পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৪২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অষ্টম সংখ্যা।] ততঃ কিম । ৪১৫ অীয়ত্ত করেন, সমস্ত দেশেরই তাহ লাভ। বস্তুত সেই অংশটুকুমাত্রকে পুর্ণতা দিবার জন্ত সমস্ত দেশকে প্রস্তুত হইতে হয়, সমস্ত সমাজকে অমুকুল হইতে হয়—ডালের আগায় ফল ধরাইতে গাছের শিকড় এবং গুড়িকে সচেষ্ট থাকিতে হয়। ভারতবর্ষে যদি এমন দিন আসে যে, আমাদের দেশের মান্তশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিরা সৰ্ব্বোচ্চ সত্য এবং সৰ্ব্বোচ্চ মঙ্গলকেই আর সমস্ত খণ্ড প্রয়োজনের উদ্ধে তুলিয়া চিরজীবনের সাধনার সামগ্ৰী করিয়া রাখেন, তবে তাহদের সাধনা ও সার্থকত সমস্ত দেশের মধ্যে একটা বিশেষ গতি, একটা বিশেষ শক্তি সঞ্চার করিবেই। একদিন ভারতবর্ষে ঋষির যখন ব্রহ্মের সাধনায় রত ছিলেন, তখন সমস্ত আৰ্য্যসমাজের মধ্যেই—রাজকাৰ্য্যে, যুদ্ধে, বাণিজ্যে, সাহিত্যে, শিল্পে, ধৰ্ম্মার্চনায়—সৰ্ব্বত্রই সেই ব্রহ্মের সুর বাজিয়াছিল, কম্মের মধ্যে মোক্ষের ভাব বিরাজ করিয়াছিল --ভারতবর্ষের সমস্ত সমাজস্থিতি মৈত্রেয়ীর দ্যায় বলিতেছিল, “যেনাহং নামৃত স্তাং কিমহং তেন কুৰ্য্যাম্।” সে বাণী চিরদিনের মতই নীরব হইয়া গেছে এমূনিই যদি আমাদের ধারণা হয়, তবে আমাদের এই মৃতসমাজকে ব্ৰত-উপকরণ জোগাইয়া বৃথা সেবা করিয়া মরিতেছি কেন ? তবে ত এই মুহূর্তেই আপাদমস্তকে পরজাতির অমুকরণ করাই আমাদের পক্ষে শ্রেয়—কারণ, পরিণামহীন ব্যর্থতার বোঝা অকারণে বহিয়া পড়িয়া থাকার চেয়ে সজীবভাবে কিছু-একটা হইয়া উঠার চেষ্টা করা ভাল। কিন্তু এ কথা কখনই মানিব না। আমাদের প্রকৃতি মানিবে •না । যতই দুৰ্গতি হউকৃ, আমাদের অন্তরতম স্থান এমনভাবে তৈরি হইয়া আছে যে, কোনো অসম্পূর্ণ অধিকারকে আমাদের মন পরমলাভ বলিয়া সায় দিতে পারিবে না । এখনো যদি কোনো সাধক তাহার জীবনের যন্ত্রে সংসারের সকল চাওয়া, সকল পাওয়ার চেয়ে উচ্চতর সপ্তকে একটা বড় স্বর বাজাইয়৷ তোলেন, সেটা আমাদের হৃদয়ের তারে তখনি প্রতিবন্ধত হইতে থাকে—তাহাকে আমরা ঠেকাইতে পারি না। প্রতাপ এবং ঐশ্বৰ্য্যের প্রতিযোগিতাকে আমরা যত-বড় কণ্ঠে যত-বড় করিয়াই প্রচার করিবার চেষ্টা করিতেছি, আমরা সমস্ত মনপ্রাণ দিয়া তাহ গ্রহণ করিতে পারিতেছি না। তাহ আমাদের মনের বহিদ্বারে , একটা গোলমাল পাকাইয়া তুলিয়াছে মাত্র। আমাদের সমাজে আজকাল বিবাহ প্রভৃতি ক্রিয়াকৰ্ম্মে দেশী রমুনচোঁকির সঙ্গে সঙ্গে একইকালে গড়ের বাদ্য বাজানো হয় দেখিতে পাই । ইহাতে সঙ্গাত ছিন্নবিচ্ছিন্ন হইয়া কেবল একটা মুরের গণ্ডগোল হইতে থাকে । এই বিষম • গণ্ডগোলের বঞ্চনার মধ্যে মনোযোগ দিলেই বুঝ যায় যে, রমুনচোঁকির বৈরাগাগাম্ভীৰ্য্যমিশ্রিত করুণ সাহানাই আমাদের উৎসবের চিরন্তন হৃদয়ের মধ্য হইতে বাজিতেছে, আর গড়ের বাদ্য তাহার প্রচণ্ড কাংস্তকণ্ঠ ও স্ফীতোদর জয়ঢাকটা লইয়া কেবলমাত্র ধনের অহঙ্কার, কেবলমাত্র ফ্যাশানের আড়ম্বরকে অভ্ৰভেদী করিয়া সমস্তু গভীরতর, অন্তরতর স্বরকে আচ্ছন্ন করিয়া কেলিবার চেষ্টা করিতেছে। তাই আমাদের মঙ্গল-অনুষ্ঠানের মধ্যে একটা গৰ্ব্বপরিপূর্ণ অসামঞ্জস্তকেই অত্যুৎকট করিয়া তুলিতেছে—তাহ আমাদের উৎসবের চিরদিনের বেদনার সঙ্গে আপনার