পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৩৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

EG (o यछझम्झँन । [ ৬ষ্ঠ বর্ষ, কাৰ্ত্তিক। চরণের অভু্যদয়ের কিছুদিন পরে দেখিতে. দেখিতে তাহার রুচি পরিবর্তিত হইয়া গেল । বালক.যখন দুইপ্রহরের রৌদ্রে আমবাগানের উদ্দেশে ছুটিত, সেও তাহার সঙ্গে ছুটিয়া একটুতে হাফাইয়া উঠিত। সে যখন অশ্বখ বা বট গাছে উঠিয়া পক্ষিকুলায়লুণ্ঠনের অভিসন্ধি করিত, বালিকা তখন ছায়ায় দাড়াইয়া ছবির মত সেই দিকে একদৃষ্টে চাহিয়া থাকিত। স্বানের সময় রাধাচরণ যখন অবগাহনার্থ স্ত্রীপুরুষদের বারণ অগ্রাহ, করিয়া সীতার কাটিত এবং সখীর জন্ত কুমুদ ও কমলের বনে ফুল তুলিত, তখন বালিকা দীর্ঘিকার তীরে কি ঘাটের সোপানে বসিয়া-বসিয়া আকর্ণবিশ্রান্ত চক্ষুদুইটি তাঁহারই পানে স্থাপিত করিত। নিজে সাভার শিখিয় তেমনি করিয়া ফুল তুলিতে তাহারও সাধ হইত, কিন্তু সাহসে অতটা কুলাইত না । এইরূপে দুইজনের ভিতর প্রণয়সঞ্চার হইল । চারিবছরের বালিকা প্রাতঃস্মরণীয় ৰিস্তাসাগরমহাশয়কে বলিয়াছিল, “তুই আমায় ভালবাসিবি না ? আমি বাসিব।” সাধারণত লোককে তুমি বুঝাইতে পারিবে না যে, কচি ছেলেমেয়ের হৃদয় হইতে এমন কথা বাহির হইতে পারে। কিন্তু ইহাই সত্যকথা । সেই যে বালকবালিঘ fর প্রণয় বা ভালবাসা, তাহাই স্নেহপ্রবণ মনুষ্যস্থদয়কন্দরের সুবিমল উৎসধারা,—তাহাতে যৌবনের আবিলতা নাই । কবি যথার্থই বলিয়াছেন, শিশুদের মত ভালবাসিতৃে কেহ জানে না। - পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ । রাধাচরণের মত চঞ্চল প্রকৃতির ছেলে সচরাচর সজিনী বালিকার স্নেহে ভুলিয়া বরাবর গৃহ প্রাঙ্গণে অথবা ক্ষুদ্র বনকুঞ্জগ্রামের আমকাননে আবদ্ধ থাকিতে জন্মগ্রহণ করে না । একটু বড় হইলে ক্রমশ সে পাঠশালায় লিখিতেপড়িতে অভ্যস্ত হইল বটে, কিন্তু মাঝে মাঝে তামাসা দেখিবার জন্ত জগন্নাথযাত্রিসস্কুল রাজঘাট, এমন কি জলেশ্বর পর্য্যন্ত ছুটাছুটি আরম্ভ করিল। কৃষ্ণুপ্রিয়ার শক্তি এবং সাহসে গ্রামস্থ সুবর্ণরেখার প্রাচীন খাত পর্যন্ত কুলাইত না। কাজেই তাহদের একটু একটু ছাড়াছাড়ি আরম্ভ হইল। কিন্তু তাহাতে ভাবের অভাব হইত সা। এই সময়ে রথযাত্রা উপলক্ষে রাধাচরণের মাত, নারায়ণী দেবীকে অনুনয়ে বাধ্য করিয়া, পুরুষোত্তম যাত্রা করিলেন । সেকালে পুরী গেলে অনেককেই আর ফিরিয়া আসিতে হইত ন, অতএব রাধাচরণ বিস্তর জেদ ও কাদাকাটা করিয়াও মার সঙ্গে যাইতে পাইল না। যথাসময়ে খবর আসিল, ফিরিবার সময় বৈতরণীতীরে তাহার তমুত্যাগ হইয়াছে । শোকে রাধাচরণ ক্ষিপ্তপ্রায় হইল । তার পর একদিন কোথায় চলিয়া গেল। নারায়ণী দেবী বিস্তর অনুসন্ধান করিয়াও তাঁহার কোন খোজ পাইলেন না। রাইবনীদুর্গের রাজা শশাঙ্কনারায়ণ ইহার কিছুদিন পূৰ্ব্বে বিপত্নীক হইয়াছিলেন। তখনও তাহার সন্তানাদি কিছু হয় নাই, কাজেই উমাপ্রসন্ন দাস স্বয়ং সুলক্ষণা কন্যার অমুসন্ধানে বাহির হইলেন । বনকুঞ্জে কৃষ্ণপ্রিয়ার সংবাদ পাইয়া তিনি সন্ন্যাসীয় বেশে সেখানে উপনীত হইলেন। নারায়ণী দেবী তখন প্রায় বৎসরেককাল রাধাচরণের জন্ত অপেক্ষা করিয়া তাহার সকল আশাভরসা।