্মই হিন্দুস্থানের অধঃপতনের মূলকারণ—এই ভ্রমসম্বুল সিদ্ধান্তে পাশ্চাত্য পণ্ডিতের উপনীত হইয়াছেন। তাহাদের মতে বৌদ্ধদিগের অভু্যদয়ে ভারতের অভু্যদয়। বৌদ্ধদিগের আবির্ভাবের পূৰ্ব্বে ভারত কি অন্ধকারময় ছিল না এবং তাছাদিগের তিরোভাবে ভারত কি আবার অজ্ঞানতমিস্রায় আচ্ছাদিত হয় নাই ? ঘটনাগুলির পারম্পর্য্য ঠিক বটে, কিন্তু তাহার কাৰ্য্যকারণগৃঙ্খলায় সম্বদ্ধ নহে।