পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/১৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

$68 আপত্তি আছে। আমি জানি, অনেকের মত এই যে, লেখাপড়া শিখাইবার জন্য ঘর হইতে ছাত্রদিগকে দূরে পাঠানো তাহদের পক্ষে হিতকর নহে । এ সম্বন্ধে প্রথম বক্তব্য কথা এই যে, লেখাপড়া শেখানে বলিতে আমরা আজকাল যাহা বুঝি, তাহার জন্য বাড়ীর গলির কাছে যে-কোনো-একটা সুবিধামত ইস্কুল এবং তাহার সঙ্গে বড়-জোর একটা প্রাইভেট টিউটার রাখিলেই যথেষ্ট। কিন্তু এইরূপ “লেখাপড়-করে-মেই-গাড়ি-ঘোড়া-চড়ে-সেই”শিক্ষার দীনতা ও কার্পণ্য মানবসন্তানের পক্ষে যে অযোগ্য, তাহ আমি এক প্রকার ব্যক্ত করিয়াছি। দ্বিতীয় কথা এই, শিক্ষার জন্য বালকদিগকে ঘর হইতে দূরে পাঠানো উচিত নহে, এ কথা মানিতে পারি, যদি ঘর তেম্নি ঘর হয়। কামার-কুমার-তাতী প্রভৃতি শিল্পিগণ ছেলেদিগকে নিজের কাছে রাখিয়াই মানুষ করে-তাহার কারণ, তাহারা যেটুকু শিক্ষা দিতে চায়, তাহ ঘরে রাখিয়াই ভালরূপে চলিতে পারে। শিক্ষার আদর্শ আর-একটু উন্নত হইলে ইস্কুলে পাঠাইতে হয়—তখন এ কথা কেহ বলে না যে, বাপমায়ের কাছে শেখানোই সৰ্ব্বাপেক্ষা শ্রেয় ; কেন না, নানা কারণে তাহ সম্ভবপর হয় না। শিক্ষার আদর্শকে আরো যদি উচ্চে তুলিতে পারি, যদি কেবল পরীক্ষাফললোলুপ পুথির শিক্ষার দিকেই নাঙ্গ তাকাইয়া থাকি, যদি সৰ্ব্বাঙ্গীণ মকুণ্যত্বের ভিত্তিস্থাপনকেই শিক্ষার লক্ষ্য বলিয়া স্থির করি, তবে তাহার ব্যবস্থা ঘরে এবং ইস্কুলে করা সম্ভবই হয় না। বঙ্গদর্শন । [ ৬ষ্ঠ বর্ষ, আষাঢ় । সংসারে কেহ বা বণিক, কেহ বা উকিল, কেহ বা ধনী জমিদার, কেহ বা আর-কিছু। ইহাদের প্রত্যেকের ঘরের রকমসকম, আবহাওয়া স্বতন্ত্র। ইহাদের ঘরে ছেলেরা শিশুকাল হইতে বিশেষ-একটা ছাপ পাইতে থাকে। জীবনযাত্রার বৈচিত্র্যে ਬਾਂ আপনি যে একটা বিশেষত্ব ঘটে, তাহ অনিবাৰ্য্য এবং এইরূপে এক একটা ব্যবসায়ের বিশেষ আকারপ্রকার লইয়া মানুষ একএকটা কোঠায় বিভক্ত হইয়া যায়, কিন্তু বালকেরা ংসারক্ষেত্রে প্রবেশ করিবার পূৰ্ব্বে অজ্ঞাতসারে তাহদের অভিভাবকদের ছাচে তৈরি হইতে থাকা তাহীদের পক্ষে কল্যাণকর নহে । উদাহরণস্বরূপ দেখা যাক ধনীর ছেলে। ধনীর ঘরে ছেলে জন্মগ্রহণ করে বটে, কিন্তু ধনীর ছেলে বলিয়া বিশেষ-একটা-কিছু হইয়া কেহ জন্মায় না। ধনীর ছেলে এবং দরিদ্রের ছেলে কোনো প্রভেদ লইয়া আসে না। জন্মের পরদিন হইতে মানুষ সেই প্রলেদ নিজের হাতে তৈরি করিয়া তুলিতে থাকে । এমন অবস্থায় বাপমায়ের উচিত ছিল, গোড়ায় সাধারণ মনুষ্যত্বে পাকা করিয়া তাহার পরে আবশুকমুতে ছেলেকে ধনীর সন্তান করিয়া তোলা। কিন্তু তাহ ঘটে না, সে সম্পূর্ণরূপে মানবসন্তান হইতে শিখিবার পূৰ্ব্বেই ধনীর সন্তান হইয়া উঠে— ইহাতে দুর্লভ মানবজন্মের অনেকটাই তাহার অদৃষ্টি বাদ পড়িয়া যায়-জীবনধারণের অনেক . রসাস্বাদের ক্ষমতাই তাহার বিলুপ্ত হয় ৷ ”