পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/১১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

مده t৬ষ্ঠ বৰ আৰা। যুরোপীয় সাধনার উপরে একটা সাৰ্ব্বভৌমিক মানবীয় সাধনা, যুরোপের ইতিহাসের বহিভূতে একটা সাধারণ ও সৰ্ব্বজনীন মানবীয় ইতিহাস, ফুরোপীয় সমাজবিজ্ঞানের উদ্ধে ও অতীতে, সমগ্র মানবসমাজের প্রকৃতি ও বিবর্তনের প্রণালীর উপরে প্রতিষ্ঠিত একটা বিশাল বিশ্বব্যাপী সমাজবিজ্ঞান আছে—তাহার দ্বারা বিচার করিলে, তাহার ইঙ্গিতের প্রতি লক্ষ্য করিয়া দেখিলে, ভারতবর্ষে যে অভিনব প্রণালীতে এক শক্তিশালী বহুশাখ বিশ্বনেশনের উৎপত্তি হইতে পারে, এ বিষয়ে আর সন্দেহ থাকে না। ’ আমাদের দেশ এক। আমাদের ধৰ্ম্ম বিভিন্ন হইলেও উদার এবং বহুশতাব্দীকাল একত্র বসবাস করিয়া বহুলপরিমাণে পরস্পরে পরস্পরের ভাব ও আদর্শকে স্বল্পবিস্তর আত্মসাৎ করিয়াছে। আমাদুের কুল বিভিন্ন হইলেও বহুশতাব্দীর একত্র বাসে অশেষপ্রকারের সঙ্করবর্ণের স্বষ্টি হইয়া, বহুলপরিমাণে সৰ্ব্বত্রই কৌলিক প্রভেদের তীব্রতা প্রায় বিলুপ্ত করিয়া দিয়াছে। আমাদের ভাষা বিভিন্ন, কিন্তু তাঁহাতে একপ্রদেশবাসীর সঙ্গে অপরপ্রদেশবাসীর ব্যবসাবাণিজ্যাদির কোনো ব্যাঘাত উৎপন্ন হয় নাই। আর যাহার দেশের অগ্রণী, তাহদের মধ্যে—ৰেমন মুসলমানাধিকারে পারস্ত ও আরবী ভাষার চর্চানিবন্ধন, সেইরূপ আজকাল ইংরেজির বহুলপ্রচলনে—ভাববিনিময়ের একটা প্রকৃষ্ট উপায় প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। অতি অল্প আয়াসেই সাধারণ লোকের মধ্যেও ভাষাবিরোধকে কাৰ্য্যত অতিক্রম কলিতে পারা যায়। এখনি এক তামিল, কানাড়া, মালাবার প্রভৃতি মাত্রাজের দক্ষিণাংশ ব্যতীত, ভারতের প্রায় সৰ্ব্বত্রই মোটামুটি লোকে ভাঙা-হিন্দি বলিতে পারে,— কাজের কথা বুঝিতে পারে। একদিকে যেমন নেশনগঠনের অন্তরায়সকল একেবারে দুলৰ্ভঘ্য নহে, সেইরূপ অন্তদিকে ইংরেজশাসনাধীনে সমগ্র ভারতবর্ষ এমন এক সাধারণ সুখদুঃখের,—এমন এক বিশাল ও জটিল রাষ্ট্ৰীয়স্বার্থের বন্ধনে আবদ্ধ হইয়াছে যে, ইহাতে যদি আমাদের নেশন গড়িয়া না উঠে, তাহা হইলে মানবচরিত্রের ও মানবীয় ইতিহাসের সমুদায় শিক্ষা ও সমুদায় সত্য—মিথ্যা ও নিষ্ফল হইয়া যায়। আমরা যে নেশন হইব, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নাই ; তবে কোন পথে গেলে এ বিষয়ে আগু ফললাভের সম্ভাবনা আছে, তাহা বিচার ও বিবেচনাসাপেক্ষ, সন্দেহ নাই । ঐৰিপিনচন্দ্র পাল ।