পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৩১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՓԵ Եթ বঙ্গদর্শন । [ ৬ষ্ঠ বর্ষ, আশ্বিন। দ্বারা, স্নেহমমতার দ্বারা, প্রিয়বাক্যের দ্বারা পিতামাতার প্রীতি জন্মায় ও অবশেষে তাহtদিগকে পরিপালন করে। পিতামাতার মৃত্যুতে অত্বাস্ত কাতর হয়, রোদন করে এবং শ্রদ্ধাসহকারে তদীয় পারলৌকিক কাৰ্য্যসকল নিৰ্ব্বাহ করে। পরে তদুদেশে গয়াযাত্রাদি করিয়া থাকে। এইরূপ এইরূপ বিভিন্নধৰ্ম্মাক্রান্ত বা বিভিন্ধস্বভাব পুত্র জন্মগ্রহণ করে বলিয়। ঋষিরা সেই সেই পুত্রের সেই সেই সংজ্ঞা প্রচার করিয়াছেন। অর্থাৎ লক্ষণ অনুসারে কেহ ঋণ-পুত্র, কেহ দ্যাসাপহার-পুত্র, কেহ বা রিপুপুত্র, এইরূপ নির্দেশভাজন হয়। ঋণ, স্বাস ( গচ্ছিত ), রিপু, এই তিন শব্দের অর্থের সহিত উহাদের পূর্বসম্বন্ধ থাকা অনুমিত হয়। পূৰ্ব্বসম্বন্ধ অর্থাৎ পূৰ্ব্বজন্মকৃত ঋণ, দ্যাস, শত্রুত, এই তিনের সম্বন্ধ। গীতার— “যং যং বাপি স্মরন তালং ত্যজতন্তে কলেবরম্। ডং তমেবৈতি কৌন্তেয় সদা তদ্ভাবভাবিত: ॥” এই শ্লোকে প্রকাশিত অন্তকালের নিয়ম ঐ কল্পনার, ঐ অনুমানের মূল। অন্তকালের নিয়ম, এ কথার ব্যাখ্য' এই যে, মৃত্যুকালে জীবের অস্তরে যে ভাব প্রবল হয়, যথোচিতকালে সেই ভাবের পুনর্জন্ম হয়, তাহার অন্যথা হয় না। যাহার প্রদত্ত ঋণ প্রত্যাবৰ্ত্তিত করিতে না পারিয়া অনুতপ্ত হইয়া মরে, যাহার স্থিত অপহরণের প্রতীকার করিতে ত ক্ষম হইয়া উপায় ভাবিতে ভাবিতে মরে, যাহারা- শক্রতার প্রতিশোধচিস্তায় কাতর হইয়া মরে, ঐ তাপ বিস্তৃত হয় না, তাহারাই সেই সেই ব্যক্তির পুত্নাদিরূপে উৎপন্ন হয় ও বিবিধপ্রকারে কষ্টপ্রদান করে। ঋষিদিগের এই অভিপ্রায় নিম্নলিখিত শ্লোকে নিবন্ধ আছে— “খণং যস্য গৃহীত্বা যঃ প্রযাতি মরশং কিল। ঋণদস্তত্বতে ভূত্ব ভ্রাত বা সমতাদৃশঃ ” “যেন চাপহীতে স্বাসস্তস্য গেহে ন সংশয়: । “ষ্ঠাসস্বামী স পুত্রোইভুৎ ফাসাপহারকস্ত চ " “পূর্ববৈরামুবন্ধেন স্বতে ভূত্ব দিনে দিনে । রিপুবৎ বৰ্ত্ততে তস্য ক্ররকারী ন সংশয়: " শ্লোকতিনটির অর্থ সুস্পষ্ট, অনুবাদবিন্যাস নিম্প্রয়োজন । এই বিষয়ের উপর স্ত্রীলোকদিগের মধ্যে অনেক প্রকারের জল্পকথা শুনা যায়। যে সকল পুত্র ঋণলক্ষণান্বিত, তাহাদিগের কাৰ্য্যকলাপে ব্যথিত হইয়া স্ত্রীলোকেরা বলিয়া থাকে, এ ছেলে ধার শোধ লইতে আসিয়াছে । যাহার ন্যাসলক্ষণান্বিত, তাহদের জন্য দুঃখিত হইয়া বলে, আমি জন্মান্তরে না জানি ইহার কত অপকারই করিয়াছিলাম । রিপুলক্ষণান্বিত সন্তানকেও বলিয়া থাকে, আমি উদরে শত্র ধারণ করিয়াছি। হয় আর মরিয়া যায়, এরূপ অল্পায়ু সস্তানের উপর স্ত্রীলোকেরা সন্দেহবতী হইয়া বলে, বুঝি আবার সেইটা আসিয়াছে। সন্দেহের জন্য ইহারা মৃতশিশুর অঙ্গে কোন-একটা চিহ্ল করিয়া দেয়। কেহ কর্ণচ্ছেদ, কেহ বা অঙ্গুলিচ্ছেদ, কেহ বা কুদ্দালের দ্বারা শরীরের কোন-একটা স্থান ব্রণিত করিয়া দেয়। শুনা গিয়াছে এবং দেথাও গিয়াছে, ঐরূপ চিন্তু করিয়া দেওয়ার পর যে সস্তান হইয়ছে, সেই সন্তান সেইরূপ চিহ্লবিশিষ্ট । এরূপ কেন হয় ?—কারণ কি ? —তাহ আমরা বুঝি না। দার্শনিক পণ্ডিতেরা অহমান করেন ও বলেন,