পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/১৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

See বালকদিগকে বিশাল বিশ্বের মধ্য দিয়া বিশ্বজননীর প্রত্যক্ষলীলাম্পর্শ অনুভব করিতে দাও—তাহা ,তোমার ইন্‌স্পেক্টরের তদন্ত এবং পরীক্ষকের প্রশ্নপত্রিকার চেয়ে যে কত বেশি কাজ করে, তাহ অস্তরে অনুভব কর না বলিয়াই তাহকে নিতান্ত উপেক্ষা করিয়ো না । মন যখন বাড়িতে থাকে, তখন তাহার চারিদিকে একটা বৃহৎ অবকাশ থাকা চাই । বিশ্বপ্রকৃতির মধ্যে সেই অবকাশ বিশালভাবে, বিচিত্রভাবে, সুন্দরভাবে বিরাজমান। কোনোমতে সাড়েনয়টা-দশটার মধ্যে তাড়াতাড়ি অল্প গিলিয়া বিদ্যাশিক্ষার হরিণবাড়ীর মধ্যে হাজিরা দিয়া কখনই ছেলেদের প্রকৃতি সুস্থভাবে বিকাশলাভ করিতে পারে না । শিক্ষাকে দেয়াল দিয়া ঘিরিয়া, গেটু দিয়া রুদ্ধ করিয়া, দরোয়ান দিয়া পাহারা বসাইয়া, শাস্তিদ্বারা কণ্টকিত করিয়া, ঘণ্টাদ্বারা তাড়া দিয়া মানবজীবনের আরম্ভে এ কি নিরানন্দের স্বষ্টি করা হইয়াছে। শিশু যে অ্যালজেব্রা না কবিয়াই, ইতিহাসের তারিখ না মুখস্থ করিয়াই মাতৃগর্ভ হইতে ভূমিষ্ঠ হইয়াছে,সেজন্য সে কি অপরাধী ? তাই সে-হতভাগাদের নিকট হইতে তাহদের আকাশবাতাস, তাহtদের আনন্দ-অবকাশ সমস্ত ক{{ড়য়া-লষ্টয়া শিক্ষাকে সৰ্ব্বপ্রকারেই তাহদের পক্ষে শাস্তি করিয়া তুলিতে হুইবে ? না-জানা হইতে ক্রমে ক্রমে জানিবার আনন্দ পাইবে বলিয়াই কি শিশুরা অশিক্ষিত ইষ্টয় জন্মগ্রহণ করে না ! আমাদের সক্ষমতা ও বৰ্ব্বরতাবশত জ্ঞানশিক্ষা ক যদি আমরা আনন্দজনক করিয়া না তুলিতে পারি, তবু চেষ্টা করিয়া, ইচ্ছা করিয়া, নিতান্ত নিষ্ঠুরতাপূর্বক নিরপরাধ শিশুদের বঙ্গদশন । [ ৬ষ্ঠ বর্ষ, আষাঢ় । বিদ্যাগারকে কেন আমরা কারাগারের আকৃতি দিই? শিশুদের জ্ঞানশিক্ষাকে বিশ্বপ্রকৃতির উদাররমণীয় অবকাশের মধ্য দিয়া উন্মেষিত করিয়া তোলাই বিধাতার অভিপ্রায় ছিল—সেই অভিপ্রায় আমরা যে পরিমাণে ব্যৰ্থ করিতেছি,সেই পরিমাণেই ব্যৱঁহইতেছি, হরিণবাড়ীর প্রাচীর ভাঙিয়া ফেল,-মাতৃগর্ভের দশমাসে পণ্ডিত হইয়া উঠে নাই বলিয়া শিশুদের প্রতি সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান করিয়ে না—তাহাদিগকে দয়া কর । তাই আমি বলিতেছি, শিক্ষার জন্ত এখনো আমাদের বনের প্রয়োজন আছে এবং গুরুগৃহও চাই। বন আমাদের সজীব বাসস্থান এবং গুরু আমাদের সহৃদয় শিক্ষক। এই বনে, এই গুরুগৃহে আজও বালকদিগকে ব্ৰহ্মচৰ্য্যপালন করিয়া শিক্ষা সমাধা করিতে হইবে। কালে আমাদের অবস্থার যতই পরিবর্তন হইয়া থাকৃ, এই শিক্ষানিয়মের উপযোগিতার কিছুমাত্র হ্রাস হয় নাই, কারণ, এ নিয়ম মানবচরিত্রের নিত্যসত্যের উপরে প্রতিষ্ঠিত। অতএব, আদশবিদ্যালয় যদি স্থাপন করিতে হয়, তবে লোকালয় হইতে দূরে নির্জনে মুক্ত আকাশ ও উদার প্রাস্তরে গাছপালার মধ্যে তাহার ব্যবস্থা করা চাই । সেখানে অধ্যাপকগণ নিভৃতে অধ্যয়ন ও অধ্যাপনায় নিযুক্ত থাকিবেন এবং ছাত্রগণ সেই জ্ঞানচর্চার যজ্ঞক্ষেত্রের মধ্যেই বাড়িয় উঠিতে থাকিবে। * যদি সম্ভব হয়, তবে এই বিদ্যালয়ের সঙ্গে খানিকটা ফসলের জমি থাকা আবগুক ;– এই জমি হইতে বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় : আহাৰ্যসংগ্ৰহ হইবে, ছাত্রর চাযের কাজে ।