পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/২৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఇby:R বঙ্গদর্শন । [ ৬ষ্ঠ বর্ষ, আশ্বিন। বলিল, “এ কথা যদি প্রকাশ হয়, তাহা হইলে তোকে খুন করিয়া ফেলিব।” বিস্ময় এবং ভীতিবিমূঢ়া বালিকা কোন উত্তর করিতে পারিল না। উদ্ভাস্তদৃষ্টিতে এদিক-ওদিক চাহিয়া একদিকে প্রাণপণে ছুটিয়া পালাইল । وی দুইঘণ্টার মধ্যে গ্রামে হুলুস্কুল পড়িয়া গেল। বিহারিগোপের পুত্রবধু হীরিয়া প্রতিবেশিকন্ত বুধিয়াকে অলঙ্কারলোভে হত্যা করিয়া কোথায় পলায়ন করিয়াছে । বলা বাহুল্য, প্রাণভয়ভীতা প্রৌঢ় হরিয়ার পলায়নে আপনার দুষ্কৃতি প্রচারিত হইবার আশঙ্কায় ব্যাকুল হইয়। আগেভাগেই এই মিথ্যাকথা প্রচার করিয়া দিয়াছিল। এরূপ একটা সঙীন কথা যে বায়ুবেগে থানায় গিয়া পৌছিবে, তাহাতে আর বৈচিত্র্য কি ? কাজেই আহারাদি সমাপন করিয়াই সুসজ্জিত এবং সানুচর দারোগাসাহেব রঘুনাথপুরে দর্শন দিলেন । হীরিয়ার পিত্ৰালয় রঘুনাথপুর হইতে দুইক্রোশ দূরে। সন্ধান পাইয়া দারোগাসাহেব প্রথমেই সেখানে একবার খোজ লইয়া আসা আবগুক মনে করিলেন। নিজদোষাবিষ্কারভীতা প্রৌঢ় আগে-অ’ গ পথ দেখাইয়া চলিল। ইহার ফলে বিস্মরবিমুঢ়া নিরপরাধা ইরিয়া সন্ধ্যার সময় হত্যাপরাধে অভিযুক্ত হইয়া থানায় আনীত হইল। পুলিয়ূের অত্যাচারভয়ভীত খণ্ডরখাশুড়ী বিপন্না বধুর কোনই সংবাদ লইল না। অষ্টাদশবৰ্ষীয় স্বামী গুরুদয়াল কিন্তু স্থির থাকিতে পারিল না। তাহার প্রাণের ভিতর হুহু করিতেছিল। সন্ধ্যার পর গোপনে সে থানায় গিয়া দারোগীসাহেবের কাছে প্রার্থনা করিল, একবার মুহুর্তের জন্য হরিয়ার সঙ্গে তাহাকে সাক্ষাৎ করিতে দেওয়া হউক। তার পর অনেক সাধ্যসাধনায় থানার “অপসর” অনুমতি দিলে বাষ্পরুদ্ধকণ্ঠ গুরুদয়াল অনেক কণ্ঠে স্ত্রীকে সুধাইল, “এমন কাজ কেন করিলে হরিয়া ?” উদ্ভান্তদৃষ্টি হীরিয়া বড় বড় চক্ষু মেলিয়া বলিল, “আমি কি করিয়াছি ?” গুরুদয়াল অফুটস্বরে কহিল, “এই খুন!” অশ্রুপূর্ণলোচনা বালিকা বলিল, “সে ত তোমার মাসী ।” গুরুদয়াল শিহরিয়া खेठिल । তখন সেই সরল বালিকা একে একে যাহা জানিত, সকলি বলিল। গুরুদয়াল মাথায় দিয়া বসিয়া পড়িল । স্ত্রীর নির্দোষিতায় তাহার কিছুমাত্র সন্দেহ রহিল ন} | সেই সময় কন্‌ষ্টেবল স্থাকিল, “বস, চল যা ও ” তখন বিদীৰ্য্যমাণ বক্ষ দুই হাতে চাপিয়াধরিয়া অশ্রুসিক্তমুখে হতভাগ্য যুবক নৈশ অন্ধকারে গৃহে ফিরিয়া আসিল । আকাশে নক্ষত্রপুঞ্জ চাহিয়া-চাহিয়া তাহাকে যেন বলিতেছিল “হীরিয়া নির্দোষী, হরিয়া নির্দোষী ” গুরুদয়াল বাড়ী আসিয়া . একবার জননীকে এ কথা বলিবে মনে করিছিল, কিন্তু মাতৃস্বসার ভীম পরাক্রম এবং দুৰ্জ্জয় রসন স্মরণ করিয়া কোনক্রমেই সাহসসঞ্চয়, করিতে পারিল না । হাত