পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/১৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় সংখ্যা । ] দুর্ভিক্ষপীড়িত ভারতে । R& লেন ; এবং সেই দ্বীপস্থ পুরাতন প্রাসাদগুলিও দেখাইবার জন্ত নৌকা প্রস্তুত রাখিতে বলিলেন । • আমাদের এই যুগে, পুরাতন জিনিষ সমস্তই লোপ পাইতেছে। সৌভাগ্যের বিষয়, এই ভারতে এখনো এমন কতকগুলি রাজা আছেন, যাহারা থাটি ভারতীয় ধরণের গৃহাদিনিৰ্ম্মাণে প্রবৃত্ত ;—সেইরূপ ধরণের গৃহ, যাহা তাহার পূর্বপুরুষেরা সেই গৌরবান্বিত পুরাকালে উদ্ভাবিত করিয়াছিলেন। একটি চক্রাকৃতি ভূমিখণ্ড অন্তরীপের মত সরোবরের অভিমুখে চলিয়া পিয়াছে। এই ভূমিখণ্ডের উপর, খুব উচ্চদেশে, নূতন প্রাসাদটি প্রতিষ্ঠিত –কতকগুলা শাদাশাদ দালানঘর, কতকগুলা শাদাশাদ চতুষ্কগুহ ;– সমস্তই মাল্যাকৃতি কারুকার্য্যে ভূষিত — শাদাটে পাথর কিংবা মাৰ্ব্বেলের সান বসানো । প্রাসাদটি এরূপভাবে নিৰ্ম্মিত ও সংস্থাপিত যে, সেখান হইতে সরোবরের বিভিন্নভাগ বেশ দৃষ্টিগোচর হয় ; একটা প্রকাণ্ড সোপান সরোবর পর্য্যস্ত নামিয়া গিয়াছে ; তাহার দুই ধারে পাথরের হাতী। সরোবরট অরণুসমাচ্ছন্ন পৰ্ব্বতমালায় পরিবেষ্টিত। প্রাসাদের অভ্যন্তরে,—দেয়ালের গায়ে, কাচ ও চীনেমাটির (mosaic) বিচিত্র নক্স। অমুক ঘরে দেখিবে- শুধু গোলাপেরই শাখাপল্লব ; প্রত্যেক গোলাপটি ২•রকমের বিভিন্ন চীনেমাটির দ্বারা রচিত। আর-এক ঘরে গিয়া দেখিবে-জলের গাছপালা ; পদ্মের গাছ ; সেই সঙ্গেবৈক ও মাছরাঙা পার্থী। এইরূপ বিচিত্র নক্স কাজের ধৈর্য্যশালী কারিকরেরা এখনো সেইখানে রহিয়াছে। উহার ‘মাটির উপর উবু হইয়া বসিয়া, হাজার-হাজার রঙিন টুকুর-কাচ হইতে, পল্লব ও পাঁপড়ি খুদিয়া বাহির করিতেছে। সম্প্রতি একটা ঘর শেষ । হইয়াছে –শেয়াল-সবুজ দেয়ালের গায়ে, বড়-বড় লাল গোলাপের নক্সা ছাড়া সেখানে আর কিছুই নাই । এই ঘরটিতে, প্রাচীনধরণের সাজসজ্জা যেরূপভাবে বিন্যস্ত তাঁহাতে আমাদের দেশে যাহাকে “নুতন শিল্পকলা" বলে, তাহাই মনে করাইয়া দেয় ;---মধ্যস্থলে একটি স্ফটিকের খাট ; দেয়ালে যে প্রকার সবুজ রং—সেই রঙের মশারি ; এবং পদ্মনকৃসাগুলির যেরূপ লাল রং,--সেই রঙের মখমলের গদী। একটি ক্ষুদ্র পুরাতন দেবমন্দির ;–এরূপ জীর্ণ যে, সরোবরের জলে এখনি ধসিয়া পড়িবে বলিয়া মনে হয় । এই মন্দিরের পাদদেশে, একখানা নৌকা আমার জন্য অপেক্ষা করিতেছে । আমি সেই নৌকায় উঠিলাম। মাঝিমাল্লারা আমাকে ক্ষুদ্র দ্বীপটির অভিমুখে লইয়া গেল। একটা জোর-বাতাস উঠিল। প্রতিদিন সন্ধ্যার সময়, এইরূপ বাতাস উঠিয় থাকে। ধূলারাশি ও মৃত্যু বিকীর্ণ করিয়া তেছে ; কিন্তু এই সরোবরে আসিয়া এই বাতাস বেশ শীতল ও বিমল ভাব ধারণ করি য়াছে; এবং আমাদের চারিধারে অতীব ক্ষুদ্র নীল লহরীলীলা উঠাইয়াছে। দুইটি দ্বীপের মধ্যে টেমপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র, সেই দ্বীপের প্রাসাদটি • একশত বৎসরের হইবে ; উহা সুগভীর" সরোবরের মধ্যস্থলে অবস্থিত ; সুতরাং এমনিই ত লোকালয় হইতে বিচ্ছিন্ন,—তাতে আবার প্রাচীরবদ্ধ হওয়ায়,