পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৪১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অষ্টম সংখ্যা।] ততঃ কিম্। 8e é, সভ্য নহে। দুইকে যথার্থরূপে মিলাইতে পারিলেই তবে পূর্ণতা লাভ করিতে পার যায়। শঙ্কর ত্যাগের এবং অন্নপূর্ণ ভোগের মূৰ্ত্তি—উভয়ে মিলিয়া যখন একাঙ্গ হইয়া যায়, তখনই সম্পূর্ণতার আনন্দ । আমাদের জীবনে যেখানেই এই শিব ও শিবানীর বিচ্ছেদ, যেখানেই বন্ধন ও মুক্তির একত্রে প্রতিষ্ঠা নাই, যেখানেই অমুরাগ ও বৈরাগ্যের বিরোধ ঘটিয়াছে সেইখানেই যত অশান্তি, যত নিরানন্দ । সেইখানেই আমরা লইতে চাই, দিতে চাই না; সেইখানেই আমরা নিজের দিকে টানি, অষ্ঠের দিকে তাকাই না ; সেইথানেই আমরা যাহাকে ভোগ করি, তাহার আর অস্ত দেখিতে পাই না,--অস্ত দেখিলে বিধাতাকে ধিক্কার দিয়া হাহাকুর করিতে থাকি ; সেখানেই কৰ্ম্মে আমাদের প্রতিযোগিতা, ধৰ্ম্মেও আমাদের বিদ্বেষ—সেখানেই কোনো-কিছুরই যেন স্বাভাবিক পরিণাম নাই, অপঘাতমৃত্যুতেই সমস্ত ব্যাপারের অকস্মাৎ বিলোপ । জীবনটাকে না হয় যুদ্ধ বলিয়াই গণ্য করা গেল । এই যুদ্ধব্যাপারে যদি কেবল ব্যুহের মধ্যে প্রবেশ করিবার বিদ্যাই আমাদের শেখা থাকে, বুহি হইতে বাহির হইবার কৌশল আমরা না জানি, তবে সপ্তরর্থী ঘিরিয়া যে আমাদিগকে মারিবে । সেরূপ মরিয়াও আমরা বীরত্ব দেখাইতে পারি, কিন্তু যুদ্ধে জয় ত তাহাকে বলে না। অপর পক্ষে, যাহার হের মধ্যে একেবারে প্রবেশ করিতেই বিরত, সেই কাপুরুষদের বীরের •সদগতি নাই। প্রবেশ করা এবং বাহির হওয়া, এই জ্বয়ের দ্বারাতেই জীবনের চরিতার্থতা । প্রাচীন সংহিতাকারগণ হিন্দুসমাজে হরগৌরীকে অভেদাঙ্গ করিতে চাহিয়াছিলেন —বিশ্বচরাচর যে গ্রহণ ও বর্জন, যে আকর্ষণ ও বিপ্রকর্ষণ, যে কেন্দ্রামুগ ও কেন্দ্রাতিগ, যে স্ত্রী ও পুরুষ ভাবের নিয়ত সামগ্রস্তের উপর প্রতিষ্ঠালাভ করিয়া সত্য ও সুন্দর হইয়া উঠিয়াছে, সমাজকে র্তাহারা প্রথম হইতে শেষ পর্য্যন্ত সকল দিকে সেই বৃহৎ সামঞ্জস্তের উপরে স্থাপিত করিতে চেষ্ট৷ করিয়াছিলেন। “ শিব ও শক্তির, নিবৃত্তি ও প্রবৃত্তির সন্মিলনই সমাজের একমাত্র মঙ্গল, এবং শিব ও শক্তির বিরোধই সমাজের সমস্ত অমঙ্গলের কারণ, ইহাই, তাহার যুঝিয়াছিলেন । এই সামঞ্জস্তকে আশ্রয় করিতে হইলে প্রথমে মানুষকে সত্যভাবে দেখিতে হইবে। অর্থাৎ তাহাকে কোনো-একটা বিশেষ প্রয়োজনের দিকৃ হইতে দেখিলে চলিবে না। আমরা যদি আম্রকে অম্বল খাওয়ার দিকু হইতে দেখি, তাহা হইলে তাহাকে সমগ্রভাবে দেখি না ; এইজন্ত তাহার স্বাভাবিক পরিণামেবাধা ঘটাই ; তাহাকে র্কাচ পাড়িয়া আনিয়া তাহার কশিটাকে মাটি করিয়া দিই। গাছকে যদি জালানী কাঠ বলিয়াই দেখ্রি, তুবে তাহার ফলফুলপাতার কোনো তাৎপৰ্য্যই দেখিতে পাই না। তেমনি মানুষকে যদি রাজ্যরক্ষার উপায় মনে করি, তৰে তাহাকে সৈনিক করিয়া তুলিব, তাহাকে যদি জাতীয়সমৃদ্ধিবৃদ্ধির হেতু যলিয়া গণ্য করি, তবে তাহাকে বণিকূ করিবার একান্ত চেষ্টা করিব—এমূনি করিয়া আমাদের আবহমান সংস্কার অনুসারে যেটাকেই আমরা পৃথিবীতে সকলের চেয়ে